খুলনা মহানগরীর গল্লামারী ময়ূরনদীর পাড়ে বহু প্রতিক্ষিত লিনিয়ার পার্ক’র নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর অবশেষে তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পার্ক কোথায় ? এ যেন পোড় (পরিত্যাক্ত) বাড়ির মত এক পোড় পার্ক! সর্বত্র অযত্ন আর অসম্পূর্ণ কর্মকান্ডের ছড়াছড়ি। টাওয়ারের প্রবেশদ্বার কাঁটাওয়ালা ডাল দিয়ে রুদ্ধ। একমাত্র বাঘ টি এবং অসম্পূর্ণ অচল ফোয়ারর হরিণটিও কাঁটাডাল দিয়ে ঢাকা। এখানে প্রবেশ কি নিষিদ্ধ? তবে কর্তৃপক্ষে জানিয়েছে ২২ কোটি টাকার লিনিয়ার পার্কের নির্মাণ কাজ শেষ এবং জনসাধারনের জন্য তা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে, একই সাথে পার্কটি প্রাইভেট কোম্পানীর কাছে লীজ দেওয়ারও চেষ্টা চলছে।
সূত্রমতে, ২০০৮ সালের জুলাই মাসে গল্লামারীর ময়ূরনদীর পাড়ে ২২ একর জমির উপর ১৯ কোটি টাকায় গল্লামারী লিনিয়ার পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে প্রকল্প ব্যয় ১৯ কোটি থেকে বেড়ে ২২ কোটিতে পৌঁছালেও পার্কের আয়োতন ২২ একর থেকে কমে দাড়ায় ১৪.০০৭ একরে।
সূত্র আরও জানায়, জমি অধিগ্রহণ বাবাদ ব্যয় হয় ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। বাকী টাকায় ভূমি উন্নয়নের কাজ সহ যে সকল কাজ করার কথা তার মধ্যে আছে অভ্যন্তরিন এ্যাপ্রোচ রোড, অফিস ও সিকিউরিটি শেড, ময়ূরনদীর পাড়ে দুইটি আরসিসি ঘাট, ১০ টি আম্ব্রেলা শেড, দুইটি পিকনিক শেড, রেস্টুরেন্ট, একটি অবজার্ভেশন টাওয়ার, পাবলিক টয়লেট, প্লান্টেশন এবং বিউটিফিকেশন বা সৌন্দর্যায়ন। ২০১৩ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে পার্কটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে শুরুতে জানানো হয়।
গতকাল পার্কটির বর্তমান অবস্থা পরিদর্শন করতে গিয়ে বিস্মিত হতে হয়। বলা হয়েছে যে, পার্কটি জনসাধারণের জন্য এখন উন্মুক্ত, কিন্তু পার্কে ঢুকার মুখে গেট পর্যন্ত একটি আস্ত (বাজারের) ময়লার ভাগাড়। ভিতরে ঢুকতেই ডানদিকে অসমাপ্ত ভাঙাচোরা ফোয়ারা যাতে পানি নেই, তার মধ্যে একটি হরিনের মূর্তি কুলের ডাল দিয়ে ঢেকে রাখা। কোথাও বাগান, সৌন্দর্যায়ন বা বিউটিফিকেশন ও প্লান্টেশনের কোন চিহ্ন নেই। পার্কের অভ্যন্তরে অবজারভেশন টাওয়ারের পাশেই একটি ঝুপড়ি ঘর যেখানে এখনও একটি পরিবার তাদের মুরগী, কবুতর ইত্যাদি নিয়ে বসবাসরত। তবে দুটি মেরী গো রাউন্ড বসানো হয়েছে যা বর্তমানে বন্ধ। পরিচ্ছন্নতা যদি হয় সভ্যতার মাপকাঠি তবে পার্কটির বর্তমান অবস্থা ঠিক তার বিপরিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, লিনিয়ার পার্ক প্রকল্পটির প্রাক্কলিত মূল্য ছিলো ২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যার মধ্যে ২০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা খরচ করে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে এবং পার্কটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে নগর এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প ( সিআরডিপি) ময়ূরনদীর পাড়ে পার্ক এলাকায় একটি ওয়াক ওয়ে, দুটি ওয়াকিং ব্রীজ, ডেক, নদীতে নামার শিড়ি ইত্যাদি নির্মাণ করছে যা উল্লিখিত লিনিয়ার পার্ক প্রকল্পের অংশ নয়। সূত্র আরও জানায়, জনবলের অভাবে পার্কটি বর্তমানে পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষণ অসম্ভব হয়ে পড়ছে। সমগ্র পার্কটি মাত্র একজন প্রহরির তত্ত্বাবধানে আছে। এমতাবস্থায় পার্কটি প্রাইভেট কোম্পানীর নিকট লীজ প্রদানের প্রক্রিয়া চলছে।
এভাবেই শেষ হয়েছে খুলনাবাসির বহু প্রতিক্ষিত স্বপ্নের বিপরিত এক লিনিয়ার পার্ক’র বিনির্মাণ!








সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ