শিক্ষকদের গবেষণায় আরও মনোযোগী হওয়ার আহবান জানালেন শিক্ষামন্ত্রী

আজ ২ জুন ২০২২, বিকাল ৩.৩০টায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রকল্প গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে রাজশাহীর শহিদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান মিলনায়তনে ‘গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সের অষ্টম ব্যাচের সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রশিক্ষণ কোর্সটি পরিচালিত হচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহী’র সহযোগীতায়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, এমপি। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণহত্যা জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। স্বাগত বক্তব্য রেখেছেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি ড. মো. মাহবুবর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহী’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ড. চৌধুরী শহীদ কাদের।

খুলনাস্থ ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’র অন্তর্গত গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে নিয়মিত দেশের বিভিন্ন জেলাতে পোস্ট-র্গ্যাজুয়েট ট্রেনিং [পিজিটি] কোর্স পরিচালিত হয়। পদ্ধতিমাফিক গবেষণার মাধ্যমে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সারাদেশ থেকে তুলে আনা ও ছড়িয়ে দেয়াটা এই প্রশিক্ষণ কোর্সের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

প্রশিক্ষিত গবেষকরা সারাদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের নানা অজানা ভাষ্য ও ইতিহাসকে তুলে আনেন। গবেষক তৈরি করার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার ইতিহাস জনমানুষের মুখ থেকে তুলে নিয়ে আসা হবে এবং এই প্রশিক্ষণে স্থানীয় গবেষকদের অংশগ্রহণ মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস ছড়িয়ে পড়বে সর্বস্তরে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এমন নানা সৃজনশীল উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তাকে গণহত্যা জাদুঘর সর্বদা স্বীকার করে, এবং সে লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, যশোর, খুলনাসহ ৭টি বিভাগে এই প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালিত হয়। দেশ বরেণ্য গবেষক, শিক্ষক, ইতিহাসবিদ ও সাংবাদিক এই কোর্সে প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন। রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিকরা এতে যোগ দিচ্ছেন। প্রশিক্ষণ কোর্সের আওতায় মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, গণহত্যা, গবেষণা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। লেকচার, প্রশ্নোত্তর, ক্রিটিক্যাল থিংকিং, মুক্ত-আলোচনা ও মাঠ-পর্যায়ের গবেষণাভিত্তিক থিসিস’র মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কেবল রাজধানীমুখী বা কেন্দ্রমুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার যে প্রবণতা গণহত্যা জাদুঘরের প্রতিষ্ঠার ধরনই সেই প্রবণতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এই জাদুঘর গড়ে উঠেছে ঢাকা থেকে অনেক দূরে বাংলার দক্ষিণাঞ্চলের শহর খুলনাতে। তিনি প্রশিক্ষণ কোর্সের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, গণহত্যার জাদুঘরের অজস্র কর্মকান্ডের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে দেশব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কোর্স (পিজিটি কোর্স) চালু করা। গণহত্যা জাদুঘর কেবল গণহত্যার নিদর্শন ও ইতিহাস সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ করে রাখেনি। তারা গবেষণা করার পাশাপাশি গবেষক তুলে আনার প্রক্রিয়াও গ্রহণ করেছে। এই যে প্রশিক্ষণ কোর্স তার ফল ও প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে বাধ্য। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, গবেষক তৈরির এই উদ্যোগ বাংলাদেশের সামাজিক ইতিহাসের মানচিত্রই বদলে দিবে। ইতিহাসচর্চারও বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে গিয়েছে, বা যাচ্ছে। তিনি শিক্ষকদের গবেষণায় আরও মনোযোগী হওয়ার আহবান জানান।

মুনতাসীর মামুন বলেন, গণহত্যা জাদুঘর পরিচালিত গণহত্যার জেলা জরিপ ইতিমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের পুরো ইতিহাসের বয়ানকেই পালটে দিচ্ছে। এই ধরনের প্রশিক্ষণ কোর্স একেবারে প্রান্তিক পর্যায় থেকে গবেষকদের তুলে নিয়ে আসছে। তাদেরকে পদ্ধতিগতভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা এখন ছড়িয়ে পড়বেন গ্রামে গ্রামে। সবাই থিসিস জমা দিচ্ছেন নতুন নতুন গণহত্যার ওপর। এভাবে গণহত্যার এমন সব ঘটনা উঠে আসছে যার স¤পর্কে আমরা কিছুই জানতাম না। এই ধরনের নতুন নতুন উদ্যোগ যত বেশি হবে, ইতিহাস বিকৃতি তত কমবে। সা¤প্রদায়িকতার ছোবল কমবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও ছড়িয়ে পড়বে।

বক্তারা গণহত্যা জাদুঘরের বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তারা উপস্থিত প্রশিক্ষণার্থীদের ভবিষ্যৎ গবেষণা কর্মের জন্য শুভেচ্ছা বার্তা দেন।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *