শিশু-কিশোরদের হাতে অবৈধ মোবাইল ফোন, মাদক-জঙ্গি ঝুকিতে দেশ

দায়িত্বশীল হাজার হাজার সকল শ্রেনীর সরকারী কর্মচারীদের সন্তান সহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের বিপুল সংখ্যক শিশু-কিশোর সন্তান অবৈধ মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের ঝুকির মধ্যে পড়ছে এ সকল শিশু-কিশোর সহ তাদের পরিবার ও রাষ্ট্র, যার সর্বশেষ উদাহরন ঢাকা ভিকারুন্নেসা স্কুলের ছাত্রি অরিত্রী অধিকারী।

যাদের মধ্যে ছাত্র সহ নানা শ্রেণীর ছেলে-মেয়েরা রয়েছে। এর ফলে দেশে মাদক ব্যবসার বিস্তার, জঙ্গি ঝুকি বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের অপরাধী চক্র গড়ে উঠছে। ধ্বংস হচ্ছে শিশু-কিশোরদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কিন্তু অবৈধ মোবাইল ফোনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সরকারী নির্দেশনা থাকলেও তা পালন করা হয়নি বা হচ্ছে না, কারণ বিপুল সংখ্যক সরকারী কর্মচারীদের সন্তানদের হাতেও আছে অবৈধ মোবাইল ফোন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যার সিম তাদের মা-বাবাদের নামে রেজিস্টার্ড। এ অবস্থায় অভিযান পরিচালিত হলে তাদের ছেলেমেয়েরাও ধরাপড়ার ঝুকিতে থাকবে এবং তার দায় তাদের ঘাড়েই বর্তাবে, এমনটাই মনে করেন নাগরীক নেতৃবৃন্দ।

খুলনা মহানগরীর পাঁচটি সরকারী ও বে-সরকারী স্কুল ও মাদ্রাসায় সরেজমিনে অনুসন্ধানকালে অবৈধ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ৫০ জন ছেলে-মেয়ের সাথে আলাপ হয় এ প্রতিবেদকের, যাদের মধ্যে ২৩ জনের মা-বাবা সরকারী চাকুরে, ১৭ জনের বাবা ব্যবসায়ী, ৪ জনের মা-বাবা শিক্ষক এবং বাকিরা মা-বাবার পেশা জানাতে অস্বীকৃতি জানায়।  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ সকল ছেলে-মেয়েদের অনেকে জানায় তাদের ফোনের সিম তাদের মাতা-পিতাদের নামে কেনা হয়েছে। অনেকে আবার সিম বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হয় নি। আবার তাদের অনেকের কথায় বোঝা যায় যে আইডি কার্ড ছাড়াও অনেকে সিম কিনতে সক্ষম হয়েছে।

এ সকল ছেলেমেয়েদের অনেকেই ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরনের মাদক ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে যা সংগ্রহে তারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকে।

উল্লিখিত ছেলেমেয়েদের মধ্যে উচ্চ শ্রেণীতে পাঠরত তিনটি ছেলে জানায় যে তারা ধুমপায়ী এবং মাঝে মাঝে নেশাদ্রব্য ব্যবহার করে। কি ভাবে সেটা তারা সংগ্রহ করে জানতে চাইলে তারা জানায় যে, বিক্রেতার সাথে তারা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে জিনিস সংগ্রহ করে। কেন তারা নেশাদ্রব্য গ্রহণ করে জানতে চাইলে তারা জানায় যে, বন্ধুদের সাথে মজা করার জন্যই তারা এটা করে।

অনুসন্ধানকালে প্রতিবেদক একটি নামকরা সরকারী স্কুলের পিছনদিকে টিফিনকালে অনেকগুলি ছেলেকে একজায়গায় দেখতেপান যাদের মাথাগুলি সব এক জায়গায় জড় হয়ে একটি সার্কেল তৈরী করেছে এবং তারা গভীর আগ্রহে একজনের এ্যান্ড্রয়েডফোনে কিছু দেখতে ব্যাস্ত। প্রতিবেদক তাদের কাছে একটু এগিয়ে যেতেই তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে ছড়িয়েপড়ে এবং তাদের বেশ উত্তেজিতও মনে হচ্ছিলো।

অপ্রাপ্ত বয়স্ক এ সকল মোবইল ফোনধারী ছেলেমেয়েরা একা এবং সংঘবদ্ধভাবে যৌনছবি উপভোগ করছে যা তাদের শিশুমনকে বিষিয়ে তুলছে এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় যৌন আকর্ষণ তাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। এর ফলে নগরীর একটু নিরিবিলি কফি হাউস-রেষ্টুরেন্টে অল্প বয়স্ক ছেলে-মেয়েরা জড়াজড়ি করে সঙ্গসুখ ভোগ করছে নির্দিধায়, এ দৃশ্য এখন নৈমিত্তিক, যা মূলত এই অবৈধ মোবাইল ফোন সংস্কৃতির পরিণতি।

অন্যদিকে অবৈধ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী এ সকল ছেলেমেয়েদের অনেকেই জঙ্গিদের পাল্লায় পড়ে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ছে যা বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে দেখা যাচ্ছে। যা সহজেই এড়ানো যেতো যদি এদের হাতে অল্প বয়সেই মোবাইল ফোন না থাকতো বলে মনে করেন সামাজিক আন্দোলনকারীগণ।

অবৈধ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বে-পরওয়া ও বিপদজনক হ’ল সমাজের নি¤œ আয়ের মানুষদের কিশোর সন্তানরা। অবৈধ মোবাইল ফোন ব্যবহারে এরাই সংখ্যাগারষ্ঠ। সামাজিক বাস্তবতার কারণেই এদের উপর পরিবারের নিয়ন্ত্রণ খুবই আলগা। এ সকল ছেলেমেয়েরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজেই যৌন ভিডিও সহ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ ভিডিও দেখে মানসিক বৈকল্যের শিকার হয়, যার সামাজিক প্রয়োগে পরবর্তীতে সৃষ্টি হয় সামাজিক অপরাধ। আর এ ভাবেই সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কিশোর অপরাধের, যার পরিনাম সামাজিক অস্থিরতা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সামাজিক সুধিজনদের বক্তব্য, যেখানে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ করা হয়েছে তা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও ব্যক্তি-মানসিক সমস্যা সৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই করা হয়েছে। এবং এটা না মানা অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর এই অপরাধের জন্য অবৈধ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উভয়ই অপরাধী, কারণ, অবৈধ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা আইন লঙ্ঘনের দায়ে অপরাধী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে অপরাধী। তাঁরা আরও বলেন, অবৈধ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক সরকারী কর্মচারীদের সন্তানরা রয়েছে সম্ভবত সে কারণেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা থাকা সত্বেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। তবে দেশ ও সমাজের মঙ্গল ও নিরাপত্তার সার্থে এ বিষয়ে অবশ্যই তাদের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, “অবৈধ মোবাইল ফোন ব্যাবহারকারীদের বিরুদ্ধে এই মূহুর্তে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা তাদের নেই।

সরকার বিভিন্ন সময় অবৈধ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বললেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয় না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় মৌখিক নির্দেশ দিলেও আমাদের উপর এ বিষয়ে কোনো লিখিত নির্দেশ নেই, সরকার লিখিত নির্দেশ দিলেই আমরা ব্যবস্থা নেব।”

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ ,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *