প্রকৃতির অপার বিস্ময় সুন্দরবন দেখে এলাম

শহুরে মানুষ যান্ত্রিক জীবনে অনেক বেশি হাপিয়ে উঠে। শহুরে কর্ম ব্যস্ত জীবন, নানাবিধ সমস্যায় দিনাতিপাত করতে হয় প্রতিনিয়ত। তার ভেতর থেকে একটু বিরাম পেতে বছরের কোন না কোন সময়ে প্রতিটি মানুষই চায় সাধ্যের মধ্যে একটু ঘুরে বেড়াতে। আর তারই যুতসই ব্যবস্থাপনায়, চমৎকার আয়োজনে আছে  রূপান্তর ইকো-ট্যুরিজম লিঃ ।

আমাদের খুবই নিকটে রয়েছে বাংলাদেশের তথা বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। যেখানে শীতের মৌশুম সহ প্রায় সারাবছরই চলমান থাকে সুন্দরবন ভ্রমণ। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের এবারের সুন্দরবন ভ্রমণ। গত ৩০ জানুয়ারী ২০১৮ তারিখ বেলা বিকালে খুলনার ভৈরব নদ থেকে রূপান্তর ইকো-ট্যুরিজম লিঃ’র ব্যবস্থাপনায় অভিজাত ভ্রমণতরী এম. বি. উদয়তারা নিয়ে যাত্রা শুরু হয়।

৩১ জানুয়ারী তারিখ সকাল ৮ টায় মোংলা থেকে পর্যটক নিয়ে সুন্দরবন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ৩ দিন ২ রাতের মূল যাত্রা শুরু হয়। ঢাংমারী ফরেষ্ট অফিস থেকে ফরেষ্ট গার্ড নেওয়া এবং সরকারী কোষাগারে রাজস্ব প্রদান করা হয়। কিছুটা সময় কুয়াশা থাকার কারণে পশুর নদীর ঢাংমারীতে বোট নোঙর করে রাখা হয়। কুয়াশা পরিস্কার হবার পর যথারীতি পশুর নদী দিয়ে বোট সুন্দরবনের দিকে চলমান থাকে। বেলা সাড়ে ১১ টায় জংলা ফরেষ্ট অফিসের পাশ ঘেসে নন্দবালা খাল দিয়ে জয়মনি ফরেষ্ট অফিস হয়ে শেলা নদী দিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় কটকায় বোট নোঙর করে। পর্যটকরা কটকা ফরেষ্ট অফিস সাইট ঘুরে দেখেন। কটকা অফিস সাইট ঘোরা শেষে কটকার রাত যাপন।

সেদিন ছিলো পূর্ণ চন্দ্র গ্রহণ। রাত ১০টা পর্যন্ত চলে চন্দ্র গ্রহণ। পর্যটকরা সবাই চন্দ্র গ্রহণ উপভোগ করেন। পাশাপাশি চন্দ্র গ্রহণ শেষে পর্যটকেরা চাঁদের আলোয় সুন্দরবনের রাতের অপরূ-অপার্থিব পরিবেশ উপভোগ করেন।

১ ফেব্রুয়ারী ভোর ৬টায় কটকা জামতলা, টাইগার পয়েন্ট এবং ওয়াচ টাওয়ার হয়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ জঙ্গলের ভিতর দিয়ে পায়ে হেঁটে কটকা সমুদ্র সৈকতে পৌঁছান পর্যটকগন। সেখানে তারা সমুদ্র সৈকতে নামেন এবং অনেকেই সমুদ্রস্নান করেন। সমুদ্র সৈকতে স্নান এবং ভ্রমণ শেষে পর্যটকবৃন্দ বোটে ফিরে আসেন।

 

পরবর্তি সময়ে কটকা থেকে কচিখালী অভায়ারণ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হয়। পর্যটকেরা দাবি করেন সাগর দিয়ে কচিখালী যাবার, তাদের দাবি পূরণে কটকা থেকে সাগর হয়ে কচিখালী পৌছানো হয়। কচিখালীতে যাত্রা বিরতি শেষে কচিখালী ছোট খালে কিছু সময় নৌকায় ঘুরে সময় কাটান পর্যটকবৃন্দ। কচিখালী ফরেষ্ট অফিস কর্তৃক নির্মিত প্রথম ঘাটের সিঁড়ি অনেক খারাব হওয়ার কারণে পর্যটকবৃন্দ ঐ সিঁড়ি দিয়ে কোন মতেই পাড়ে উঠতে সম্মত হয়নি।  পরবর্তিতে নৌকায় করে কচিখালী খালে প্রবেশ করে কিছুদুর এগিয়ে আরেক ঘাট দিয়ে বনের পাড়ে নামেন পর্যটকবৃন্দ। সেই ঘাটের অবস্থাও তেমন ভালো না। তার পরেও বাধ্য হয়ে ভাঙ্গা এবং অনেক উঁচু সিঁড়ি দিয়ে পাড়ে

উঠতে হয় পর্যটকদের। সেখানে বেশকিছু পথ বনের ভেতরে ঘুরে বেড়ান পর্যটকেরা। তারা বলেন যারা এই সকল ব্যবস্থাপনায় আছেন তাদের উচিৎ এখানে পর্যটকদের আসা-যাওয়ার পথ আরো সুগম করা। কচিখালী ভ্রমণ শেষে সন্ধ্যা ৬ টায় পরবর্তি ভ্রমণ এলাকা করমজল এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হয়, রাত ২টয় ঢাংমারী ফরেষ্ট অফিসের পেছনে নোঙর করে ওখানেই রাত যাপন করেন পর্যটকবৃন্দ।

২ ফেব্রুয়ারী সকাল ৯টার পর করমজল কুমির এবং হরিণ প্রজনন কেন্দ্র এবং বনের ভেতরের অংশেও ঘুরে বেড়ান পর্যটকবৃন্দ।

করমজল ভ্রমণ শেষে এক ভিন্ন এবং নতুনত্ব পরিবেশ ভ্রমণের জন্য লাউডোব বা কৈলাশগঞ্জ এলাকায় যান পর্যটকবৃন্দ। সেখানে তারা সুন্দরবন শর্মিলা ইকো কটেজ যান। সুন্দরবন শর্মিলা ইকো কটেজ প্রাঙ্গনে প্রবেশের শুরুতে এলাকার পক্ষ থেকে পর্যটকদের ফুলের পাপড়ি দিয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন এবং বরণ করেন। পরবর্তিতে পর্যটকবৃন্দ উপভোগ করেন দক্ষিণ বাংলার ঐতিহ্য লোক সংঙ্গীত পট গান। পরিবর্তন-খুলনা’র ব্যবস্থপনায়, নাজমুল আজম ডেভিড এর পরিকল্পনায় এবং আজিজুর রহমান ছবির রচনায় সুন্দরবন বিষয়ক পটগান পরিবেশন করেন শর্মিলা সরকার এবং তার দল। পর্যটকবৃন্দ খুবই আন্তরিক ভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং পটগান উপভোগ করেন। পটগান উপভোগ শেষে শর্মিলা সরকার এবং তার দলকে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে পুরস্কৃত করেন পর্যটকবৃন্দ। পটগান শেষে পর্যটকেরা ঘুরে দেখেন শর্মিলা সরকারের হস্ত শিল্প সামগ্রী এবং নব নির্মীত ইকো কটেজ। তারা ইকো কটেজ দেখে খুবই অবিভূত হন এবং প্রায় ৫৪০০ টাকার হস্ত শিল্প সামগ্রী ক্রয় করেন। এবারের ভ্রভণে মোট ১১ জন পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেন।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *