১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দু’দিনব্যপী অনুষ্ঠানমালা আজ সোমবার শেষ হয়েছে। সমাপনী দিনে বিকেল চারটায় খুলনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে শহীদ স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়। স্মারক বক্তা করেন লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। এর আগে সকাল ১১টায় খুলনা মহানগরীর খালিশপুর মুন্সীবাড়ির গণহত্যা স্মৃতি ফলক পুন:স্থাপন করা হয়।

এছাড়াও ১৭ ও ১৮ মে দু’দিনব্যাপী শিল্পীর চোখে গণহত্যা-নির্যাতন শীর্ষক আর্টক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৫ জন শিল্পী ছবি আঁকেন। তাঁদের আঁকা ছবি আর্কাইভে দান করেন।

স্মারক বক্তৃতায় শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘৭১-এ বাংলাদেশের মানুষ যে মুক্তিযুদ্ধ করেছে সেটিও স্বাধীনতা দব্রোধীরা মানতে রাজী নয়। তাদের মতে ‘৭১-এ এদেশে কোনও স্বাধীনতা যুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, যা হয়েছে তা ছিল ভ্রাতৃঘাতী গৃহযুদ্ধ। এই অস্বীকৃতি গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচারকে অকার্যকর করার চক্রান্তের অংশ। ‘৭১’র গণহত্যা সম্পর্কে নিজেদের বয়ানের স্বপক্ষে লেখার জন্য পাকিস্তানিরা বহু পশ্চিমা বুদ্ধিজীবী ও গবেষককে ভাড়া করেছে, তেমনি এখন জামায়াতে ইসলামীও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের গ্রহণযোগ্যতা চ্যালেঞ্জ করে তা বানচাল করার জন্য আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগ করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণহত্যা সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধকালে পশ্চিমের গণমাধ্যমে প্রচুর লেখা হলেও এবং পরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতিমান অনেক গণহত্যা গবেষকের গ্রন্থে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখিত হলেও সাধারণভাবে বলা হয়⎯ অন্য অনেক গণহত্যার মতো এটিও একটি বিস্মৃত গণহত্যা। বাংলাদেশের গণহত্যার রাজনীতি এবং গণহত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার থেকে অব্যাহতি লাভকে গণহত্যা বিশেষজ্ঞ বেন কিয়েরনান সমালোচনা করেছেন।

aki-2

তিনি আরও বলেন, গণহত্যার শিকার একটি দেশ ও জাতি দৃঢপ্রতিজ্ঞ হলে ঘটনার ৪০ বছর পরও যে এর বিচার হতে পারে এবং জেনেভা কনভেশন, ভিয়েনা কনভেনশন’র মতো আন্তর্জাতিক বিধান লংঘনকারীদের বিচার নিজস্ব আইনে নিজস্ব আদালতে করে আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থায় বাংলাদেশ ও বর্তমান সরকার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ট্রাস্টের সভাপতি প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন। স্বাগত বক্তৃতা করেন ট্রাস্টি সম্পাদক ডা: শেখ বাহারুল আলম। এই সভায় একাত্তরের নির্যাতিত নারী রঞ্জিতা মল্লিক ও চুকনগর গণহত্যার প্রত্যাক্ষদর্শী এরশাদ আলী মোড়লকে সম্মাননা জানানো হয়। আর্কাইভের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আর্টক্যাম্পের ১৭টি ছবি ট্রাস্টি হাশেম খানের হাতে তুলে দেয়া হয়। চিত্রশিল্পী হাশেম খান তাঁর নিজের চারটি তৈল চিত্র আর্কাইভে দান করেন। মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত চুকনগর গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এছাড়াও আ্র্কাইভের উদ্যোগে আয়োজিত রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার ৮জন বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন কুয়েট উপাচার্য ড. মুহাম্মদ আলমগীর।

এর আগে বেলা ১১টায় খুলনা মহানগরীর খালিশপুর মুন্সীবাড়ির গণহত্যা স্মৃতি ফলক পুন:স্থাপন করা হয়। গত বছর ১৭ মে ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের পক্ষ থেকে এখানে স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়। চলতি বছর মার্চের প্রথম সপ্তাহে অজ্ঞাতনামা স্বাধীনতা বিরোধী দুর্বৃত্তরা এই ফলকটি ভেঙ্গে ফেলে। এ প্রসঙ্গে ড. মামুন ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি আজ ক্ষমতায়, এই সময়ে যদি মুক্তিযুদ্ধের শহীদের স্মরণে স্থাপিত কোন নিদর্শন উচ্ছেদ করা হয় তাহলে মুক্তিযোদ্ধারা ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা করেন কি? এ সময়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য চিত্র শিল্পী হাশেম খান, চৌধূরী শহীদ কাদের, অধ্যক্ষ আবুল কালাম আযাদ প্রমূখ।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *