দীর্ঘদিন যাবৎ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে স্লুইস গেইটের মুখ পলিতে ভরাট হয়ে গেছে, অন্যদিকে স্লুইস গেইটের মুখের খাল ভরাট করে গড়ে উঠেছে অবৈধ বসত বাড়ি, ফলে জল চলাচলের চ্যানেল হয়ে পড়েছে আরও সংকির্ণ, এ অবস্থায় মাত্র দুই দিনের বৃষ্টিতে ডুবে যায় খুলনা মহানগরীর প্রন্তে অবস্থিত বটিয়াঘাটার এক নম্বর জলমা ইউনিয়নের শোলমারী গ্রাম।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, গ্রামের সকল উদ্বৃত্ত পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খালের মুখের সিদুরতলা স্লুইস গেইটের রক্ষণাবেক্ষণ হয় নি দীর্ঘদিন, ফলে পলি পড়ে স্লুইস গেইটের মুখ ভরাট হয়ে যায়। অন্যদিকে উল্লিখিত স্লুইস গেইটের খালের মুখ ভরাট করে অবৈধ ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বসতবাড়ি যে কারণে জল চলাচলের পথ হয়ে পড়ে আরও সংকির্ণ যার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয় নি। এ অবস্থায় গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট টানা দুই দিনের ব্যাপক বৃষ্টিতে পানি জমতে থাকলেও পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ থাকায় পুরো গ্রাম বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায় যে অবস্থ গত ২০ বছরেও ঘটেনি এ গ্রামে। গ্রাম ডুবে যাওয়ায় গ্রামের সকল পুকুর ও ঘের ডুবে ভেসে গেছে লক্ষ লক্ষ টাকার চিংড়ি ও সাদা মাছ, এবং মরে গেঝে সব্জি বাগানের সকল সব্জি।
গ্রামবাসিদের আরও অভিযোগ, পানিতে গ্রাম ডুবে গেলেও স্লুইস গেইট কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ কেউই এগিয়ে আসেনি। এ অবস্থায় গ্রামবাসি নিজেরা চাঁদা তুলে স্কেভেটর ভাড়া করে ও স্বেচ্ছা শ্রমে স্লুইস গেইটের পলি অপসারণ করে ও খালের মুখের মাটি কিছুটা কেটে দেয়। এর ফলে পানি কিছুটা নামলেও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে নি। আর সেটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহয়তা ছাড়া সম্ভবও নয়।
গ্রামের সাবেক মেম্বর ও বর্ধিষ্ণু চাষি রবিন মালি বলেন, শোলমারী নদীর পাড়ের এ গ্রাম পূর্বে কখনও বন্যা প্লাবিত হয় নি ফলে এ ধরনের আবস্থার জন্য গ্রামবাসি আদৌ প্রস্তুত ছিল না যার কারণে সকলেই ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা ছাড়া গ্রামবাসির পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু পরিতাপের বিষয় গ্রামবাসির সহয়তায় কর্তৃপক্ষ এখনও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে নি।
এ বিষয়ে গ্রামের চেয়ারম্যান বিধান বাবু ও মেম্বর তরিকুর আলমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায় নি। গ্রামবাসি শিরাজ মিঞা ও শশাঙ্ক জানান দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে চেয়ারম্যান ও মেম্বর এলাকায় নেই।
উল্লিখিত স্লুইস গেইটটি পরিত্যাক্ত কি-না জানতে চাইলে খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-১ এর নির্বাহি প্রকৌশলি আব্দুর রহমান তাজকির বলেন, ‘না গেইটটি সচল আছে।’
সে ক্ষেত্রে সামান্য একটু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুরো গ্রামবাসির এত বড় সর্বনাশ হ’ল এটা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ আসলে এ অঞ্চলের সকল নদী-খালগুলিই তীব্র নাব্যতা সঙ্কটে ভুগছে, বিশেষ করে শোলমারী নদীটি প্রায় শুকিয়ে গেছে ফলে এর তীরে যে দশ ব্যান্ড’র স্লুস গেটটি আছে সেটি সচল রাখতেই আমরা হিমশিম খাচ্ছি, যদি সেটি চালু রাখা সম্ভব হয় তবে উল্লিখিত অঞ্চলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার খানিকটা উন্নতি হবে। তবে শোলমারী নদী খনন করা না গেলে এর দীর্ঘস্থায়ী কোন সমাধান হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ আমরা শোলমারী নদী খননের জন্য একটি প্রকল্প মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছি আশাকরছি সেটা দ্রুতই পাশ হবে। আর তা হলে এ সকল সমস্যার একটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে।’
উল্লিখিত স্লুইস গেইটটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ শোলমারী সিদুরতলা স্লুইস গেইটটি আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি, আশাকরি খুব দ্রুতই সেখানকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদপূর্বক স্লুইস গেইটের কিছু শংস্কার করে গ্রামের পানির স্তর পূর্বাবস্থায় নেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ