খুলনার তেরখাদা উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা বানানোর যেন হিড়িক পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে এর জন্য চলছে লাখ লাখ টাকার লেনদেন। নেওয়া হচ্ছে ৫ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। এমনকি যারা স্বাক্ষী হচ্ছেন তারাও নেমেছে অর্থ বাণিজ্যে।
৯১ জন মুক্তিযোদ্ধার স্থলে শেষ গেজেটে নাম এসেছে ৪৬২ জনের। আবেদন পড়েছে আরও ৬০০ জনের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। আজ বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল জলিল শেখ।
লিখিত বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল জলিল শেখ বলেন, বাংলাদেশে জাতির সূর্য্য সন্তানেরা হলেন বীর মুক্তিযাদ্ধারা। যারা নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে, পারিবার পরিজনদের আগুনের মুখে রেখে ১৯৭১ সালে গিয়েছিলেন রণাঙ্গানে। কখনো ভাবেননি জীবনের বিনিময়ে কোনো কিছু পাবেন। তখন লক্ষ্য একটাই ছিল মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করা। চলে আসা শাসনের নামে শোষণের খগড় থেকে পরিত্রাণ পাওয়া। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যদের দিকেও। আর এই সুযোগ নিতে মরিয়া এক শ্রেণীর অতিলোভী মানুষ। অভিযোগ উঠেছে উপঢৌকনের বিনিমিয়ে সুযোগটি দিতে কৌশুলী সংশ্লিষ্টরাও।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে তেরখাদা উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল জলিল শেখের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে ৯১ জন অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও তেরখাদা উপজেলার বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা অন্যান্য এলাকায় যুদ্ধ করলেও তার সঠিক হিসাব নেই। যুদ্ধের পর অনেক মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল ওসমানীর স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে উপজেলায় নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা অর্ন্তভুক্তির লক্ষ্যে যাচাই-বাছাই চলছে। এই যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খান মোহাম্মাদ আলী ও সদস্য রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী আবুল খায়ের।
তিনি আরও বলেন, আজ কতিপয় অর্থলোলুপ অসাধু অমুক্তিযোদ্ধার কারণে ভুলুন্ঠিত হচ্ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সুনাম। তেরখাদা উপজেলায় এই চক্রটি অসৎ উপায়ে নিজের আখের গোছানোর মধ্য দিয়ে অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধার শেষ গেজেট অনুযায়ী সংখ্যা ৪৬২ জন। তবে তেরখাদা উপজেলায় নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অর্ন্তভুক্তির লক্ষ্যে ৬০০ ব্যক্তি আবেদন করেছেন। যাচাই-বাছাই কাজে নিয়োজিত কমিটির সভাপতি খান মোহাম্মাদ আলী ও সদস্য চৌধুরী আবুল খায়ের অমুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় অর্ন্তভুক্তির জন্য অর্থ বাণিজ্যে লিপ্ত রয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা আবেদনকারীর নিকট হতে সর্বনিম্ন ৫ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকার চুক্তি করা হচ্ছে। এছাড়া নতুন আবেদনকারীদের স্বাক্ষী যারা দিচ্ছেন তারা সমান তালে অর্থ বাণিজ্য করছেন। এনিয়ে সোস্যাল মিডিয়াতে বিষয়টি উঠেছে।
এ ব্যাপারে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য চৌধুরী আবুল খায়েরের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেলেও কমিটির সভাপতি খান মোহাম্মাদ আলী সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা যদি কোনো অমুক্তিযোদ্ধাকে অর্থের বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর চেষ্টা করি তাহলে প্রমাণ করুক। তিনি আরো বলেন, তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি করার জন্য সরকার ২০১৪ সালে অনলাইনে আবেদন চেয়েছিলো। ২০১৭ সালে যাচাই-বাছাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা করানে এখনো হয়নি।
কমিটির সদস্য সচিব তেরখাদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘৭০০ জনের উপরে আবেদন পড়েছিলো। অনেকে সাক্ষাৎকার টেবিলে আসেননি। তাই এখন এই তালিকায় প্রায় ৬০০ জনের নাম রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য সম্মান জানাতে। তবে অর্থ লেনদেনের কোনো অভিযোগ আমি পাইনি।’
উল্লেখ্য এবিষয়ে ইতিপূর্বে মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রী, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও তেরখাদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এমনকি হাইকোর্ট একটি রিটও করা রয়েছে; যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ