শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ঔপনিবেশিক ধারার শিক্ষার পরিবর্তে আধুনিক ধারার জ্ঞানমুখী শিক্ষা চালু করতে হবে। নতুন নতুন গবেষণা, জ্ঞান চর্চা না হলে আধুনিক বিশ্বের সাথে তালমেলানো যাবে না, বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে যাতে তারা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে পারে, ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দিতে পারে। তিনি আজ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত নবাগত শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন ও নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ সকল কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে গৌরবময় উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, সুষ্ঠু পরিবেশে গত ২৫ বছর পার করে এই বিশ্ববিদ্যালয় মাইলফলক হিসেবে স্বাক্ষর রেখেছে। তিনি কেন্দ্রীয়ভাবে এবার ওরিয়েন্টেশন ও নবীনবরণের আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন একসাথে হওয়ার উপলব্ধিই আলাদা, এক সাথে হলে, থাকলে সাহস, শক্তি ও প্রেরণা তৈরি হয়।
তিনি দেশের সকল স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিতরূপকে শিক্ষা পরিবার হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ এ পরিবারের সদস্য এবং এটাই দেশের সবচেয়ে বড় অংশ। তিনি বলেন সবার জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ জগতে কোথাও নেই। সব স্থানেই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এ সুযোগ লাভ করতে হয়। তবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক কাঠামো ও সম্পদের তুলনায় এ সুযোগ অনেক বেশি আছে। তিনি বলেন, কেবল উচ্চশিক্ষায় ডিগ্রি নিলেই বা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিতের হার বড়লেই দেশের অগ্রগতি সাধিত হবে তেমনটি নয়। উচ্চশিক্ষায় গবেষণা ও প্রযুক্তি দরকার, নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি দরকার। আমাদের কারিগরি শিক্ষার হারে বাড়ানো দরকার।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে শতভাগ স্বাধীনতা ভোগ করছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়েরও জাতির কাছে দায়বদ্ধতা আছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মাস্টার প্লান প্রণয়ন এবং এভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, সমাজ পরিবর্তনে উন্নত স্তরে পৌঁছানোর সবচেয়ে বড় হাতিয়ার জ্ঞান ও প্রযুক্তি। নতুন প্রজন্মকে সে শিক্ষায় দক্ষ করতে পারলে দেশ ও জাতি সমৃদ্ধ হবে। এ দায়িত্ব শিক্ষকদের। তিনি বলেন, শিক্ষকরাই হচ্ছেন জাতির সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সম্পদ, সমাজ পরিবর্তনের আদর্শ জাতি গঠনের নিয়মক শক্তি। শিক্ষকদের মর্যাদা দিতে না পারলে সে জাতি এগোতে পারবে না। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন কাঠামো প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমান সরকার সব সময়ই শিক্ষকদের মর্যাদার আসনে রাখতে সচেষ্ট। প্রধানমন্ত্রীও আন্তরিক। আশাকরি খুব শিঘ্রি একটি সুন্দর ও সম্মানজনক সমাধান হবে।
উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, যে বিশ্ববিদ্যায়ের ক্যাম্পাসে গত ২৫ বছরে কোনো সংঘর্ষে কোনো ছাত্রের প্রাণহানি ঘটেনি। এমনকি নিজেদের মধ্যেও হানাহানি হয়নি। তিনি বলেন, সীমিত সম্পদের মধ্যেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে তার শিক্ষাকার্যক্রম সম্পন্ন করছে। তবে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত ল্যাব ও ফান্ড প্রয়োজন। তিনি বলেন আমাদের ছাত্ররা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মেধা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছে। হেকেপ প্রকল্প বাস্তবায়নে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় একাত্তরের বধ্যভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের দায়িত্ব আরও বেশি। তিনি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যা গিং এর ভয়াবহ অবস্থার কথা তুলে ধরে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা এই অপসংস্কৃতি থেকে দূরে থাকবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথা অনুযায়ী নবাগত শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ট্রেজারার খান আতিয়ার রহমান, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ ইসমত কাদির, জীব বিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ নাজমুল আহসান, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক মোঃ এনামুল হক, সিনিয়র শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ডিসিপ্লিনের ছাত্রী রহিমা আক্তার বিথী, নবীনদের পক্ষ থেকে সিএসই ডিসিপ্লিনের শেখ সোহেল। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি স্কুল ও একটি ইনস্টিটিউটের ডিন ও পরিচালকগণ স্ব স্ব স্কুল ও ইনস্টিটিউটের নবাগত শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। অনুষ্ঠানে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষামন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম খচিত একটি ক্রেস্ট উপহার দেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা আন্দোলনের মাস হিসেবে ভাষা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছাড়াও কুয়েটের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলমগীর, খুবির সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ সাইফুদ্দিন শাহসহ বিভিন্ন ডিসিপ্লিন ও বিভাগীয় প্রধান এবং শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে উন্মুক্ত মঞ্চে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ