আজ খুলনা প্রেস ক্লাবে ইনসিডিন বাংলাদেশ’র আয়োজনে শিশু সুরক্ষায় ‘শিশু আইন ২০১৩’ বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনের আহ্বান শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইনসিডিন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার কাজী শাহীন আখতার। সম্মেলনে শিশু সুরক্ষা ও উন্নয়নে স্থানীয় সরকারসহ সকলকে সক্রিয় ও ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
শিশুদের উপর ঘটতে থাকা শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে কাজী শাহীন আখতার বলেন, নির্যাতন শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করে। এ প্রসঙ্গে তিনি “মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এম জে এফ) ২০১৩ সালের এক জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন যে, গত বছর দেশজুড়ে ২৬৭জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ১২জন ও ২৩৯ জন শিশু গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। ১৬৬ জন শিশু বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করেছে এবং ২৬৪জন শিশুকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। ২০১৩ সালে শিশু অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ৯০টি। এর মধ্যে ২জন শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার শিশু সুরক্ষায় বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছে, যেমন- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, পর্ণগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২, পাচার দমন ও প্রতিরোধ আইন ২০১২ এবং শিশু আইন ২০১৩। এক্ষেত্রে শিশুদের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার ও নাগরিক সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করে, শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ভুমিকার বিষয়টি সামনে চলে আসে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সিটি কর্পোরেশন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী তথা প্রভাবশালী। নগরগুলোতে, নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন সিটি কর্পোরেশনের অংশগ্রহন ছাড়া প্রায় অসম্ভব। এক্ষেত্রে শিশুদের সুরক্ষা ও উন্নয়নে স্থানীয় সরকার বিশেষত সিটি কর্পোরেশন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারে।
তিনি বলেন, “শিশু আইন ২০১৩” এর কিছু বিশেষ দিক যেমন, প্রবেশন অফিসার, শিশুকল্যাণ বোর্ড, শিশুবিষয়ক ডেস্ক, শিশু আদালত ও রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার বন্ধে শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা করেন। “শিশু আইন ২০১৩” বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রয়োজন স্থানীয় সরকার বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সুস্পষ্ট দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা। আর এজন্য স্থানীয় সরকার সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে শিশুদের সুরক্ষায় বিশেষ কিছু কর্মসূচী গ্রহণ করতে পারে।
এ কর্মসূচীগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে – ওয়ার্ড পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে পথশিশু এবং যৌনশোষণের শিকার শিশুদের অধিকার রক্ষায় এবং উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করা, সিটি করপোরেশনের বর্তমান বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠাগুলোতে পথশিশু এবং যৌনশোষণের শিকার শিশুদের অভিগম্যতা নিশ্চিত করা, সিটি করপোরেশনের বার্ষিক বাজেটে পথশিশু এবং যৌনশোষণের শিকার শিশুদের রক্ষায় কর্মসূচিতে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, উন্ন্য়ন সংস্থা পরিবর্তন-খুলনা’র প্রশাসনিক কর্মকর্তা মেহেদী হাসান, প্রোগ্রাম অফিসার শেখ ইমরান ইমন ও মনজ দাস প্রমূখ। এছাড়া একই সময়ে পরিবর্তন-খুলনা’র প্রশিক্ষন কক্ষে একই বিষয়ে বিভিন্ন সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রশিক্ষন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ