‘ভুতুড়ে বিল’ নিয়ে অভিযুক্ত ডিপিডিসির এমডি পেলেন শুদ্ধাচার পুরস্কার !

করোনা মহামারির মধ্যেই পরিকল্পনা করে গ্রাহকের কাছ থেকে বিদ্যুতের বাড়তি বিল আদায় করে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)।

আর সেই কাজ ঠিকঠাকমত করায় সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিকাশ দেওয়ানকে দেওয়া হয়েছে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার’। আর এই পুরস্কার তার হাতে তুলে দিয়েছেন ডিপিডিসির চেয়ারম্যান ও বিদ্যুৎ সচিব সুলতান আহমেদ, যিনিও ওই কাজে অভিযুক্ত।

গত ২৬ আগস্ট বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের মাসিক সমন্বয়সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় গত অর্থ বছরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের অর্পিত কর্মসম্পাদনে নিষ্ঠা ও দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার’ পান ডিপিডিসির এমডি বিকাশ দেওয়ান।  সেরা কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। ওই দিনই বিদ্যুৎ সচিব সুলতান আহমেদের কাছ থেকে তিনি পুরস্কার গ্রহণ করেন।

এ বিষয়ে জানতে বিদ্যুৎ সচিব সুলতান আহমেদের মুঠোফোনে বুধবার কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। এরপর বিদ্যুৎ সচিবের মুঠোফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।

রাজধানীর দক্ষিণ ও নারায়ণগঞ্জ বিদ্যুৎ বিতরণ করে ডিপিডিসি। সংস্থাটির মোট গ্রাহক সাড়ে ১৩ লাখ। এই গ্রাহকদের সেবা দিতে ডিপিডিসির ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৩৬টি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ডিপিডিসি তাদের ৩৬টি কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে বেশি বিল করার নির্দেশ দিয়েছিল। ওই নির্দেশে এলাকাভেদে ১০ থেকে ৬১ শতাংশ বেশি বিল করতে বলা হয়। ডিপিডিসির তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) শাখা থেকে সংস্থাটি ৩৬টি স্থানীয় কার্যালয়ে (এনওসি) চিঠি দিয়ে ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসের বিল বেশি করতে নির্দেশনা দিয়েছিল। এই বাড়তি বিল ৩৬টি কার্যালয়ে কী পরিমাণ বেশি করতে হবে, তা-ও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের তিন মাসের বিলের সঙ্গে তুলনা করে এ বছরের তিন মাসে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৬১ শতাংশ বিল বেশি করতে বলা হয়।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ডিপিডিসি তাদের কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডারে গত বছরের ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসের তুলনায় ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৬১ বেশি বিল করার নির্দেশনা দিয়েছে। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সফট ওয়ারের মাধ্যমে হয়েছে। ডিপিডিসির ধনি গরিব সব ধরনের সাড়ে ১৩ লাখ গ্রাহকই বাড়তি বিলের শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, এই বেআইনি কাজ করে গ্রাহকের কাছ থেকে করোনার মত চরম দুর্যোগকালে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে ধরা পড়ল যে সংস্থাটি তারই প্রধানকে দেওয়া হয়েছে শুদ্ধাচার পুরস্কার। এটি হতাশার, লজ্জার। জনগণের সঙ্গে রীতিমতো তামাশা।

গত কয়েক মাস সারা দেশে আলোচনার বিষয় ছিল ‘বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিল’। কোনো গ্রাহকের বাড়তি বিলের পরিমাণ ছিল রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো। ব্যাপক সমালোচনার মুখে বিদ্যুৎ বিভাগ দুঃখপ্রকাশ করে দাবি করে, করোনার কারণে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মিটার রিডাররা বিল করতে পারেননি। সে কারণে কোনো কোনো গ্রাহকের বাড়তি বিল এসেছে। অভিযোগ জানালে সেটি সঙ্গে সঙ্গে সমন্বয় করে দিচ্ছে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো। কিন্তু গ্রাহকের এই বাড়তি বিল মোটেও ভুল নয়, বরং ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েই জনগণের ওপর বাড়তি বিল চাপিয়ে দিয়েছে।

ডিপিডিসির এমডির শুদ্ধাচার পুরস্কার পাওয়ার বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নিষ্ঠা ও দক্ষতার মাপকাঠি যদি হয় বেআইনিভাবে জনগণকে ভোগান্তি তৈরি করা, তাদের পকেট কাটা তাহলে এটি অত্যন্ত বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল। অপরাধ করে শাস্তির মুখোমুখি না হয়ে উল্টো যদি পুরস্কার পাওয়া যায় তাহলে সরকারের এসব সংস্থার কর্মকর্তাদের অপরাধ করার প্রবণতা আরও বাড়বে। মানুষ তার অধিকার আরও হারাবে।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *