পাট বাংলাদেশের অন্যতম নগদ অর্থকরি ফসল বা ক্যাশ ক্রপ। পাট চাষের অন্যতম শর্ত হ’ল পাট পঁচানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি চাই। কিন্তু বর্তমানে সমগ্র বাংলাদেশে অবৈধ দখলবাজদের হাতে বিপুল পরিমাণ নদী-খাল দখল হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় চাষাবাদের পানির ব্যাপক সঙ্কট দেখা যাচ্ছে।
এ অবস্থায় পাট চাষিদের পাট পঁচানোর বিকল্প ও নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হ’ল ‘ রিবন রেটিং’ পদ্ধতি। পাটের আঁশের গুনাগুন মূলত নির্ভর করে সঠিকভাবে পাট পচনের ওপর। আমরা জানি, আশেঁর গুনাগুণের উপর পাটের দাম নির্ভর করে। যেসব এলাকায় প্রচুর পাট উৎপন্ন হয়, অথচ প্রয়োজনীয় পচঁন পানির অভাবে চাষি ভাইয়েরা পাট সঠিকভাবে পচাঁতে পারছেন না, সেসব এলাকায় পাট পচাঁনোর জন্য রিবন রেটিং বা পাটের ছালকরণ ও পঁচন পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। এ পদ্ধতিতে পুরো পাট গাছ না পচিঁয়ে কাঁচা গাছ থেকে ছাল ছাড়িয়ে নিয়ে তা পচাঁতে হয়। এতে আশেঁর গুনগত মান ভালো হয় ও পঁচন সময় কমে যায়।
এই প্রযুক্তি ব্যবহারে করণীয়ঃ
দেশি পাটের বয়স ১০৫-১১০দিন ও তোষা পাটের বয়স ১০০-১০৫ দিন হলে পাট কাটতে হবে। পাট কাটার পর পাতা ঝরিয়ে গোড়ার অংশে ৩-৪ ইঞ্চি পরিমান একটি বাশেঁর হাতুড়ি বা মুগুর দিয়ে থেতলে নিতে হবে। থেতলানো কয়েকটি গাছ (৪-৫টি) রিবনার যন্ত্রের দুই রোলারের মাঝখানে রেখে থেতলানো ছালগুলোকে দুইভাগ করে রোলারের বাহির থেকে টান দিতে হবে। এতে পাটকাঠি সামনের দিকে চলে যাবে এবং পাট গাছ থেকে ছাল আলাদা হয়ে হাতে থেকে যাবে।ছালগুলোকে একত্রিত করে মোড়া বাধঁতে হবে। মোড়াগুলোকে একত্রিত করে আগেই তৈরী করা মাটির গর্ত জাগ দিতে হবে।
ছালের মোড়া ভিজানোর জন্য গর্ত তৈরীর পদ্ধতিঃ
প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদিত পাট ছালের পরিমান প্রায় ৩,০০০-৩,৫০০ কেজি। প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে উৎপাদিত পাটের ছাল পচাঁনোর জন্য দৈর্ঘ্য-৬ মিটার, প্রস্থ-২ মিটার ও গভীরতা-১ মিটার করে ১টি গর্ত তৈরী করে নিতে হবে। গর্তটির নিচে ও চারপাশে ১ টি পলিথিন কাগজ বিছিয়ে দিতে হবে যেন পানি না চলে যায়। এই গর্তটি খাল বা বিলের ৮,০০০-৮,৫০০ লিটার পানি দিয়ে ভরতে হবে। পাটের ছালের মোড়াগুলোকে গর্তের পানিতে ডুবিয়ে জাগ দিতে হবে। কচুরিপানা বা খড় বা চট দিয়ে ভালোভাবে ঢেঁকে দিতে হবে যেন, রোদ্রে ছালগুলো শুকিয়ে না যায়।
প্রতিবিঘা পাট ছালের জন্য ৩০০-৩৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে। পচঁন দ্রুত করার জন্য গর্তে ২০-৪০ লিটার পাট পচাঁ পানি মিশিয়ে দিতে হবে। ১০-১২ দিন পর জাগ পরীক্ষা করতে হবে। জাগ দেওয়া শেষ হলে পরিস্কার পানিতে বা মাটির চাড়িতে ধুয়ে বাশের আড়ায় ভালোভাবে শুকিয়ে গুদামজাত করতে হবে। সাধারণত প্রতি কেজি ছালের জন্য ২.৫০-৩.০ লিটার পানির দরকার হয়।
সতর্কতাঃ
এই প্রযুক্তি শুধুমাত্র যে এলাকায় পাট পচঁনের পানির অভাব রয়েছে সেই এলাকার জন্য প্রয়োজন। পানির অভাবজনিত কারণে পাট পচঁনের জন্য বহু দুরে ভ্যান গাড়ি বা মাথায় পাট গাছ বহনের চেয়ে জমির আইলের পাশে গর্ত করে এই পদ্ধতিতে পাট পচাঁনো লাভজনক।
পাট কাটার সাথে সাথে ‘ছালকরণ’ করতে হবে। রোদে পাট গাছ শুকিয়ে গেলে ‘ছালকরণ’ সমস্যা হবে। সম্ভব হলে মেঘলা বা বৃষ্টির দিনে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিৎ। রিবনার যন্ত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সাহায্যের জন্য কাছের উপজেলা কৃষি অফিস বা উপসহকারী কৃষি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ