খুলনা মহানগরীতে ব্যাটারী চালিত যানবাহন অবৈধ ইজিবাইক ও ইঞ্জিনরিক্সার কারণে আসন্ন গরমে লোডশেডিং’র আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। যার অলামত ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে নগরীতে। কারণ প্রয়োজনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী এই অবৈধ যানবাহন সচল রাখতে প্রতিদিনে প্রয়োজন প্রায় সাড়ে ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ! যা আসলে মাসে ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী ২১৫০টি পরিবারের এক মাসের ব্যবহৃত বিদ্যুতের সমান!
খুলনা মহানগরীতে ব্যাটারী চালিত যানবাহনের সংখ্যা কত, প্রকৃত পক্ষে এর কোন খতিয়ান সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) বা খুলনা সিটি কর্পোরেশন কারো কাছেই নেই! এ বিষয়ে নগরীর ৫০ জনের অধিক ইজিবাইক চালকের উপর এক জরিপ অনুযায়ী নগরীতে বর্তমানে চলাচলকারী ইজিবাইকের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার! যা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের এ বক্তব্য মৌখিক ভাবে সমর্থন করেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স বিভাগের একজন অফিসার।
ইজিবাইক চালক এবং ইজিবাইক’র ব্যাটারী চার্জ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য অনুযায়ী প্রতিদিন নতুন গাড়ীর ব্যাটারী চার্জ দিতে প্রয়োজন হয় গড়ে ১২ ইউনিট বিদ্যুৎ, এবং পুরাতন গাড়ীর ব্যাটারী চার্জ দিতে (দুইবার) প্রয়োজন হয় গড়ে ১৪ ইউনিট বিদ্যুৎ। ইজিবাইক চালকদের বক্তব্য অনুযায়ী নগরীর ৩০ হাজার ইজিবাইকের মধ্যে ২৫ হাজারই পুরাতন। সে হিসেবে ২৫ হাজারই পুরাতন ইজিবাইক চার্জদিতে প্রতিদিন প্রয়োজন ৩ লাখ ৫০ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ এবং পাঁচ হাজার নতুন ইজবাইক চার্জদিতে প্রয়োজন ৭০ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ।
অন্যদিকে, ইঞ্জিনরিক্সা চালকদের বক্তব্য অনুযায়ী নগরীতে বর্তমানে পাঁচ হাজারের অধিক ইঞ্জিনরিক্সা চলাচল করে, এবং প্রতিদিন একটি ইঞ্জিনরিক্সা চার্জ দিতে প্রয়োজন হয় ২ ইউনিট বিদ্যুৎ। সে হিসেবে পাঁচ হাজার ইঞ্জিনরিক্সা চার্জ দিতে লাগে ১০ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ। অর্থাৎ ইজিবাইক এবং ইঞ্জিনরিক্সা মিলে প্রয়োজন প্রায় হয় ৪ লাখ ৩০ হাজার ইউনিট বা সাড়ে ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
খুলনা মহানগরীতে প্রতিদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানীর ডেসপ্যাচ থেকে জানানো হয়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারী এ অঞ্চলের ১৬ টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ভারত-বাংলাদেশ সরবরাহ কেন্দ্র থেকে পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় ১১২১ মেগাওয়াট এবং ১৯ ফেব্রুয়ারী পাওয়া যায় ১০৪৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, যার মধ্যে শুধু ভারত-বাংলাদেশ সরবরাহ কেন্দ্র থেকেই প্রতিদিন পাওয়া যায় ৪৫০ মেগাওয়াট’র অধিক বিদ্যুৎ। ডেসপ্যাচ থেকে আরও বলা হয় যে, গরমকাল শুরু হওয়ায় ইতি মধ্যেই কিছু কিছু লোডশেডিং হচ্ছে যা আগামীতে বৃদ্ধি পেতে পারে যদি অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার হয়।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন সূত্রমতে, নগরীতে মোট সড়কের সংখ্যা ১২১৫ টি যার মোট দৈর্ঘ্য ৬৪০ কিলোমিটার এবং এই আয়োতনের সড়কের ধারন ক্ষমতা হ’ল সর্বোচ্চ ১০ হাজার রিক্সা এবং দুই থেকে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার ইজিবাইক। সূত্র আরও জানায়, ইজিবাইক চালু হওয়ার ফলে প্যাডেল রিক্সার সংখা কমেছে। বিগত বছরে প্রায় আট হাজার প্যাডেল রিক্সার লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে এবং ব্যাটারী চালিত ইঞ্জিনরিক্সা অবৈধ ঘোষণা করে কোন লাইসেন্স প্রদান করা হয় নি।
কিন্তু নগরীতে উল্লিখিত চিত্রের বিপরীতে যানবাহনের প্রকৃত সংখ্যা হ’ল ৩০ হাজার ইজিবাইক, আট হাজার প্যাডেল রিক্সা এবং পাঁচ হাজার ইঞ্জিন রিক্সা, যার মধ্যে ইজিবাইক এবং ইঞ্জিনরক্সার কোন লাইসেন্স না থাকায় এগুলি সম্পূর্ণ অবৈধ!
তবে এ সকল বিষয় নিয়ে আদৌ মাথাব্যাথা নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) বা খুলনা সিটি কর্পোরেশনের। উভয়েই বলছে ব্যাটারী চালিত যানবাহনের লাইসেন্স প্রদানের দায়িত্ব তাদের নয়। বিআরটিএ শুধু ইঞ্জিন চালিত যানবাহনের লাইসেন্স প্রদান করে।
আসলে ব্যাটারীতে কি কোন গাড়ী চলে ? প্রকৃত পক্ষে ইজিবাইক এবং ইঞ্জিনরিক্সা উভয়ই ইঞ্জিন চালিত গাড়ি যার ইঞ্জিন ব্যাটারীর শক্তি ব্যবহার করে চালানো হয়। তা হ’লে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ কেন তাদের লাইসেন্স প্রদান করছে না তা কারো জানা নেই। আর এ সকল যুক্তি-তর্কের মধ্যদিয়ে গড়িয়েছে বেলা অনেকই, তবে কর্তৃপক্ষ এখনও বলে চলেছে দেখিনা কি হয়!
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ