জাতীয়তাবাদী শাসন ব্যবস্থায় দেশপ্রেম এক সাম্রাজ্যবাদী ভন্ডামী

চেম্বারলিন ও হিটলার করমর্দনরত

চেম্বারলিন ও হিটলার করমর্দনরত

জাতীয়তাবাদ! শব্দটির মধ্যে কেমন যেন একটা জাতিদম্ভী জঙ্গি জঙ্গি ভাব-গন্ধ আছে। আর যদি সে জাতীয়তাবাদ হয় কোন রাষ্ট্র পরিচালনার লোগো (আওয়াজ) তা হলে তো কোন কথাই নেই, সে হয়ে ওঠে একেবারে আ-পদ-মস্তক ফ্যাসিস্ট, ভন্ড, শঠ, নিষ্ঠুর-নির্লজ্জ সাম্রাজ্যবাদের সেবাদাস! গোটা জাতীকেই যে বেচে দেয় সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে যে কোন শর্তে, শুধু নিজেদের ক্ষুদ্র গোষ্ঠিটাই নয় বিদেশী হুজুরদের দিয়েও দেশ ও দেশের জসগণকে ধর্ষণ করায় কমিশনের চুক্তিতে।

আসলে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন আর রাষ্ট্র পরিচালনায় জাতীয়তাবাদী আওয়াজ এক জিনিষ নয় বরং একেবারেই বিপরীত। একটা জাতি যখন জাতিগত নিপীড়ন বা পরাধীনতাজনিত কারণে অস্তিত্ত্বের সঙ্কটে পড়ে তখন জাতিগত স্বাধীনতার দাবিতে জাতীয়তাবাদী শ্লোগানে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে পারে। সে সংগ্রম তখন প্রগতিশীল কারণ তা চলে তখন সমগ্র জাতির স্বার্থে। সেই সংগ্রাম তখন গোটা জাতির মুক্তি এনে দিতে পারে। গোটা জাতির স্বার্থ রক্ষা করে বলেই সে সংগ্রাম তখন প্রগতিশীল। আর এ আন্দোলনে যদি স্বাধীনতা লাভ হয় তবে তার ভূমিকা সেখানেই শেষ হয়ে যায়। জাতিয়তাবাদকে নিয়ে আর এগিয়ে যাওয়া চলেনা। রাষ্ট্র পরিচালনায় জাতীয়তাবাদী আওয়াজ হ’ল এক চরম প্রতিক্রিয়াশীল ব্যবস্থা, এক নিপিড়নমূলক শৃঙ্খল। অর্থাৎ নদী পার হতে নৌকা সাহায্য করেছে বলে নৌকাকে ঘাড়ে করে বয়ে নিয়ে যাওয়ার মত এক নিপিড়ন।

রাষ্ট্র পরিচালনায় জাতীয়তাবাদ এক প্রতিক্রিয়াশীল ব্যবস্থা, কারণ সে তখন আর গোটা জাতির স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে না, সে তখন প্রতিনিধিত্ব করে গোটা জাতির বিরুদ্ধে এক ক্ষুদ্র পুঁজিপতি গোষ্ঠির। এমন কি গোটা জাতিয় পুঁজিরও নয় বরং একদল মুৎসুদ্দি, ভেড়ুয়া দালালআমলা ও সামাজ্যবাদী পুঁজির। আর সে কারণেই রাষ্ট্র পরিচালনায় জাতীয়তাবাদী আওয়াজ হয়ে ওঠে চরম প্রতিক্রিয়াশীল। বিশ্ব-ইতিহাস তার প্রমাণ।

বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদে দেশপ্রেম এক বিরাট মাপের ভাওতা যা বুর্জোয়ারা বিশ্বব্যাপী প্রয়োগ করে আসছে তাদের সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র লুকাতে। তাই জাতীয়তাবাদের আসল চেহারা আমরা বিশ্বইতিহাস থেকেই আলোচনা করতে চাই।

সাম্রাজ্যবাদীদের স্বহস্তে নির্মিত বুর্জোয়া চক্রের প্রতিনিধি এডলফ হিটলার এই জাতীয়তাবাদের ঘোষণা দিয়ে শুরু করেন সমগ্র বিশ্বব্যাপী মানবতার এক চরম ধর্ষণ। হিটলার ঘোষণা করেন জার্মান জাতীয়তাবাদ অর্থাৎ জার্মান জাতিই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি। হিটলার ঘোষণা করেন জার্মান জাতিকে ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন আর্য (শ্রেষ্ঠ) জাতি হিসেবে পৃথিবীকে শাসন করার জন্য। শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে তার অধিকার আছে আশ-পাশের দেশগুলি দখল করে জার্মানদের জন্য বসতি স্থাপনের। আর অদ্ভুত শোনালেও আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স, ইটালির জাতীয়তাবাদী বুর্জোয়ারা হিটরারকে সমর্থন করে! এর মানে তো দাড়ায় ওই দেশগুলিকে আক্রমণ করার অধিকারও হিটলারের আছে এটাকে স্বিকার কওে নেওয়া। কিন্তু তা কি করে হয় ? হয়। আসলে বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদ বুর্জোয়ার দেশপ্রেম নয়, তার পুঁজির প্রেম। পুঁজির কোন দেশ নেই। তাই জাতীয়তাবাদের সাথে দেশপ্রেম’র কোন সম্পর্ক নেই।

বিশ্বপুঁজিবাদের মোড়লেরা এর বিপদ জানতেন। তা সত্ত্বেও তাদের প্রধান বিষয় ছিলো পুঁজিপতিদেও পুঁজি টিকিয়ে রাখা, দেশের মানুষ জাহান্নামে যাক। সময়টা আসলেই ছিলো বিশ্বপুঁজিবাদের জন্য ত্রাহি ত্রাহি। ১৯২৭-২৮ সার থেকে শুরু বিশ্ব-পুঁজিবাদের এক মহামন্দা। এ মন্দা হ’ল অতিউৎপাদনের মন্দা। প্রচুর উৎপাদনে বাজার সয়লাব। পুঁজিপতিরা মাল রাখার জায়গা পাচ্ছে না, অথচ বিক্রি কম। পুঁজিপতিরা তড়িঘড়ি মিল-কারখানা বন্ধ করে দেয়। এর ফলে পুঁজিবাদী বিশ্বে, দেশে দেশে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। এতে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা আরও কমে যায়, কমে যায় পুঁজিপতির বেচাকেনা। অবস্থা হয়ে ওঠে আরও সঙ্কটাপন্ন। বুর্জোয়া সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিপতিরা হিটলারের সাহায্যে যুদ্ধব্যবসার মাধ্যমে পুঁজি বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নেয়। দেশ আর জনগণকে ঠেলে দেয় হিটলারের হাতে নিজেদের পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফা লাভের বিনিময়ে।

১৯৩৩ সালে হিটলার ঘোষণা করে তার যুদ্ধ অর্থনীতি। হিটলারের প্রতিনিধি হলমার সাচট্ (জার্মান ব্যাঙ্কার) ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স ভ্রমণ করেন সে সকল দেশের পুঁজিপতিদের জার্মান সমরাস্ত্র শিল্পে পুঁজি বিনিয়োগে অমন্ত্রন জানানোর জন্য। বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী সরকারগুলো একে স্বাগত জানান। আমেরিকান পুঁজিপতিরা হিটলারের সমরাস্ত্রশিল্পে পুঁজি বিনিয়োগ করেন।

আমেরিকান জেনারেল মোটরস্ তাৎক্ষনিকভাবে তিন কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে সম্মত হয়, যে কারখানার মালিকানা অথবা নিয়ন্ত্রণ থাকবে হিটলার মন্ত্রী হারমান গোয়েরিং’র হাতে, এটা শর্ত হিসাবে গৃহিত হয়। আমেরিকা-বৃটেন জার্মানির সমরাস্ত্রশীল্পে প্রবৃদ্ধি হারে বিনিয়োগের চুক্তিতে সম্মত হয়। শর্ত থাকে যে হিটরারের যে কোন আগ্রাসনমূলক পদক্ষেপে আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স নিজেদেরকে “Neutrality” এবং “Non-Interference” ঘোষণার মধ্যে সিমাবদ্ধ রাখবে

হিটলারের যুদ্ধ অর্থনীতিতে তার মন্ত্রী হারমান গোয়েরিং বিনিয়োগ করেন নিজের ছয় হাজার মিলিয়ন মার্ক এবং আমেরিকার পুঁজিপতিদের নিকট থেকে জোগাড় করা আরও ৩৫ লাখ ডলার।হিটলারের মন্ত্রী যোসেফ গোয়েবলস্ ব্যাঙ্কার কন্যা মাগডা কুয়ানডট’কে বিবাহের মাধ্যমে মিলিয়নিয়ার বনেযান। তিনিও বিনিয়োগ করেন মিলিয়ন মিলিয়ন মার্ক। হিটলার একজন জাতীয়তাবাদী ফ্যাশিস্ট ডিক্টেটর হিসাবে নিজেও বিশাল অঙ্কের টাকার মালিক বনে যান, তিনিও বিনিযোগ করেন মিলিয়ন মিলিয়ন মার্ক। ১৯৩৩ সালেই জার্মানিতে জার্মান অর্থনীতির জন্য ‘হিটলার ফান্ড’ নামে এক ফান্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই বছরই হিটলার ফান্ডের নামে জার্মান শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরী ও বেতন থেকে কেটে নেওয়া হয় ৮৪ লাখ মার্ক এবং পরের বছর দুই কোটি মার্ক

বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদীদের দেশপ্রেম যে দেশ ও জনগণের জন্য কি ভয়ঙ্কর তা আমরা ঘটেযাওয়া ইতিহাস থেকেই দেখতে পাবো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির দ্বারা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফ্রান্স এবং বৃটেন। এর পর অন্যরা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্স’র ভার্সাই নগরীতে শালিস শেষে জার্মানিকে যুদ্ধাপরাধী ঘোষণা করা হয়, তাকে বিরাট অঙ্কের জরিমানা করা হয় যা ফ্রান্স’র প্রাপ্য এবং আমেরিকা, বৃটেন ও ফ্রন্সের বিনাঅনুমতিতে সমস্তরকম সামরিক প্রস্তুতি ও নির্মাণ জার্মানির জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। জার্মানির রাইন পাড়ের দুর্গগুলি বন্ধ করে দিয়ে সেখানে আমেরিকান সৈন্যদের পাহারাঘাটি গড়া হয়। জার্মানি যেন সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে না পারে তার পাহারা। অমরা আগেই দেখেছি এ সবকিছুকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করে আমেরিকা ফ্রান্স ও বৃটেনের বিখ্যাত জাতীয়তাবাদীরা হিটলারের মাধ্যমে খুলে বসেছে এক মৌরসি চক্র। তাই হিটলার সরকার ১৯৩৫ সালে যখন একের পর এক ভার্সাই চুক্তির সামরিক ধারাগুলি ভঙ্গ করে বিশাল আকারের জার্মান সামরিক বাহিনী গড়তে থাকে তখন খোদ বৃটেন আর ফ্রান্সের জাতীয়তাবাদী সরকার হিটলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ‘অস্বীকৃতি’ জানায়। এই জাতীয়তাবাদীরা তখন মুনাফার লোভে হিটলারের সঙ্গে অবৈধ প্রেমে মসগুল। এই অবৈধ প্রেমটাই হ’ল ” Neutrality” এবং ” Non-Interference”। তাই ১৯৩৫ সালেরই জুন মাসে বৃটিস সরকার জার্মানির সঙ্গে এক নৌ চুক্তিতে আবদ্ধ হয়, যার শর্ত থাকে যে, জার্মান সরকার একটি শক্তিশালী নৌ-বাহিনী গড়ে তুলুক এতে বৃটিশ সরকার কোন আপত্তি করবে না। এমন কি এই বাহিনী গড়তে বৃটিশ কোম্পানী অর্থ ও কারিগরী সহয়তা দেবে। এই না হলে আর দেশপ্রেম! এই হ’ল ‘জাতীয়তাবাদ’, সবকিছু কোম্পানীর জন্য, সবকিচু পুঁজিপতিদের জন্য। আর দেশ ও জনগণ ? তাদের জন্য ‘ধর্ষণ’ আর ‘বুলেট’।

১৯৩৬ সালে নুরেমবার্গ নাজি কংগ্রেস ঘোষণা করে চতুর্বার্ষিক ‘জার্মান সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব’ কর্মসূচী। ১৯৩৩ সালে ৭০০ মিলিয়ন মার্ক দিয়ে শুরু হয় হিটলারের ‘যুদ্ধ অর্থনীতি’। ১৯৩৬ সালে বিনিয়োগ বেড়ে দাড়ায় ৯০০০ মিলিয়ন মার্ক। ১৯৩৯ সালের মধ্যে সেটা বেড়ে দাড়ায় ৯০,০০০ মিলিয়ন মার্ক। যার ৫৫ হাজার মিলিয়ন মার্ক খরচ করা হয় অস্ত্র উৎপাদনে, ১০ হাজার মিলিয়ন মার্ক খরচ করা হয় কৌশলগত সামরিক মজুত ক্রয়ে এবং ২৫ হাজার মিলিয়ন মার্ক খরচ করা হয় জাতীয় সামরিক বাহিনী খাতে। এই সময়ের মধ্যে জার্মান ইয়ুঙ্কার এয়ারক্রাফ্ট্ কারখানার শ্রমিক সংখ্যা তিন হাজার থেকে উন্নিত হয় ৫৩ হাজারে। এই বিরাট অঙ্কের টাকাগুলি বৃটেন, আমেরিকা ও ফ্রান্স’র জাতীয়তাবাদী সাধুবাবাদের (পুঁজিপতি!)।

১৯৩৫ সালের মে মাসে দেশপ্রেমিক জনগণের চাপে ফ্রান্স ও চেকোশ্লোভাকিয়ার সরকার সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে যে কোন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একত্রে কাজ করার জন্য এক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। কিন্তু জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেম যে আরও কড়া। ফ্রান্স ও চেকোশ্লোভাকিয়ার জাতীয়তাবাদীরা এবং জার্মান ও এ্যাংলো-আমেরিকান কূটনীতিকরা এই চুক্তির বিরুদ্ধাচারন করে প্যারিস ও প্রগ সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। আর বিশিষ্ট জাতীয়তাবাদী চেকোশ্লোভাকিয়ার প্রেসিডেন্ট বেনিস প্রাগে অবস্থানরত জার্মান মিনিস্টার (কূটনীতিক) আর্নেস্ট আইজেনলোহর’র নিকট ঘোষণা করেন যে “ সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে এই চুক্তি একটা পুরাতন বাতিল বিষয়, দয়া করে এটা এখনও আমিওয়েস্ট পেপার বক্সে ফেলে দেইনি এটাই যথেষ্ট।” ফ্রেন্স প্রধানমন্ত্রী লিওনব্লুমও একই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই সকল তথ্য সত্যে পরিণত হয় যখন হিটলার মুসোলিনিকে নিয়ে স্পেন দখল করে। তখন বৃটেন ও ফ্রান্স নিজেদের ” Non-intervention” ভঙ্গিমার মধ্যে সিমাবদ্ধ রাখে এবং আমেরিকা নিজেকে ” Neutral” ঘোষণা করে। পুঁজিপতিদের পুঁজির মূল্য অনেক বেশী। পুঁজির দেশও নেই দেমপ্রেমও নেই, তার চাই মুনাফা, তা যে করেই হোক।

এভাবেই ইউরোপের জাতীয়তাবাদী সরকারগুলো পুঁজিপতিদের স্বার্থে স্ব স্ব দেশ ও জনগণকে হিটলারের হাতে তুলে দেয়। আর যুদ্ধ যে অবশ্যম্ভাবি এটা প্রমাণ করার জন্য বিনা কারণে নিজেদেও দেশে যুদ্ধের পরিবেশ তৈরী করতে থাকে। এ সবই ছিলো পুঁজিপতিদের ক্ষুদ্র গোষ্ঠি স্বার্থ। স্পেনের পরেই হিটলার অষ্ট্রিয়া দখল করে এবং জার্মান রাইখ’র অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। এই ঘটনায়ও ইউরোপ ও আমেরিকার জাতীয়তাবাদী সরকারগুলি নিরপেক্ষতার বান করে মূলত হিটলারকেই উৎসাহ প্রদান করে। এরপর হিটলার যখন চেক সরকারকে হুমকি দিতে থাকে তখন এই জাতীয়তাবাদীরা হিটরারকে কোন প্রকার বাধা প্রদান না করে যুদ্ধ যে অবশ্যম্ভাবী এটা প্রমান করার জন্য ১৯৩৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখে প্যারিসের রাস্তায় ও স্কয়ারগুলিতে ট্রেন্স খোড়ে এবং বিমান বিধ্বংসিকামান মোতায়েন করে। প্যারিস তেকে লোকজন সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরুকরা হয়, বৃটেনে নেভিকে শতর্ক প্রহরায় রাখা হয়, লন্ডনের দোকান ও অফিসের জানালায় বালির বস্তা পাতানো হয়। স্কুলের ছেলেমেয়েদের শহরের বাইরে স্থানান্তরিত করা হয়। আমেরিকার সরকার তার দেশের নাগরীকদের ইউরোপ ত্যাগ করার উপদেশ প্রদান করে১০। এ সবই ছিলো সাজানো নাটক। কারণ ওই মূহুর্তে ওরা কেউই হিটলারকে বাদা দিতে নারাজ, পুঁজিপতিদের মুনাফার জন্য যে যুদ্ধ ও লুঠ একান্ত আবশ্যক। হিটলার চেকোশ্লোভাকিয়া দখল করুক, এর পর আক্রমণ করুক সোভিয়েত ইউনিয়নকে, আর পুঁজিপতিদের মুনাফার রাজ্য সয়লাব হয়ে যাক লুটের মাল আর দখলকৃত দেশে পণ্য বিক্রির টাকায়।

১৯৩৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বালিন হিটলারের সঙ্গে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন জার্মানির ব্যাডগোডেসবার্গ শহরে (বন্’র উপকন্ঠে)। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে চেকোশ্লোভাকিয়াকে মিত্রশুন্য করা হবে। এরই ফলশ্রুতিতে চেম্বারলিন রেডিওতে বক্তব্য দেন “ কি ভয়ঙ্কর, কি উদ্ভট, কি অবিশ্বাস্য যে কোথাকার দুটো দেশের মধ্যে ( জার্মন ও চেকোশ্লোভাকিয়া) ঝগড়া বেধেছে, যাদের সম্পর্কে আমরা কিছুই জানিনা, অথচ এখানে আমরা ট্রেন্স খুড়ছি, গ্যাস মুখোশ পরার মহড়া দিচ্ছি১১।”একেই বলে জাতীয়তাবাদী ভন্ডামী (দেশপ্রেম) আর এই ভন্ডামী চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে মিউনিখ চুক্তির মাধ্যমে। ১৯৩৮ সালের সেপ্টেম্বও মাসের ২৯-৩০ তারিখে জার্মানির মিউনিখ শহরে জার্মান, বৃটেন, ফ্রান্স ও ইটালির সরকার প্রধানেরা সম্মিলিত হয় এক বিশেষ চুক্তি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে। ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৩৮ জার্মানির সাঙ্গে বৃটেন এক অনাক্রমণ চুক্তিসম্পাদন করে, একই চুক্তি সম্পাদিত হয় জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে ৬ ডিসেম্বও ১৯৩৮। ফ্রান্স এই চুক্তির মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে পূর্বসম্পাদিত চুক্তি বাতিলে পরিণত করে। এইভাবে ইউরোপের জাতীয়তাবাদী সরকারগুলি তাদের দেশ ও জনগণকে হিটলারের ফ্যাসিস্ট সৈন্যদের হাতে ছেড়ে দেয়। জাতীয়তাবাদীদের দেশপ্রেমের চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

চেম্বারলিন দেশে ফেরেন, তাকে বীরের সম্মান প্রদান করা হয়। রাস্তার দু’পাশে তুষারশুভ্র পোশাক পরিহিত মেয়েরা ফুল হাতে তাকে অভ্যর্থনা জানায়। লরেল বৃক্ষের পাতাদিয়ে মোড়া চেম্বারলিনের ছবি দেশের সমস্ত নামীদামী ক্লাবে প্রদর্শিত হয়। তার ব্যবহৃত ছাতা শান্তির প্রতিকের মডেল হিসেবে তৈরী করা হয় ও দেদারসে বিক্রি হয়। লন্ডনের ” Peace Road’ এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘নেভিল চেম্বালিন সড়ক’। পার্লামেন্টে প্রবেশ কালে তাকে ‘বিজয় উৎসবের’ মাধ্যমে বরণ করা হয়। চেম্বারলিন’র দাবি তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠিত করে এসেছেন। কিন্তু কি ধরনের শান্তি তিনি প্রতিষ্ঠিত করে এসেছেন তা তিনি বলেন না১২

চেম্বারলিন’র আগমনী এই গোটা চিত্রটাই কেমন যেন আমাদের অতিপরিচিত তাই না ? অবশ্যই এই চিত্র আমাদের অতিপরিচিত। পাকিস্তান পর্বের এ দেশের জাতীয়তাবাদী নেতাদের দিকে যদি তাকাই এবং বাংলাদেশ পর্বের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যে জাতীয়তাবাদীরা নর্তন-কুর্দন  করেছেন এবং করছেন তাদের দিকে যদি তাকাই তবেউপরের চিত্রটি হুবহু মিলে যায়। এ কাণেই উপরের চিত্রটি আমাদের অতিপরিচিত মনে হয়। এই চেম্বারলিনেরাই যে এ দেশের জাতীয়তাবাদীদেরও গুরু।

চেম্বালিন মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষরের পর হিটলারকে তার পররাষ্ট্র মন্ত্রী রিবেনট্রপ একান্তে বলেন, “এই বৃদ্ধ লোকটি আজ বৃটিশ সাম্রাজ্যের মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করে গেলেন, আমাদের জন্য রেখে গেলেন তারিখটি বসিয়ে নেওয়ার কাজ১৩।”

১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সাল, জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ ও দখল করে নেয়। ফ্রান্স ও বৃটেন ছিলো পোল্যান্ডের চুক্তিতে আবদ্ধ মিত্র। পোল্যান্ড ফ্রান্স ও বৃটেনের নিকট সাহায্যের আবেদন জানায়। ফ্রেন্স ফরেনমিনিস্ট্রি পোল্যান্ডকে জানায় যে আগামী কাল অথবা তার পরের দিন সকালের মধ্যে ফ্রেন্স ও বৃটিশ বিমান বাহিনী একযোগে জার্মান বাহিনীকে প্রচন্ড আক্রমণে বিধ্বস্ত করবে।  এটা ছিলো সেপ্টেম্বর ৩, ১৯৩৯। এদিন ফ্রান্স ও বৃটেন সরকারী ভাবে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, এর অর্থ দাড়ায় জার্মানির সঙ্গে তাদের মিউনিখ চুক্তি বাতিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ ঘোষণা ছিলো একটা ভন্ডামী। এর পর দেখা গেল কিছু ফ্রেন্স ও বৃটিশ প্লেন জার্মান আকাশ সীমানায় উড়ছে এবং লিফলেট ফেলছে। লিফলেটের বক্তব্য জার্মান সরকার পশ্চিমা শক্তিগুলির সঙ্গে একযোগে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করতে ওয়াদাবদ্ধ হয়েছে। আর জার্মানির বিরুদ্ধে বৃটিশ ও ফ্রেন্স সম্মিলিত বাহিনীর যুদ্ধ সিমাবদ্ধ থাকে ফ্রন্টে সৈন্য সমাবেশ ও নিজেদের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ’র মধ্যে। এ ভাবে চলতে থাকে এপ্রিল-মে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত। এটা ছিলো বৃটিশ, ফ্রান্স ও জার্মানির জাতীয়তাবাদীদের পাতানো খেলা১৪

এর পর হিটলার ডেনমার্ক ও নরওয়ে দখল করে। নরওয়ের আর্মি আর জনগণ প্রচন্ড প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারা জার্মানির একটি হেভিক্রুজার ও একটি হালকা ক্রুজার ধ্বংস করে। ঠিক তখনই নরওয়ের বিশিষ্ট জাতীয়তাবাদী যুদ্ধমন্ত্রী কুইসলিং নরওয়র সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণের আদেশ দেন। জনগণকেও তাদের আত্মরক্ষা ও দেশরক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। এর পর শুরু হয় জার্মান জাতীয়তাবাদের ‘একচেটিয়ার’ জন্য লড়াই। ১০ মে, ১৯৪০ সাল, জার্মান বাহিনী একযোগে আক্রমণ করে বেলজিয়াম, লুক্সেমবুর্গ, হল্যান্ড ও ফ্রান্স। বেলজিয়াম, লুক্সেমবুর্গ ও হল্যান্ড ছিলো নিরপেক্ষ দেশ। এই দেশগুলি আক্রমণের অছিলা তেরীর জন্য জার্মান ‘জাতীয়তাবাদ’ তার দেশপ্রেম’র সত্যিকারের পরিচয়ই তুলে ধরে। সে তার নিজ দেশের মানুষের উপর বোমাবর্ষণ করে। জার্মানির ইউনিভার্সিটি শহর ফ্রাইবুর্গে ১০ মে, ১৯৪০ সাল, খুব সকালে মেয়েদের হোষ্ট্রেলে ও হসপিটালে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করা হয়। এতে শত শত মানুস হতাহত হয়। ধ্বংসাবশেষ থেকে গোরার টুকরো খুড়ে বের করে ফ্রাইবুর্গের মেয়রের অফিসে আনা হয়, এই গোলার খাপের গায়ে জার্মান ট্রেডমার্ক দেখে মেয়র সাহেব প্রায় ভিরমী খান। পরে জানা যায় যে আক্রমণের দায়িত্ব পালন করে জার্মান বিমান বাহিনী ‘লুফৎভাফে’র ৫১ তম স্কোয়াড্রন১৫। জাতীয়তাবাদের এই হ’ল দেশপ্রেম।

জার্মানি যখন এই দেশগুলি আক্রমণ করে তখন তার উদ্দেশ্য ছিলো ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের মধ্যদিয়ে অগ্রসর হয়ে বেলজিয়াম ও ফ্রান্সের উপকূল অঞ্চলে অবস্থিত ডানকার্ক বন্দর দখল করা, কারণ ওই বন্দর অঞ্চলে তখন বৃটেনের বিশাল সামরিক বাহিনী সামরিক মহড়ায় অনুশিলনরত ছিলো। জার্মানি যখন ১০ মে আক্রমণ করে তখন তার সামরিক শক্তি ছিলো মোট সেন্য- ১৩৬ ডিভিশন, ট্যাঙ্ক- ২৫৮০টি, যুদ্ধবিমান- ৩৫০০টি। বিপরীতে সম্মিলিত (বৃটিশ-ফ্রেন্স) বাহিনী, সৈন্য- ১৪২ ডিভিশন, ট্যাঙ্ক-৩০০০টি, যুদ্ধবিমান- ৩৯৮৪টি১৬। এই অবস্থায় জার্মান বাহিনি যখন ডানকার্কের দিকে অগ্রসর হতে থাকে তখন বৃটেন ও ফ্রান্সের জাতীয়তাবাদী সরকার ও সামরিক কর্তারা বাকযুদ্ধ চালাতে থাকে কিন্তু কোন সম্মিলিত আক্রমণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। এ অবস্থায় জার্মান বাহিনী ডানকার্ক বন্দরে পৌঁছানোর অনেক আগে ১৪ মে বৃটিশ এ্যাডমিরাল্টি বৃটেনের সকল শিপ মালিকদের নির্দেশ প্রদান করে যে তারা যেন প্রস্তুত থাকে ডানকার্ক বন্দর থেকে বৃটিশ আর্মিকে সরিয়ে আনতে সাহায্য করার জন্য। অর্থাৎ জার্মান সৈন্য পৌঁছানোর পূর্বেই ফ্রান্স ও বৃটেনের জাতীয়তাবাদীরা অস্ত্র সমর্পণ করে। ২১ মে জার্মান বাহিনী ফ্রান্সের উপকূলাঞ্চল বোলগ্নে এবং বেলজিয়ামের উপকূলাঞ্চল ওষ্টেড দখল করে দুদিক থেকে ডানকার্কের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ২৪ মে হিটলার তার জেনারেল ‘রুন্ডসটেড্ট’কে ডানকার্কে অবস্থানরত বৃটিশ ও ফ্রেন্স বাহিনীকে আক্রমণ করতে নিষেধ করে, শুধু ঘিরে রাখতে হুকুম করে। কারণ ফ্রান্স ও বৃটেনের জাতীয়তাবাদীরা তখন হিটলারের চাহিদা অনুযায়ী পুঁজিপতিদের জন্য সবকিছু করতে রাজি হয়েছে আর এই দৌত্যক্রিয়ায় মধ্যস্থতার দায়িত্ব পালন করে আমেরিকা। ২৬ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বৃটেন ডানকার্ক বন্দর থেকে তার ৩ লাখ ৩৮ হাজার সৈন্য সরিয়ে নেয় তাদের সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র জার্মান বাহিনীর হাতে বিনাযুদ্ধে তুলে দিয়ে১৭। ফ্রান্সও বৃটেনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। ১৪ জুন, ১৯৪০ সাল, জার্মান বাহিনী প্যারিসে প্রবেশ কওে বিনাযুদ্ধে, আর ২২ জুন ফ্রান্সের জাতীয়তাবাদী সরকার আত্মসমর্পণ চুক্তিতে সই করে যার মধ্যস্থতা করে ফ্রান্সে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বুলিট। জার্মানরা ফ্রান্সকে দুই ভাগে ভাগ করে। পূর্ব ও উত্তর ফ্রান্স ( ফ্রান্সের প্রধান শিল্পাঞ্চল) তাদেও দখলে রাখে আর দক্ষিণ ও পশ্চিম ফ্রান্সকে তার তাবেদার জাতীয়তাবাদী পেতেইন সরকারকে ছেড়ে দেয়। এ ভাবেই পেতেইন ফ্রান্স ও তার জনগণকে জার্মানির কাছে বেচে দেয়।

বৃটেনের জাতীয়তাবাদীরা ইউরোপের দেশগুলিকে মিত্রশূন্য করে হিটলারের দখলদারীতে সাহায্য করে, ফলে প্রায় গোটা ইউরোপ হিটলারের অর্থাৎ জার্মান পুঁজিপতিদের নিয়ন্ত্রনে আসে। আর ফ্রান্স জার্মানির করতলগত হওয়ার পর ইংল্যান্ড দেখতে পায় যে সে হিটলারের মুখোমুখি দাড়িয়ে সম্পূর্ণ একা, মিত্রশূন্য, প্রায় ‘উলঙ্গ’। ডানকার্ক বন্দরে তার সাজসজ্জা বেদখল হযে গেছে হিটলারের কাছে। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনষ্টন চার্চিল বলেন, “বৃটেনে আমাদের সেনাবাহিনী প্রায় নিরস্ত্র অবস্থায় অবস্থান করছিলো১৮।” এর পর শুরু হয় বৃটিশ জাতিকে ধর্ষণ। আর এই ধর্ষণের নির্মাতা পুঁজিপতিদের তাবেদার জাতীয়তাবাদীরাই। ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৪০ থেকে ১৪ নভেম্বর ১৯৪০ পর্যন্ত ৬৮ দিন বিরতিহীন ভাবে জার্মান বাহিনী লন্ডন সহ ইংল্যান্ডের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর বোমা মেওে গুড়িয়ে দেয়। ১৪ নভেম্বর ৫০০ জার্মান বোমারু বিমান বৃটেনের প্রধান বিমান নির্মাণ কেন্দ্র কভেন্ট্রিসিটিকে গুড়িয়ে দেয়। হিটলারকে তৈরী করা হয়েছিলো সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করার জন্য, আর নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে হিটলার তা-ই করে, বৃটেন দখল না করে। বৃটিশ জাতিকে তার জাতীয়তাবাদীরা রক্ষা করেনি শুধুমাত্র পুঁজিপতিদের মুনাফার ধান্ধায়। জার্মান পুঁজিপতিরা চাচ্ছিলো একচেটিয়া। পুঁজির ধর্মই হ’ল যে কোন প্রকারেই হোক অন্য সকলকে গ্রাস করে নিজেকে স্ফিত করা, নিজেকে একচেটিয়ায় পরিণত করা।

আর এ যুদ্ধ যে জাতীয়তাবাদের শ্লোগানে পুঁজিপতিদের পুঁজি রক্ষা ও মুনাফার জন্যই হয়েছিলো সেটা আমরা শুনতে পাই পুঁজিপতিদেরই একজন প্রধান ম্যানেজার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ‘লিন্ডন জনসন’র মুখে। তিনি বলেন, “ফ্রান্স হিটলারকে থামাতে পারতো যখন সে তার আগ্রাসন শুরু করে, ফ্রানাস ও ইংল্যান্ড একত্রে হিটলারকে থামাতে পারতো যখন সে অষ্ট্রিয়া দখল করে, এমনকি চেকোশ্লোভাকিয়ায়ও। আর আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স সম্মিলিত ভাবে হিটলারকে থামাতে পারতো যখন সে পোল্যান্ডকে ধর্ষণ করে১৯।”

(২০১১ সালে বাংলাবাজার পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত)
  • Congressional Record, vol,88,part 10, p. A 3135
  • Deborin, A secret of the second world war, p. 15
  • Rozanov, Germany under fascist rule, Moscow,1961, p.140
  • Rozanov, Germany under fascist rule, Moscow,1961,p. 141-42
  • Deborin, A secret of the second world war, p. 16
  • History of the great patriotic war of the soviet union, vol,2, p. 24
  • Deborin, A secret of the second world war, p. 19
  • Documents German Foreign policy 1918-45, series D, vol,2, p. 132
  • Deborin, A secret of the second world war, p. 23
  • New York Times, sep, 27, 1938
  • Winston Churchill, the second world war, vol, 1, London,1955
  • Deborin, A secret of the second world war, p. 29
  • Hugh Dalton, the fateful years, Memoirs1931-45, London, 1957, p. 195
  • R.M. Butler, Grand strategy, vol, 11,
  • Deborin, A secret of the second world war, p. 52
  • Proektor, war in Europ 1939-41, p. 224
  • Deborin, A secret of the second world war, p. 53
  • Winston Churchill, the second world war, vol, 2, London, p. 226
  • Congressional Record, vol, 93, p. 4695

 

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *