দোজখের করিডোর। কোরিডোরের ওপারেই মাদকের স্বর্গরাজ্য গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল, বাংলাদেশের সর্বনাশ। বাংলাদেশের বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রি প্রাণসা ইউনিয়নের বাংলাদেশ-মায়ানমার (বার্মা) সীমান্তের (করিডোর) ওপারে মায়ানমারের রাখাইন স্টেট এই মাদক স্বর্গের কেন্দ্র।
বিগত দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে এই গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে শ্রোতের মত ইয়াবা, হেরোইন, ক্রিস্টাল মেটাফেটামিন’র মত ভয়ঙ্কর মাদক, যাতে আজ সয়লাব দেশের শহর-বন্দর-গ্রামের আনাচ-কানাচ! এই অন্ধকারের মাদক ব্যবসায়ীরাই আবার দিনের আলোয় রাজনীতির মন্ত্রি-এমপি-চেয়ারম্যান-মেম্বর, সরকারের পরিচালক। মাদকের বিষাক্ত ছোবলে আজ ছাত্রসমাজ সহ কোটি কোটি যুবক বিভ্রান্ত-উন্মাদ-হতাশ, অসুস্থ হয়ে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ধুকে ধুকে মরছে হাজার হাজার মানুষ। আর এই মাদকাসক্তদের জীবনের বিনিময়ে মাদক কারবারী ও তাদের সাহায্যকারীরা গড়ে তুলছে হাজার-লক্ষ কোটি টাকার অবৈধ বিত্ত-বৈভবের পাহাড়। জাতিসংঘ মাদক ও অপরাধ সংস্থা (United Nation Drug and Crime Department)’র হিসাব মতে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল থেকে রাখাইন করিডোর হয়ে বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার মাদক আসে বাংলাদেশে!
গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল’র পূর্বাপর ইতিহাস ঃ আফিম যুদ্ধ- চীনের সাথে ইউরোপীয়দের ব্যবসায়ের মূল্য পরিশোধের মাধ্যম ছিলো রূপা। স্পেনীয় ও ইংরেজরা আমেরিকা দখল করলে ইউরোপে রূপার শ্রোত বইতে থাকে। পরে আমেরিকার স্বাধীনতা এবং স্পেনের সাথে আমেরিকার যুদ্ধ শুরু হলে সেই শ্রোত বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে চীন থেকে সিল্ক, চা ও বিভিন্ন বিলাসদ্রব্য আমদানী করতো ইউরোপ ও আমেরিকা , যার তুলোনায় চীনের আমদানী ছিলো সামান্য। ফলে বানিজ্য ভারসাম্য সব সময়ই ছিলো চীনের অনুকূলে। তাই ইউরোপের রূপা সব জমা হচ্ছিলো চীনের গুদামে। আমেরিকার রূপা বন্ধ হয়ে গেলে ইউরোপ বিশেষ করে বৃটেন চীনা বানিজ্যের দাম মেটাতে হিমসিম খেয়ে যায়। এ অবস্থায় বৃটেন রূপার বিকল্প খুঁজতে থাকে এবং কালোবাজারে চীনে অফিম বিক্রি করে চীন থেকেই সেই রূপা সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এখানে বৃটেন বলতে মূলত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী।
কোম্পানীর আফিমের সরবরাহ সম্পর্কে জনৈক ভারতীয় এজেন্ট’র মন্তব্যঃ কোম্পানীর অধীন সমস্ত অঞ্চলে নীলামে বিক্রি হওয়ার আগ পর্যন্ত আফিমের উৎপাদন, প্রস্তুতি এবং ব্যবসা কঠোর ভাবে কোম্পানীর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রিত। এর উৎপাদন বাধ্যতামূলক। বাংলা, বিহার, বেনারস ও উত্তর ভারতের শ্রেষ্ঠ ও বিস্তৃত জমি ছেয়ে আছে আফিম গাছে এবং খাদ্য ও অথবা বস্ত্রের জন্য যুগ যুগ ধরে উৎপাদিত অন্যান্য গাছ প্রায় বিতাড়িত (এস, ওয়েলস, উইলিয়ামস’র “ দ্য মিডল কিংডম”।)
১৭৮১ সালে সংঘবদ্ধ প্রস্তুতির পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ভারতীয় অফিসের প্রথম আফিমের বড় চালান পাঠায় চীনে, যা সেখানে আগে স্বল্প পরিচিত পণ্য। এর পরে এ ব্যবসা শনৈঃ শনৈঃ বাড়তে থাকে। সহসা আমদানীকৃত আফিমের বিনিময়ে চীনের রপ্তানীকৃত চা, সিল্ক ও অন্যান্য পণ্যের জন্য মূল্য বাবদ রূপা প্রদান করার পর আরও রূপা চীনের ভান্ডার থেকে কোম্পানীর ভান্ডারে জমা হতে থাকে।
আফিমের শারীরিক এবং অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়ায় মারাত্মক ভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে ১৮০০ সালে স¤্রাট চিয়া চিং আফিম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এতদিনে লাখ লাখ মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং বহু মাদক ব্যবসায়ী ও রাজকর্মচারী এই ব্যবসার অংশিদারিত্বের মুনাফার ফলে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সুতরাং চোরাচালান আর ঘুষ নিষেধাজ্ঞাকে অকার্যকর করে দেয়।
১৮০০ সালে আফিমের বাৎসরিক আমদানী ২০০০ পেটি (১ পেটিতে ১৬০ পাউন্ড) বা ১ লাখ ৪৫ হাজার কেজি থেকে বেড়ে ১৮৩৮ সালে দাড়ায় ৪০ হাজার পেটি বা ২৯ লাখ কেজি। উল্লেখ্য, মার্কিন জাহাজগুলি প্রথম থেকেই এই ঘৃণ্য ব্যবসায় বৃটিশ জাহাজের সাথে যোগ দেয়। ভারতীয় আফিমের ভর্তুকি হিসেবে তারা নিয়ে আসে তুর্কি আফিম ( স্মার্না থেকে বোঝাই করে)। এভাবেই বহু ব্যবসায়ী সৌভাগ্য গড়ে ওঠে, যা পরবর্তীতে মার্কিন শিল্প উন্নয়নের ভিত্তি তৈরী করে।
চীন থেকে রূপার নির্গমন ব্যাপকহারে বেড়ে যায়। একমাত্র ১৮৩২-৩৫ সময়কালে আফিমের দাম মেটাতে ২০ মিলিয়ন আউন্স (৫৭০ টন) রূপা বিদেশে চলে যায়। দেশে মুদ্রাস্ফিতি বৃদ্ধি পায়। ফসলের দাম পড়ে যাওয়ায় বোঝা চাপে কৃষকের ঘাড়ে, এবং ভূস্বামী ও খাজনা আদায়কারীরা ফসলে আরও বেশী ভাগ বসায় যাতে রূপার হিসেবে তাদের আয় আগের মতই থাকে। কৃষকরা এই চাপ সহ্য করতে না পেরে বিদ্রোহের পথ বেছে নেয়। ১৮১০ সাল থেকে মাঞ্চু রাজবংশের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভ্যুত্থান ঘটতে থাকে। ১৮১৩ সালে একদল বিদ্রোহী খোদ বেইজিং’র রাজপ্রাসাদে ঢুকে পড়ে।
আত্মরক্ষার্থে বেইজিং’র ছিং (মাঞ্চু) শাসকদের ব্যবস্থা নিতে হয়। আফিম ব্যবসা নিষিদ্ধ করে কঠোর ডিক্রি জারী করার পর, তারা এই নিষিদ্ধকরণের দৃঢ় প্রবক্তা লিন জেস্যুকে কুয়াংচৌ’র (ক্যান্টন) বিশেষ কমিশনার নিয়োগ করে। জনতার সমর্থন নিয়ে লিন ক্যান্টনের বৃটিশ ও আমেরিকান চোরাচালান ব্যবসায়ীদের অফিসগুলি অবোরোধ করে এবং তাদের গুদামে থাকা ২০ হাজার পেটি (১৪৫০টন)’র বেশী আফিম জব্দ করে এবং ১৮৩৯ সালের ৩ জুন প্রকাশ্যেই এই আফিম ধ্বংস করে। এর ফলে সংঘটিত হয় আফিম যুদ্ধ। এবার পশ্চিমের নেতৃস্থানীয় ”সভ্য” রাষ্ট্রগুলোর লুটেরা চরিত্র এবং সামন্ততান্ত্রিক চীনের দুর্বলতা চীনা জনগণ এবং বিশ্বের কাছে ধরা পড়ে।
১৮৩৯ ও ১৮৪২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ইংরেজ সৈন্যরা চীনের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় অবতরণ করে এবং কুয়াংচৌ, শাংহাই, সিয়ামেন এবং নিংপো দখল করে। উত্তর এবং দক্ষিণ চীনের মধ্যে বানিজ্যের প্রধান সংযোগ বৃহৎ রাজকীয় খাল বিচ্ছিন্ন করে ভিতরে প্রবেশ করে। এ সময় তারা লুন্ঠন ও গণহত্যা চালায়। তারা ছিং চীনা বাহিনীর ২০ হাজার সৈন্যকে হত্যা করে। চীনের দুর্নিতীপরায়ণ সরকার জনগণের শক্তির উপর আস্থা না রেখে বৃটিশ চোরাকারবারীদের কাছে দ্রুত আত্মসমর্পণ করে।
১৮৪০ সালে বৃটিশ নৌবাহিনী বেইজিং থেকে মাত্র ৯০ মাইল দূরে উপকূলে নঙ্গর করলে সম্রাটের দরবারে ভয়ের সঞ্চার হয়। তারা বৃটিশ আক্রমণকারীদের সাথে আপোষ অলোচনা শুরু করে। একই সঙ্গে দেশপ্রেমিক লিন জেস্যুকে অপসারিত ও নির্বাসিত করে। তার অপরাধ সে বৃটিশ ও আমেরিকান চোরাচালানকারীদের আফিম জব্দ এবং ধ্বংস করেছে! পরবর্তীকালে এই বৃটিশদের সাথে আলোচনাকারী কর্মচারী ছিসান’র কাছে পাওয়া যায় ৩১১৯ কেজি সোনা, ৪৮২ টন রূপা এবং ৪ লাখ ৭২ হাজার একর জমি, যার বেশীর ভাগই সে বৃটিশদের নিকট থেকে ঘুষ হিসেবে পেয়েছিল এবং ছিসান কোন ভাবেই দুর্নীতিবাজ রাজকীয় ধনী আমলাদের একজন ছিলো না।
যুদ্ধের পরিণতিতে চীনের উপর জোরপূর্বক “অসম চুক্তিগুলির” প্রথমটি চাপিয়ে দেওয়া হয়, যে গুলো চীনকে জাতি হিসেবে অবলুপ্তির দিকে নিয়ে যায়। নানচিং চুক্তি (১৮৪২) এবং এর সম্পূরক প্রটোকলে (১৮৪৩) বিধান ছিল- লিন জেস্যু’র জব্দ ও ধ্বংসকৃত আফিমের ক্ষতিপূরণ এবং ভবিষ্যৎ চোরাকারবারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিৎ করা। ইংরেজদের কাছে হংকং সমর্পণ করা। বৃটিশ বানিজ্য ও বসতির জন্য প্রধান পাঁচটি বন্দর উন্মুক্ত করে দেওয়া, যেখানে সহসাই বৃটিশ পতাকার অধিনে আঞ্চলিক ছিটমহল প্রতিষ্ঠিত হয়। চীনা আইন থেকে ইংরেজদের অব্যাহতি দান। বিদেশী দ্রব্যের উপর শতকরা পাঁচ ভাগের বেশী আমদানী শুল্ক ধার্য না করার অঙ্গিকার।
চীনের দুর্বলতা দেখে একই ধরনের চুক্তি চাপিয়ে দেওয়ার জন্য অন্যান্য বৈদেশিক শক্তির দূতেরাও তাদের নৌবহর নোঙ্গর করে। প্রথমেই আসে আমেরিকার ক্যালেব কুশিং। তিনি রাজদরবারকে জানান আলোচনায় অসম্মতি “জাতীয় অপমান ও যুদ্ধের ন্যায়সঙ্গত কারণ” হিসেবে বিবেচিত হবে। কুশিং ‘ওয়াংসিয়া’ চুক্তি সম্পাদনে বাধ্য করেন। যার মাধ্যমে ইংরেজদের দেওয়া সকল সুবিধার বাইরেও টন প্রতি শুল্ক কমানো এবং চীনের নৌপথ ব্যবহারের অধিকার আদায় করে নেয়। সাম্রাজ্যবাদীদের এই সকল আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের একজন ছিলেন চীনে পশ্চিমা খৃষ্টান ধর্মযাজক ডঃ গুটজিলাফ। তিনি বৃটিশ আফিম ফার্ম জার্ডিনের মধ্যে দৌত্যগিরি করে পুরস্কার হিসেবে তার ধর্মীয় পত্রিকার জন্য ভর্তুকি লাভ করেন। ইংরেজ না হয়েও এই প্রুশীয় (জার্মান) ধর্মযাজক যুদ্ধের সময় ইংরেজ সৈন্যদের দোভাষী এবং তথ্য সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করেন। এসবের পুরস্কার হিসেবে প্রথমে দখলকৃত বড় বন্দর নিংপো’র হানাদার প্রশাসক এবং পরে হংকং’র বৃটিশ সরকারের চীন বিষয়ক সচিবের পদ লাভ করেন।
চীনা অলোচনাকারীরা বৃটিশ দূত স্যার হেনরী পটিংগারকে জিজ্ঞাসা করেন “ আমরা কেন নিজেদের দেশে মানবজাতির শত্রু আফিম উৎপাদন ও ব্যবসা নিষিদ্ধ করে দেব না?” পটিংগার জবাব দেন, যদিও এ ব্যবসা অত্যন্ত নোংরা, তবুও বৃটিশ সরকার এটা বন্ধ করতে পারে না, কেননা তা হবে “ আমাদের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।”
১৯১৭ সাল পর্যন্ত চীনে আফিমের আইনানুগ আমদানী অব্যহত থাকে এবং বে-আইনী ভাবে টিকে থাকে ১৯৪৯ সালের বিপ্লব পর্যন্ত।
বৃটিশ এবং আমেরিকার পর পর রাশিয়া, জার্মানী, ফ্রান্স সহ অন্যান্যরা কার্যত পুরো চীনকে দখল করে ভাগ করে নেয়। একমাত্র ১৯৪৯ সালের বিপ্লবের পরই চীন এই দস্যুদের হাত থেকে নিস্তার পায়, যদিও আমেরিকার প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় কুয়োমিন্টাং নেতা চিয়াংকাইশেক চীনের ফরমোজা দ্বীপ দখল করে নতুন দেশ তাইওয়ান প্রতিষ্ঠা করে, এবং চিয়াংকাইশেক বাহিনীর এক অংশ চীন থেকে বিতাড়িত আফিম উৎপাদন ও ব্যবসা বার্মার গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলে প্রতিষ্ঠিত করে তার বিশ^স্ত বন্ধুর সহযোগীতায়।
গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল ঃ দুই লাখ বর্গ-কিলোমিটার এলাকার বিস্তির্ণ পাহাড়ী অঞ্চল যা বার্মা বা মিয়ানমারের উত্তর-পূর্ব (শান প্রদেশ)সীমান্ত, উত্তর-পশ্চিম থাইল্যান্ড এবং লাওস’র উত্তর সীমান্তে রুক ও মেকং নদী বিধৌত এরাকায় অবস্থিত। ১৯৭১ সালে আফিম (মূলত পপি গাছের ফলের কষ থেকে আফিম এবং তার থেকে মরফিন ও হেরোইন তৈরী হয়) ব্যবসা সংক্রান্ত এক প্রেস কনফারেন্সে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের অফিসার মার্শাল গ্রীন এই এলাকার নাম দেন ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল।’
১৯৫০ সাল থেকে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল পৃথিবীর একক বৃহত্তম আফিম, মরফিন, হেরোইন উৎপাদক ও সরবরাহকারী। গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেরে প্রায় এক লাখ একর জমিতে পপি চাষ হয়। জাতিসংঘ মাদক ও অপরাধ সংস্থা (ইউএনওডিসি)’র হিসাব মতে ২০২২ সালে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলে ৭৯০ টন আফিম উৎপাদন হয় যা ২০২৩ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১০৮০ টন।
গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল নির্মাণ ঃ ১৯৪৯ সালে চীন বিপ্লবের পর চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা দখল করে, এবং ১ কোটি মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে (আফিম আসক্ত) বাধ্যতামূলক মাদক নিরাময কেন্দ্রে পাঠানো হয়। মাদক ব্যবসায়ীদের পাইকাড়ি হারে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। ইউনানের আফিম ক্ষেতগুলি ধ্বংস করে খাদ্যশস্যের চাস করা হয়্
আমেরিকার সাহায্যপ্রাপ্ত কুওমিন্টাং দলের নেতা চিয়াংকাইশেক তাইওয়ানে (চীনের ফরমোজা দ্বীপ) পালিয়ে যায় এবং হাজার হাজার কুয়োমিন্টাং আর্মি আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদে চীনের ইউনান প্রদেশের সীমান্ত দিয়ে বার্মায় প্রবেশ করে। এরা বার্মায় গিয়ে কুয়োমিন্টাং বার্মা (KMT) নামে এক প্রাইভেট নার্কোটিক্স (মাদক) আর্মি গড়ে তোলে এবং সমগ্র এলাকায় আফিম চাষ শুরু করে। বার্মার দুর্বল সরকারকে চেপে ধরে এরা সীমান্ত এলাকা দখল করে নেয় এবং বার্মার শান স্টেট হযে ওঠে কুয়োমিন্টাং বার্মার ঘাটি।
গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল’র থাইল্যান্ড সীমান্তের পপি চাষ থাই সরকার অনেক আগেই ধ্বংষ করে সেখানে গড়ে তুলেছে পর্যটন কেন্দ্র এবং আফিম মিউজিয়াম।
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অবৈধ আফিম, হেরোইন, মেটাফেটামিন (ইয়াবা তৈরীর কাঁচা মাল) ও কৃস্টাল মেটাফেটামিন মাদক উৎপাদনকারী দেশ হ’ল শান্তিতে নোবেল পাওয়া অং সান সু চি’র দেশ মিয়ানমার। জাতিসংঘ মাদক ও অপরাধ দপ্তরের মতে, শুধু ২০২১ সালেই ১শ’ কোটি ইয়াবা ট্যাবলেট আটক করা হয়।
এফিড্রা নামক এক ধরনের গুল্ম জাতীয় গাছ থেকে এফিড্রিন এবং এফিড্রিন থেকে সিউডোফেড্রিন পাওয়া যায়। সিউডোফেড্রিন দিয়ে তৈরী হয় মেটাফেটামিন। মেটাফেটামিনের সাথে ক্যাফেইন (চা এবং কফি থাকে) মিশিয়ে তৈরী হয় ইয়াবা। এক কেজি সিউডোফেড্রিনের দাম মাত্র ৮ হাজার টাকা, যা দিয়ে প্রায় ৪ লাখ ইয়াবা তৈরী করা যায়, যার খুচরো মূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা। এই আকাশচুম্বি লাভের জন্যই এর ব্যবসায়ীরা এত মরিয়া। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ দপ্তরের হিসাব মতে মিয়ানমারের রাখাইন সংলগ্ন বাংলাদেশের বান্দরবানের থানচী উপজেলার রেমাক্রী প্রাণসা ইউনিয়নের বর্ডার সংলগ্ন কোরিডোর দিয়ে বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ইয়াবা বাংরাদেশে ঢোকে, যার তদারকি করে তথাকথিত আরাকান আর্মি!
মিয়ানমারের যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে প্রচারিত এক কমার্শিয়াল গাইডে দাবি করা হযেছে য়ে, মিয়ানমারের পর্যটন খাত, বড় নির্মাণ খাত, রাষ্ট্রিয় তেল কোম্পানী ও তাদের সাথে জড়িত বিদেশী তেল কোম্পানী, সরকারী আর্মি এবং বিদ্রোহী আর্মি, আমলা সকলেই এই বিশাল বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মাদক ব্যবসা ও সেই টাকা বিদেশে পাচারের সাথে জড়িত। মিয়ানমার রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখলের মূল উদ্দেশ্যই হ’ল এই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বেহিসেবী অবৈধ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ হাতে পাওয়া!








সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ