খুবিতে স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে দুদিনব্যাপী আর্ক কেইউ ডিগ্রি শোর উদ্বোধন

স্থপতিদের চোখে নান্দনিক ভাবনার সাথে থাকে পরিকল্পনা আর আগামীর দূরাভাস। মানুষের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার স্বাপ্নিক অভিযাত্রিক তারাই। সম্মুখ ভাবনায় অগ্রসরতার ভিত্তি রচিত হয় স্থাপত্য শিক্ষাকালীন।  নবীন স্থপতিদের অভিসন্ধানের সেই চিন্তা কতোটা ঋদ্ধ তার বহিঃপ্রকাশ ঘটালো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে দুদিনব্যাপী আর্ক কেইউ ডিগ্রি শোর উদ্বোধনী দিনে।

এই প্রদর্শনীতে প্রদর্শীত নবীন ২৯ জন স্থপতির থিসিস ভিত্তিক বিভিন্ন স্থাপত্য কর্ম তিনটি ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছে। এতে দেশে মহাকাশ গবেষণা থেকে শুরু করে গ্রামীণ উন্নত অবকাঠামোর আধুনিক ডিজাইন তুলে ধরা হয়েছে।

বটিয়াঘাটায় দেশের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ তিল উৎপন্ন হয়, দেশি আমন ধান চাষ করা হয়। এসব ফসলের সুষ্ঠু বিপননে পরিকল্পিত একটি বাজারের মডেল প্রদর্শন করেন নবীন স্থপতি ওপাল। এই বাজার মডেলে বহুমুখী সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। খুলনায় স্থাপনযোগ্য একটি আধুনিক সিরামিক কারখানার ডিজাইন করেছেন রাফসান হাসান অনিক। আবাসিক এলাকার প্রতিবেশীদের ভবন ও রাস্তার অবকাঠামোর মধ্যে কিভাবে সুন্দর নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করা যায় তা তুলে ধরেছেন আবদুল্লা আল জুবায়ের, পাবনায় বিসিক শিল্প নগরী স্থাপনে কি ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি সম্ভব ছিলো আর কি ভুল হয়েছে তার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছেন আরিফা হোসেন।

এছাড়া আধুনিক হিমায়িত চিংড়ি প্রসেসিং কারখানা থেকে শুরু করে পাহাড়ের ওপর নিরাপদ ঘরবাড়ির মডেল, বন্যাকবলিত এলাকার জন্য ঘরবাড়ির মডেল থেকে শুরু করে সফটওয়্যার  পার্ক, পাপেট এনিমেশন সেন্টারের মতো আধুনিক চিন্তার সমাবেশ ঘটেছে এই প্রদর্শনীতে। প্রথম দিনেই দর্শকের দৃষ্টিতে প্রদর্শীত এ ডিজাইনগুলো আগামী দিনের আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রতিভাস ফুটে উঠেছে। সপ্রশংসিত এ ডিজাইনগুলো একই সাথে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য শিক্ষার গুণগতমান ও অব্যাহত সেরা প্রচেষ্টার প্রতীক বলেও অভিধা পেয়েছে।

আজ ১৮ মার্চ সকাল ১০ টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবনের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের সেমিনার কক্ষ উঠানে স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের আর্ক কেইউ ডিগ্রি শো-২০১৮, রূপা মেমোরিয়াল গোল্ড মেডেল, বৃত্তি ও সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থাপত্য ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. অনির্বাণ মোস্তফা। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ মনিরুজ্জামান, প্রধান স্থপতি ও ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট বাংলাদেশ আইএবির সভাপতি স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, আরবান ডিভেলপমেন্ট ডাইরেক্টরেটের পরিচালক ড. খুরশীদ জাবিন হোসাইন তৌফিক, আইএবির সহ-সভাপতি স্থপতি জালাল আহমেদ।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির আহবায়ক স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের শিক্ষক প্রফেসর ড. খন্দকার মাহফুজ উদ-দারাইন। বক্তারা বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিন দেশে স্থাপত্য শিক্ষায় বিশেষ অবস্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। নবীন স্থপতিরা ভবিষ্যতে বিশ্বের সামনে নতুন এক নান্দনিক বাংলাদেশ উপহার দিতে পারবে বলেও তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষার্থী তানহা তাবাসসুম তিশাকে রূপা মেমোরিয়াল গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়। রূপার মাতা রেজিনা বেগম গোল্ড মেডেল এবং দুইজন শিক্ষার্থীকে রূপা স্কলারশীপ প্রদান করেন। এছাড়া ভালো ফলাফলের জন্য হেড লিস্টে স্থান পাওয়া ডিসিপ্লিনের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদেরকে সনদপত্র দেওয়া হয়।

এ সময় ডিসিপ্লিনের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এবং দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধান অতিথিসহ অতিথিবৃন্দ আর্ক কেইউ ডিগ্রি শো-২০১৮ তে প্রদর্শীত নবীন ২৯ জন স্থপতির থিসিস ভিত্তিক বিভিন্ন স্থাপত্য কর্মের মডেল ঘুরে দেখেন। মোট ৩টি বিভাগে ২৯টি মডেল প্রদর্শীত হচ্ছে। আগামীকাল এ প্রদর্শনী শেষ হবে।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে কটকায় সফরে গিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের যে ৯জন শিক্ষার্থী পানিতে ডুবে শাহাদাতবরণ করেন তার মধ্যে রূপা নামে একজন শিক্ষার্থী ছিলেন। রূপার স্মৃতির স্মারকে তার পরিবারের পক্ষ থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের কৃতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই পদক ও স্কলারশিপ প্রদান করা হয়ে থাকে।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *