গণহত্যা নিয়ে চিত্রকলা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান এবং তাজউদ্দীন আহমদের স্মারক স্থানান্তর অনুষ্ঠান

একাত্তরের উত্তাল-অস্থির সময়ে তাজউদ্দীন আহমেদ প্রিয়তমা স্ত্রী জোহরা তাজউদ্দীনকে করণীয় সর্ম্পকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। মাত্র দুই লাইনে সে সময়ের জনপ্রিয় বকমার্কা সিগারেট (KingStork) এর প্যাকেটের গায়ে, যাতে লেখাছিলো  “জোহুরা পারলে সাড়ে সাত কোটিবাঙালির সাথে মিশে যেয়ো। ”

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন সেকান্দার আলী সেরনিয়াবাত’র তিন সন্তান। স্বাধীনতার পর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সেকান্দার আলীকে তিন হাজার টাকার চেক প্রদান করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শহীদ তিনসন্তানের শেষ স্মৃতি হিসেবে সে চেকের টাকা আর উত্তোলন করেননি সেকান্দার। প্রায় পাঁচ দশক ধরে আগলে রেখেছেন সেই স্মৃতি।

উড়োচিঠি, হত্যার হুমকি, এখনকার মতো পাকিস্তান আমলেও প্রচলিত ছিল। ছয় দফার দাবিতে যখন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান উত্তাল, শেখ মুজিব গ্রাম থেকে গ্রাম চষে বেড়াচ্ছেন ছয় দফার সমর্থনে সেই অস্থির সময়ে শেখ মুজিবকে হত্যার হুমকি দিয়ে পাঠানো হয়েছিল উড়ো চিঠি। চেষ্টা করা হয়েছিল ছয় দফার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার। শেখ মুজিবকে ভয় দেখানোর।

মুক্তিযুদ্ধের সেই সব স্মৃতি, সেই সব ইতিহাস আজ থেকে সাধারণের জন্য প্রদর্শিত হচ্ছে খুলনায় স্থাপিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম গণহত্যা ও নির্যাতন জাদুঘরে। শুধু এগুলো নয় একাত্তরের গণহত্যার আরো নানা স্মৃতিবহ স্মারক “আর্কাইভ ৭১”এর নির্বাহী পরিচালক প্রণব সাহার সৌজন্যে ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনকে হস্তান্তর করা হয়। ড. মামুনকে এটি হস্তান্তর করেন জাদুঘরের প্রধান নির্বাহী কাজল আব্দুল্লাহ।

অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার মো. সফিকুল ইসলামের পরিবারের সৌজন্যে ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরে স্থান পেয়েছে একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত একটি ট্রানজিস্টর। সীমান্তবর্তী হিলি থানায় কর্মরত এই পুলিশ অফিসার এই ট্রানজিস্টরে স্বাধীনবাংলা বেতার, বিবিসি ও কলকাতা থেকে প্রচারিত আকাশবানীর বিভিন্ন তথ্য ও সংবাদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রদান করে সহায়তা করতেন।

একাত্তরের গণহত্যাকে নানা মাধ্যমে সাধারণের সামনে দৃশ্যমান করার চেষ্টা করছে ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর, খুলনা। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপচিত্র বিভাগের অধ্যাপক ও প্রখ্যাত  শিল্পী রোকেয়া সুলতানার ৭টি শিল্পকর্ম প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে আজ। শিল্পী রোকেয়া সুলনতানার পক্ষ থেকে ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীরমামুনের হাতে শিল্পকর্মগুলো তুলে দেন গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক (প্রশাসন) শহীদুল ইসলাম।

এ উপলক্ষে আজ ৫ মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪ টায় ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর প্রাঙ্গণে গণহত্যা নিয়ে শিল্পকর্ম ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের স্মারক/স্মৃতিচিহ্ন স্থানান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ট্রাস্টি সম্পাদক ও বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম। বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন জানান ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহায়তা করেছেন বলেই আমরা এ ধরণের একটি কাজ করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমেদের যে স্মারক আমরা পেয়েছি তা অমূল্য। একই সঙ্গে আমরা ১৯৭১ এর বিশেষ করে গণহত্যা-নির্যাতনের স্মারক সংগ্রহ করছি।’ তিনি আহবান জানিয়ে বলেন, যাদের কাছে এ বিষয়ে স্মারক আছে তা তারা প্রদানকরলে এ জাদুঘর ক্রমেই সমৃদ্ধ হবে। যারা স্মারক প্রদান করেছেন তাদের সবাইকে তিনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *