অবিলম্বে সুন্দরবনে পরিবেশগত দুর্যোগ ঘোষণা করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

জরুরী ভিত্তিতে তেল-দূষণ দূর করার জন্য শত শত স্বেচ্ছাসেবক প্রয়োজন

সুন্দরবনে তেলবাহী জাহাজ ডুবির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আজ বৃহস্পতিবার খুলনা প্রেসক্লাবে নাগরিক সমাজের জোট ‘সুন্দরবন পর্যবেক্ষণ দল’ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন), গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান (সিএসআরএল), ইক্যুইটি অ্যান্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ – বাংলাদেশ (ইক্যুইটিবিডি), ফরেস্ট পিপলস্‌ প্রোগ্রাম (এফপিপি) ও ম্যানগ্রোভ অ্যাকশন প্রোজেক্ট (ম্যাপ) যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ক্লিন’র প্রধান সঞ্চালক হাসান মেহেদী।

“একটি বালুবাহী জাহাজকে তেল পরিবহনের অনুমতি প্রদান সুন্দরবনে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ” বলে  উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের গর্ব সুন্দরবন আজ ভয়াবহ হুমকির মুখোমুখি। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে তেল-দূষণের বিস্তার রোধ ও অপসারণের জন্য স্থানীয়ভাবে প্রাপ্য উপকরণ দিয়ে শত শত স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করা দরকার। সরকার অবিলম্বে এ উদ্যোগ নিলে সুন্দরবনের বিপন্নতা কমানো সম্ভব হবে। কিন্তু গত দুই দিনে সরকারের আন্তরিকতা চোখে পড়লেও জরুরি উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।”

তিনি বলেন, ২০০২ সালে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে তিনটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সুন্দরবনে তেল-দূষণের সম্ভাব্য ক্ষতি বিষয়ে একটি সমীক্ষা চালায়। তেল-দূষণ থামানো না গেলে প্রথম ১৫ দিনের মধ্যে পাখি, কচ্ছপ, ছোট মাছ ও অমেরুদন্ডি প্রাণি মারা যেতে পারে বলে ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো। এছাড়া প্রতিবেদনে তেল-দূষণ রোধ করার জন্য বন বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ ক্রয়, স্থানীয় জনগণ ও স্বেচ্ছাসেবীদের অংশগ্রহণে বাঁশ, কাঠের গুড়ি, কাঁচাপাট, খড়কুটো, বস্তা ও চট ব্যবহার করে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিলো। ওই প্রতিবেদনের পর এক যুগ পার হয়ে গেলেও কোনো প্রস্তুতি নেয়া হয়নি।

th (3)

তিনি বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে প্রাণবৈচিত্র্য ধ্বংস হবার পাশাপাশি মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সার, কিডনি ও যকৃত অকেজো হয়ে যাওয়া, স্নায়ুর স্থায়ী ক্ষতিসাধন, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া এবং রক্তের তারল্য বেড়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিপন্ন প্রাণীর অভয়াশ্রমকে নিরাপদ রাখার জন্য কোনো ধরনের রাসায়নিক পাউডার ব্যবহারের প্রতিবাদ জানানো হয়।

তিনি বলেন, কোনো প্রকার রাসায়নিক দ্রব্যের মাধ্যমে তেল অপসারণ করলে কিংবা বনের ভেতরে ঢুকে তেল দূরীভূত করার চেষ্টা করলে তা হবে আত্মঘাতের শামিল। তেল দূরীভূত করার জন্য আগুন ধরালে তা সুন্দরবনে আগুন ছড়িয়ে দিতে পারে বলেও সতর্ক করেন। তেলভূক ব্যাকটেরিয়া ছড়ানোর পদ্ধতি কার্যকর হলেও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য সেটি খরচবহুল হবে বলে বক্তারা অভিমত দেন। বক্তারা যতো দ্রুত সম্ভব শত শত তরুণ স্বেচ্ছাসেবীদেরকে দেশি উপকরণ দিয়ে নিযুক্ত করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌরুট বন্ধ করার নির্দেশ দেন। এরপর ২০১২ সালের ২১ আগস্ট পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে একই দাবি জানায়। কিন্তু নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় এ নির্দেশ ও অনুরোধের কোনো তোয়াক্কা করে নি।

তিনি অবিলম্বে সুন্দরবনে পরিবেশগত দুর্যোগ ঘোষণা, জরুরি ভিত্তিতে সুন্দরবনের নদী ও খাল থেকে তেল অপসারণের জন্য সম্মিলিত সামরিক ও বেসামরিক বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ, দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌ-চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ করা, তেল অপসারণের কাজ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সরাসরি তদারক করা ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ সংগ্রহে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন পর্যবেক্ষণ দলের আহ্বায়ক গৌরাঙ্গ নন্দী, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’র বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র খুলনা সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার,, হিউম্যানিটিওয়াচ-এর নির্বাহী সদস্য পলাশ দাশ প্রমূখ।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *