খুলনা সার্কিট হাউজ’র প্রধান গেটের পাশে গতকাল একাত্তরের শহীদদের স্মরণে স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়। ১৯৭১:গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’র উদ্যোগে একাত্তরের নির্যাতন কেন্দ্র চিহ্নিতকরণের অংশ হিসেবে ‘এখানে ছিল হেলিপ্যাডের বিশ্রামাগার, একাত্তরের নির্যাতন কেন্দ্র’ নামক স্মৃতি ফলকটি স্থাপন করা হয়।
হেলিপ্যাড বিশ্রামাগারে (বর্তমান খুলনা সার্কিট হাউস সংলগ্ন ) একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর কর্তৃক হত্যা ও নির্যাতন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্মৃতিফল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী খান এ সবুরের নামে খুলনার রাস্তা হয়েছে, অথচ মুক্তিযুদ্ধের শহীদের নামে কিছু হয়নি। হাইকোর্টের আদেশে সবুরের নাম উঠে গেছে।
ড. মামুন আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে খুলনায় ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সংগঠনের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অকুন্ঠ সমর্থন রয়েছে। তিনি ইতোমধ্যে আর্কাইভ ও জাদুঘরকে একটি বাড়ি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতার জন্য ড. মামুন আবারও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করেন। তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাবেক মন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, তিনি ও তার ফারমার্স ব্যাংক ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরকে প্রচুর অর্থ সহায়তা দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’র উদ্যোগে গণহত্যাস্থল, বধ্যভূমি, নির্যাতন কেন্দ্র চিহ্নিতকরণ ও স্মৃতিফলক স্থাপনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে আর্কাইভ নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।
প্রসঙ্গত, ‘খুলনা সার্কিট হাউসের বর্তমান নতুন ভবনের স্থানে একটি টিনের আটচালা ছাউনির ঘর ছিল, যা হেলিকপ্টারের যাত্রীদের বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সার্কিট হাউসকে (পুরনো ভবন) পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী তাদের অফিস হিসেবে ব্যবহার করতো এবং বিশ্রামাগারটি ব্যবহৃত হতো নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবে। বিশ্রামাগারটির সামনে খোলা জায়গায় বাঁশ দিয়ে পিরামিডাকৃতির একটি স্তম্ভ তৈরি করেছিল পাকিস্তানীহানাদার ও তাদের এদেশীয় সহযোগীরা, যেখানে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ সমর্থকদের ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদের নামে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে নির্মম নির্যাতন ও হত্যা করা হতো। সেই সময়ের প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এখানে প্রতিদিন কমপক্ষে শতাধিক ব্যক্তিকে নির্যাতন করা হতো। নির্যাতনে মৃত্যুবরণকারীদের লাশ ফেলা হতো পাশের ভৈরব নদীতে। সংখ্যায় বেশী হলে এবং নির্যাতনে মৃত্যু না হলে ওই সব নির্যাতিতদের নিয়ে যাওয়া হতো গল্লামারীতে, সেখানেই তাঁদেরকে গুলি করে অথবা জবাই করে হত্যা নিশ্চিত করা হতো। মুক্তিযুদ্ধকালের নির্মম নির্যাতনের সাক্ষ্যবহনকারী ওই বাড়িটি অপসারিত করে সেখানেই সার্কিট হাউসের বর্তমান নতুন ভবন গড়ে উঠেছে অথচ যে আমলারা এ স্থানে সরকারী ভবন নির্মাণ করেছে তারা সে ইতিহাসকে ধ্বংস করেছে।’
স্মৃতিফলক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একাত্তরের রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধাসহ নানা শ্রেণী পেশার বহু মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ