কোটি কোটি টাকার নগদ আমদানীতে খুলনা জেলায় অপরাধের শীর্ষে মাদক !

খুলনা জেলায় অপরাধের শীর্ষে এখন মাদক সন্ত্রাস! প্রতিমাসে খুন, ধর্ষণ, ডাকাতী, অপহরণ, নারী নির্যাতন ইত্যাদি সব মিলে যতগুলি অপরাধ ঘটে তার চেয়ে বেশী সংখ্যক অপরাধ ঘটছে শুধু মাদক কে কেন্দ্র করে। এর অন্যতম কারণ মাদকের ব্যবসায় কোটি কোটি টাকার নগদ আমদানী। ফলে একমাত্র আগে থেকেই যে অপরাধ কে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব সেই মাদক সংক্রান্ত অপরাধই এখন হয়ে উঠেছে নিয়ন্ত্রন হীন। এ তথ্য জানা গেছে ক্ষোদ জেলার আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে।

রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্যমতে, গত ফেব্রুয়ারী মাসে খুলনা মহানগরীর আট থানায় বিভিন্ন অপরাধে মোট মামলা হয়েছে ১২৯টি, এর মধ্যে শুধু মাদক সংক্রান্ত মামলাই ৫৭টি। একই সময় জেলার নয়টি থানায় মোট মামলা হয়েছে ১৩২টি, যার মধ্যে মাদক মামলা ১২টি। এপ্রিল মাসে মহানগরীতে মোট মামলা হয়েছে ১৪৬টি, যার মধ্যে মাদক মামলাই ৬২টি। এ সময়ে জেলার নয় থানায় মামলা হয়েছে ১১৫টি, যার মধ্যে মাদক মামলা ২৪টি। এবং মে মাসে খুলনা মহানগরীতে মোট মামলা হয়েছে ১৫৩টি, যার মধ্যে মাদকের মামলাই ৫৭টি। এ সময় জেলায় মোট মামলা হয়েছে ১৬০টি, যার ৩৬টিই মাদকের মামলা।

উল্লেখ্য, একমাত্র মাদক ব্যবসা ও এর ব্যবহার প্রতিরোধে কাজ করছে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল, অর্থাৎ জেলা ও মেট্রো পুলিশ, আনসার, গোয়েন্দা পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর, বিজিবি সহ অন্যান্ন বাহিনী। আর এদের উপর টেক্কাদিয়ে সকল অপরাধের শীর্ষে এখন মাদক।

জেলার নয়টি উপজেলা থেকে সূত্র জানিয়েছে, উপজেলার গ্রামে গ্রামে এখন ফেন্সিডিল, হেরইন, ইয়াবা সহ বিভিন্ন মাদকের জমজমাট ব্যবসা চলছে। আর এ ব্যবসাকে প্রত্যক্ষ ভাবে মদত দিচ্ছে ক্ষমতাসিন দলের এক শ্রেনীর তথাকথিত নেতা ও প্রশাসনের বিপথগামী কিছু সদস্য, যাদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে মাদকের সিন্ডিকেট।

মাদক সেবনকারীর পরিবারের সদস্য রূপসার কাজদিয়ার আব্দুল জলিল, বটিয়াঘাটার রমেশ গাইন ও ফুলতলার সিদ্দিপাশার মুক্তার বলেন, তাদের পরিবার সহ গ্রামের শত শত পরিবার এখন মাদকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। পরিবারের অল্প বয়স্ক সদস্যরা মাদক সেবন করে বেপরওয়া হয়ে উঠছে এবং জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে। তাদের দাবি, প্রশাসনের একশ্রেনীর বিপথগামী সদস্যদের মদতের ফলে উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না মাদক ব্যবসায়ীদের বরং প্রতিনিয়ত তারা আরও শক্তিশালী হচ্ছে। তাদের দাবি এখনই মাদকের বিস্তার রোধ করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে গোটা সমাজই মাদকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়বে এবং প্রতিনিয়ত জন্ম হতে থাকবে নতুন নতুন অপরাধীদের।

মাদকের সর্বগ্রসী বিস্তার এবং তা রোধের উপায়ে দায়িত্বশীলদের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে, খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা অঞ্চলের উপ-পরিচালক পারভীন আখতার বলেন, তাদের প্রচেষ্টার ঘাটতি নেই। তিনি বলেন, তাদের লোকবল প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম, এবং লজিস্টিক সাপোর্ট নেই বললেই চলে। তার পরও দপ্তরের লোকেরা কর্মে আন্তরিক। তবে এটি এখন একটি জাতিয় সমস্যা, তাই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া ভালো কিছু ফল লাভ সম্ভব নয়।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের একাধিক অফিসার বলেন, সর্ষের মধ্যেই ভূত আছে, তাই সবার আগে সর্ষের ভূত তাড়াতে হবে, অন্যথায় সর্ষের ভূত এক সময় দানব হয়ে উঠবে, যার লক্ষণ ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে!

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *