হোমো অ্যান্টেসেসর: মানুষের আরেক বিলুপ্ত সহোদর

১৯৯৭ সালে উত্তর স্পেনের সিয়েরা দে আতাপুরেকা প্রতœতাত্ত্বিক অঞ্চলের মাটি খুঁড়ে নতুন একটি মানব প্রজাতির জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। একটি পর্বতের সিঙ্কহোলের মধ্যে একটি ছোট, সমতল মুখবিশিষ্ট খুলির টুকরার পাশাপাশি চোয়ালের কিছু হাঙ আবিষ্কৃত হয় সেবার।

এ দেহাবশেষ একটি অজানা হোমিনিন প্রজাতির বলে চিহ্নিত করে এর নামকরণ করা হয় হোমো অ্যান্টেসেসর। অ্যান্টেসেসরদের সঙ্গে আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সের সরাসরি পূর্বপুরুষ হোমো ইরেকটাসের মিল থাকলেও পরবর্তী ধাপ হোমো হাইডেলবার্গেনসিসদের কোনো মিল নেই।

 প্রথমে এটিকে আমাদের সমসাময়িক প্রজাতি আদি নিয়ান্ডারথালের জীবাশ্ম ভাবা হলেও পরবর্তীকালে একে একটি আলাদা প্রজাতি হিসেবেই মেনে নেওয়া হয়। ২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যে হাপিসবারঘে ইউরোপের প্রাচীনতম কিছু মানব পদচিহ্ন আবিষ্কৃত হয়, যেগুলোও গোমো অ্যান্টেসেসরদের বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।

গবেষণা শেষে লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের নৃ-তত্ত্ববিদ ক্রিস স্ট্রিংগার  জানান, প্রথম অভিবাসিত মানব প্রজাতি হিসেবে ১৮ লাখ বছর আগে যে হোমো ইরেকটাসরা আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে ইউরোপে এসেছিল, তারাই বিবর্তিত হয়ে সাড়ে আট লাখ বছর আগে জন্ম নিয়েছিল হোমো অ্যান্টেসেসর হিসেবে। বিবর্তনের ধারায় সাড়ে পাঁচ লাখ বছর আগে হোমো হাইডেলবার্গেনসিসদের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বিলুপ্ত হয়ে যায় অ্যান্টেসেসররা।

 স্ট্রিংগার বলেন, ‘আমরা ৭ লাখ বছর  বছর আগে নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গে একটি সাধারণ পূর্বপুরুষে ভাগ হয়ে যাই। আর আধুনিক হোমো স্যাপিয়েন্সদের জন্ম দুই লাখ বছর আগে। তাই অ্যান্টেসেসরদের সঙ্গে আমাদের দেখাই হয়নি। কিন্তু বিষ্ময়করভাবে তাদের মুখ ছিল আমাদের ও নিয়ান্ডারথালদের মতোই একইসঙ্গে আদিম ও আধুনিক’।

ফলে হোমিনিন এই প্রজাতিটিকে আধুনিক মানুষের সহোদর বলে চিহ্নিত করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, গবেষণা এটাও প্রমাণ করছে যে, আমাদের মুখভঙ্গি সব সময়ে আধুনিক হতে পারে না। আমাদের হাঙ ক্রমাগত নবায়ন ও পুনর্গঠিত হয়।

জার্মানির লিপজিগ বিবর্তনমূলক নৃ-বিজ্ঞান ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউটের জাঁ জ্যাক হাবলিন ও তার সহকর্মীরা সফটওয়্যার ব্যবহার করে একটি শিশু হোমো অ্যান্টেসেসর প্রতিমূর্তি গড়েন।

সেটি নিয়ে গবেষণা শেষে হাবলিন বলেন, ‘তাদের মুখের আকৃতির সঙ্গে আধুনিক মানুষের চেয়ে বেশি মিল নিয়ান্ডারথালদের। কিন্তু প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্য নিয়ান্ডারথালদের অনুরূপ নয়। বরং এর শোষণ হাঙ আধুনিক মানুষের চোয়ালের শ্বাদন্তের মতোই। আধুনিক মানুষের নাকের তলদেশ ও ওপরের চোয়ালের অধিকাংশ এলাকা আবার গরিলা জাতীয় প্রাণীর বিবর্তিত রূপ, যা চর্বণাস্থি নামে পরিচিত। অ্যান্টেসেসরেরও হাড়ের প্যাটার্নও চর্বণাস্থির মতোই ছিল’।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *