দুর্নীতিবাজ সীমান্ত রক্ষী আর জেলা প্রশাসনের মীরজাফরেরা টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশটাকেই তুলে দিচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-জঙ্গিদের হাতে। একই সাথে সাহায্য করছে দেশদ্রহী খুনী-লুটেরা-ধর্ষণকারী যুদ্ধাপরাধীদের দেশ থেকে পালিয়ে যেতে এবং কুখ্যাত জঙ্গিদের অবাধে দেশে ঢুকতে ও দেশ থেকে বেরোতে! এ সকল সীমান্ত এলাকার সাম্প্রতিক চিত্র ফুটে উঠেছে আনন্দবাজার পত্রিকা’র প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদকের বক্তব্য- রাজশাহী-চাপাই সীমান্ত করিডোর দিয়ে মোবাইলের বাক্সে আসে সকেট বোমা-গ্রেনেড-পিস্তল এবং যাতায়াত করে হাইপ্রফাইল যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গিরা!
বাচ্চু রাজাকার কোথায় ? মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী ফাঁসির আসামি বাচ্চু রাজাকারকে রাজশাহী-চাপাই সীমান্ত করিডোর দিয়েই ভারতে পার করে দিয়েছে তার সঙ্গিরা, এবং সেখান থকে বাচ্চু এখন পাকিস্তানে। এ সীমান্তের ওপারের একদিকে বিহার-উত্তরপ্রদেশ-দিল্লী-কাশ্মীর, অন্যদিকে নেপাল হয়ে পাকিস্তানের যে কোনো প্রান্তে যাওয়া সহজ।
এ কারণেই রাজশাহী-চাপাই কোরিডোর কে চোখের মণির মত আগলে রাখে জঙ্গি-জামায়াত। অর্থ, অস্ত্র আর মাদকের চালান তো আছেই, হাই প্রফাইল অপরাধীদের বাংলাদেশের বাইরে বের করে নিয়ে যাওয়ার রাস্তাও সবসময় তৈরী রাখতে হয় জামায়াতকে।
অভিযোগ আছে, অগোছালো ও শিথিল প্রহরার সীমান্ত লাগোয়া এই এলাকার দখলদারি রাখতে বিস্তর টাকাও ঢালতে হয় জামায়াতকে। ক্ষমতাসিন দলের রাজনীতিক থেকে পুলিশ, সীমান্ত রক্ষি থেকে উকিল, এমনকি সাংবাদিকদের একাংশের কাছেও গোপনে টাকা পৌঁছে যায় নিয়মিত। এর বাইরে কেউ জঙ্গিদের তত্ত্ব-তালাশ করলে তাদের জন্য অন্য ওষুধ!
রাজশাহীতে জামায়াত ও তার জঙ্গি-জালের নানা তথ্য অনায়াসে বলছিলেন পুলিশের খাতায় ‘সাবেক’ জেএমবি ক্যাডার সওকত শেখ। যদিও ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির নেতা শাহ্রিয়ার কবীর বলেন, প্রাক্তন জঙ্গি বলে কিছু হয় না। জেএমবি-জামায়াত’র নীতি হ’ল মওদুদি বাদ। মওলানা মওদুদি সাফ বলে গেছেন জঙ্গি সংগঠন পাড়ার ক্লাব নয় যে ইচ্ছা হ’ল ছেড়ে চলে গেলাম। একমাত্র মৃত্যুই কর্মীদের সংগঠন থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে। কেউ সংগঠন ছাড়তে চাইলে তার মৃতদেহই মেলে।
কবীরের সাফ কথা, “ভারতের জঙ্গি সংগঠন সিমি-ও এই নীতিমালাই মেনে চলে। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য আহমেদ হাসান ইমরান যে বলছেন, আগে সিমি’র নেতা থাকলেও পরে তিনি সে সংগঠন ছেড়ে দিয়েছেন এর চেয়ে বড় মিথ্যা আর হয় না। জঙ্গিদের দেওয়া অন্য কোনো দায়িত্ব পালন করছেন ইমরান।”
সওকত বলছিলেন জামায়াত নেতা মোদাচ্ছের’র কথা। চর আষাঢ়িয়াঘাটের এই বাসিন্দার দাবি, রাজাবাড়ি-সুলতাগঞ্জ এলাকায় অস্ত্র চোরাচালানের অনেকটাই সামলায় মোদাচ্ছের। ভারত থেকে চোরাই মোবাইল আসে সাদা বাক্সে, কড়া সিল করা। বাক্সগুনে বখরা নিয়ে ছেড়ে দেয় সীমান্ত প্রহরীরা! এ সব বাক্সের অনেকগুলিতে থাকে সকেট বোমা, বিভিন্ন গুলি, পিস্তল আর বিস্ফোরক, হেরইন ও অন্য মাদক! বাক্সের গায়ে চিহ্ন দেখে আলাদা করে রাখা হয় মোকামে।
রাজশাহীর জামায়াত নেতাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে সব সময় বিশেষ দাপট। আর কারণটাও সহযেই অনুমেয়। সারা বাংলাদেশে মৌলবাদী জিগির তোলার রসদ অনেকটাই যে সরবরাহ করে রাজসাহী জেলা শাখা! জঙ্গিদের নিয়মিত অর্থ সরবরাহের অকাট্য প্রমাণ পেয়ে রাজশাহী শহরের এক চিকিৎসককে গত বছর ৬ এপ্রিল গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। ওই চিকিৎসক ছিলেন ইসলামি ব্যাঙ্ক হাসপাতালের একজন পরিচালক এবং রাজশাহী জামায়াত’র ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল। চারমাস জেলে থাকার পর তিনি এখন জামিনে (!) মুক্ত। এই চিকিৎসক নিয়মিত কোলকাতায় যান, সেখানে তৃণমূলের অনেক নেতার সাথে তার দহরম মহরম! বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কান্ডে তার হাত থাকতে পারে বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দা অফিসারগণ।
সওকতের কথায়, রাজাবাড়ি-সুলতানগঞ্জ এলাকায় শুধু ‘মাল’ খালাস হয়। মূল কারবারটা হয় রাজশাহী শহরে। আর এ কারণেই বিএনপি কে নিয়ে রাজশাহী শহরের রাজনৈতিক দখল ধরে রাখতেও মরিয়া তাই জামায়াত। অভিযোগ, রাজশাহীর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা খরচ করে শরিক দল বিএনপি প্রার্থীকে জিতিয়ে এনেছে জামায়াত। তবে আওয়ামী লীগ’র প্রার্থীর অভিযোগ, ওই নির্বাচনে ভারতের ‘সারদা’র দেওয়া কোটি কোটি টাকা ঢেলেছে জামায়াত!
# আনন্দবাজার পত্রিকা
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ