ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫ বাস্তবায়ন বিষয়ক দিনব্যাপী বিভাগীয় কর্মশালা গতকাল খুলনা সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগ এবং বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল এ কর্মশালার আয়োজন করে।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় খুলনা অতিরিক্ত বিভাগীয় কশিনার মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, আইনটি বাস্তবায়নে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ব্যাপক জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। তামাকের কুফল সম্পর্কে এখন জনগণ আগের চেয়ে অনেক সচেতন। এ ব্যাপারে আরও সচেতনতা বাড়াতে তামাকের কুফল সম্পকির্ত ভিডিও চিত্র দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে তুলে ধরার প্রতি তিনি গুরুত্বারোপ করেন। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আইনটি কার্যকরে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।

খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. মোঃ মাসুম আলী’র সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস এবং স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মোঃ হাবিবুল হক খান। স্বাগত বক্তৃতা করেন খুলনা সিভিল সার্জন ডা. মোঃ রফিকুল ইসলাম। যুগ্ম সচিব এবং প্রোগ্রাম অফিসার পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তামাকের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

কর্মশালায় জানান হয়, দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৩.৩ শতাংশ অর্থাৎ চার কোটি ১৩ লাখ লোক কোন না কোন ভাবে তামাক ব্যবহার করছেন। ৬৩ শতাংশ লোক কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। তামাক ব্যাহারের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩০ বছরের বেশি বয়স্ক জনগোষ্ঠির মধ্যে ৫৭ হাজার মৃত্যুবরণ করেন এবং তিন লাখ ৮২ হাজার জন পঙ্গুত্ববরণ করেন। বিশ্বের ১৫টি দেশে তামাকের ভয়াবহতা বেশি, এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে অষ্টম। পৃথিবীতে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান আটটি কারণের ছয়টিই তামাক ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত। তামাক ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাবসমূহের মধ্যে হৃদরোগ, মস্তিষ্কে স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যান্সার ও যক্ষ্মা, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, হাঁপানি, মুখেরসহ খাদ্যনালীর ক্যান্সার, কম ওজন সম্পন্ন শিশুর জন্ম এবং গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু অন্যতম। তামাক এবং বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়ায় সাত হাজারের বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যার মধ্যে ৭০টি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ সরাসরি ক্যান্সার সৃষ্টিতে সক্ষম।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বলবৎ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে পাবলিক প্লেসে এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ। আইন অমান্যে অনধিক তিনশ টাকা অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়াও ১৮ বছরের কমবয়সী কারো কাছে তামাকজাত দ্রব্য বিপণন বা বিক্রয় নিষিদ্ধ, আইন অমান্যে অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ড।

অংশগ্রহণকারী অন্যান্য বক্তারা তামাকের কুফলসমূহ তুলে ধরে ব্যাপক প্রচারনা চালানো, আইনের কঠোর প্রয়োগ তথা জরিমানার পাশাপাশি কারাদন্ড প্রদান, পর্যায়ক্রমে তামাক চাষ বন্ধ করা, তামাক চাষীদের মোটিভেশন করে অন্য কৃষিপণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করা এবং যত্রতত্র বিড়ি-সিগারেট বিক্রি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করেন। তারা এ বিষয়টি সকল পর্যায়ের পাঠ্য পুস্তকে অন্তর্ভূক্তি এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের আরও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।

কর্মশালায় খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ের অফিসার, পুলিশ বিভাগ, সকল জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *