সময়ের সারথী ১২ জন পথিকৃৎ নারী

‘মানব সভ্যতার অর্ধেকই নারীর অবদান,কিন্তু কোনো ঐতিহাসিকের লেখা বই থেকে তা জানা যায় না।’ ঐতিহাসিক আর্থার শ্লেসিঙ্গার জুনিয়র।

ইতিহাস মূলত পুরুষের দ্বারা লেখা, তাই যুদ্ধ, রাজনীতি, প্রশাসন, কুটনীতি সর্বক্ষেত্রেই সকল অর্জনের দাবীদার পুরুষ। ইতিহাসের পাতায় নারীরা, বেশিরভাগ সময়ইতাদের যোগ্য স্থান পান নি। বরং নারীকে বার বার উপস্থাপন করা হয়েছে সেই গতানুগতিক কন্যা, স্ত্রী বা মা হিসেবে। কিন্তু প্রচলিত ইতিহাসের বাইরে প্রকৃত ইতিহাস ঘাটলেই উদঘাটিত হয় আসল সত্য। সভ্যতার শুরু থেকে নারী বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এসেছে। এই বিজয়ী নারীরা বহু নিপীড়ন ও অসমতার মধ্য থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন, সৃষ্টি করেছেন তাৎপর্যপূর্ণ ইতিহাস, যা শুধু নারীর জীবনকেই বদলে দেয়নি, পুরো মানব সভ্যতার ওপর রেখেছে ইতিবাচক প্রভাব।

২০১৩ সালে ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড এমনই ১২ জন নারীকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন যাঁরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে পথিকৃৎ হয়ে আজকের বাংলাদেশের নারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল হওয়ার পথ দেখিয়েছেন। ‘ সময়ের সারথী’ ১২ জন পথিকৃৎ নারীর সাফল্যের কথা।

বেগম রোকেয়া (১৮৮০-১৯৩২)

শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক বেগম রোকেয়া বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত। তিনি মূলত তাঁর লেখনী শক্তির মধ্য দিয়ে নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাঁর ‘sultana’s dream’ কে নারীবাদী সাহিত্যের একটি মাইলফলক ধরা হয়। বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীর স্মৃতি রক্ষার্থে বেগম রোকেয়া ১৯০৯ সালে ভাগলপুরে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গালর্স হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর সেই প্রচেষ্টাই আজ বাংলাদেশে নারী শিক্ষার উন্নয়নের মূল ভিত্তি।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (১৯১১-১৯৩২)

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যে ক’জন বাঙালি বিপ্লবী নারী সূর্য সেনের নেতৃত্বে সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার তাঁদের অন্যতম। ১৯১১ সালের ৫ মে তাঁর জন্ম। প্রীতিলতা ১০-১২ জন বিপ্লবী নিয়ে ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবে ঐতিহাসিক আক্রমণে নেতৃত্বে দেন। এসময পুলিশী অভিযানে তিনি গুরুতর আহত হন। এ অবস্থায় গ্রেফতার এড়াতে সঙ্গে রাখা সায়ানাইড বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে আজ বাঙালি নারীর প্রতিদিনের সংগ্রামে প্রীতিলতার আত্মত্যাগ ও সাহসিকতা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। আজ নারীরা তাদের দাবী আদায়ে সহজেই ঐক্যবদ্ধ হয়, হয়ে ওঠে সোচ্চার।

সুফিয়া কামাল (১৯১১-১৯৯৯)

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি, সমাজকর্মী ও সংগঠক সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের সায়েস্তাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। ‘বেগম’ পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন তিনি। বেগম রোকেয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯২৯ সালে রোকেয়ার প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলামে’ যোগ দেওয়ার মাধ্যমে সুফিয়া কামালের সমাজ সংগঠনের কাজের সূচনা। সুফিয়া কামাল রচিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘সাঁঝের মায়া’ (১৯৩৮), ‘মায়া কাজল'(১৯৫১), ‘অভিযাত্রিক'(১৯৬৯), ‘মৃত্তিকার ঘ্রাণ'(১৯৭০) এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় রচিত ‘মোর যাদুদের সমাধি পরে’। ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সুফিয়া কামাল কলম চালিয়েছেন অন্ধকারের বিরুদ্ধে, পথ দেখিয়েছেন আলোর- যে পথে আজও আমাদের অবিরাম চলা।

জোহরা বেগম কাজী (১৯১২-২০০৭)

জোহরা বেগম কাজী তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার প্রথম বাঙালি মুসলিম মহিলা চিকিৎসক। বাংলাদেশের ‘ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল’ নামে খ্যাত, জোহরা বেগম কাজী ১৯১২ সালের ১৫ অক্টোবর ভারতের মধ্য প্রদেশের রাজনানগাঁওয়ে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৩৫ সালে তিনি দিল্লির ‘লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন ‘ থেকে এমবিবিএস পাস করেন এবং পরে তিনি FRCOG ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং এমবিবিএস চুড়ান্ত পরীক্ষায় এই কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য পুরস্কার হিসেবে পান ‘ভাইসরয় পদক।’২০০৭ এর ৭ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। আর্তমানবতায় নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন বলেই ড. জোহরা বেগম কাজীকে জাতি আজও স্মরণ করে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মেডিকেল কলেজগুলোতেই সে কারণে ছাত্রের চাইতে ছাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি।

ইলা মিত্র (১৯২৫-২০০২)

১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর কলকাতায় জন্ম নেয়া ইলা মিত্র ছিলেন কৃষক ও আদিবাসী সাঁওতালদের নেত্রী। তাঁরই উদ্যোগে ১৯৫০ সালের ৫ জানুয়ারি নাচোলে কৃষক-সাঁওতাল বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। পুলিশ এই আন্দোলনে বাধা দেয় এবং ইলা মিত্রকে গ্রেফতার করে। ১৯৫০ সালের ২১ জানুয়ারি তাঁকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়, যেখানে তিনি অমানুষিক শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হন। ২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর ইলা মিত্র মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন ইলা মিত্র। পঞ্চাশের দশকে ইলা মিত্রের ‘তেভাগা’ আন্দোলন কৃষকের দুই-তৃতীয়াংশ ফসলের অধিকার আদায় নিশ্চিত করেছে।

নূরজাহান বেগম (১৯২৫)

প্রখ্যাত সাংবাদিক ও ‘মাসিক সওগাত’ পত্রিকার সম্পাদক মোহম্মদ নাসির উদ্দিনের কন্যা নূরজাহান বেগম বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত। ১৯২৫ সালের ৪ জুন জন্মগ্রহণ করেন নূরজাহান বেগম।বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম নারী সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘বেগম’ এর সম্পাদক তিনি। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের মাত্র এক মাস পূর্বে কলকাতায় ‘বেগম’ প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯৪২ সালে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গালর্স হাই স্কুল থেকে নূরজাহান বেগম ম্যাট্রিক পাস করেন। নূরজাহান বেগম তাঁর প্রকাশনার মাধ্যমে বাঙালি মুসলিম নারীকে ঘরের চার দেয়ালে বন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন বলেই সংবাদপত্র আজ বাঙালি নারীর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ফিরোজা বেগম (১৯৩০)

যার গভীর অনুরাগ নজরুল সঙ্গীতকে সারাদেশে তুমুল জনপ্রিয় করেছে, তিনি জনপ্রিয় নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগম। নজরুল গীতিতে বৈচিত্রময়তা নিয়ে আসার ক্ষেত্রে এই শিল্পীর অবদান অনস্বীকার্য। ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগম ১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই ফরিদপুরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে বিখ্যাত গ্রামোফোন কোম্পানি ‘এইচএমভি’ থেকে ইসলামী গান নিয়ে তাঁর প্রথম রেকর্ড বের হয়। ১৯৫৫ সালে বিখ্যাত সুরকার,গীতিকার ও শিল্পী কমল দাশগুপ্তের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। নজরুল সঙ্গীতে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে ‘স্বাধীনতা পদক’ প্রদান করা হয়। তাঁর স্বতন্ত্র ও আবেদনময়ী কন্ঠ আজও শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে।

নভেরা আহমেদ (১৯১২)

বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক নারী ভাস্কর্য শিল্পী নভেরা আহমেদের জন্ম ১৯৩০ সালে চট্রগ্রামে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত ‘শহীদ মিনার’ এর মূল নকশায় তাঁর অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। নভেরা আহমেদ ভাস্কর্যে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা করেন লন্ডনে ডঃ ভোগেল ও ফ্লোরেন্সে প্রখ্যাত ইতালীয় ভাস্কর ভেঞ্চুরিনো ভেঞ্চুরির তত্ত্বাবধানে। নভেরা আহমেদ স্বেচ্ছা নির্বাসন এখনও এদেশের মানুষের কাছে এক রহস্য। ভাস্কর্যের প্রতি নভেরার অনুরাগ ও সৃজনশীলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে আজ বহু ছাত্র- ছাত্রী ভাস্কর্য নির্মানকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছে।

রাণী হামিদ (১৯৪৪)

রাণী হামিদ বাংলাদেশের একমাত্র মহিলা গ্রান্ডমাস্টার। তিনি ১৯৪৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহন করেন। রাণী হামিদ ১৯৮৫ সালে দাবা খেলায় কৃতিত্বের জন্য ফিদে মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার (ডাব্লিউআইএম) উপাধি লাভ করেন। ১৯৮৩,১৯৮৫ ও ১৯৮৯ সালে তিনি ব্রিটিশ মহিলা দাবা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। ইতিহাসে তিনিই একমাত্র মহিলা দাবা খেলোয়াড় যিনি জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করেছেন। ‘দাবার রাণী’ রাণী হামিদের কৃতিত্ব শুধূমাত্র ‘ইনডোর’ গেমসের নারীদের উৎসাহিত করেনি, বরং তাদেরকে টেনে নিয়ে গেছে বৃহত্তর ময়দানে।

আইরিন জুবাইদা খান (১৯৫৬)

বাংলাদেশী মানবাধিকার কর্মী আইরিন জুবাইদা খান ১৯৫৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর জন্মগ্রহন করেন। আইরিন খান আ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’র সপ্তম মহাসচিব। ২০০১ সালে তিনি এই পদে যোগ দেন। মানবাধিকার সংকটে আ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যেভাবে সাড়া দেয়, আইরিন খান এ প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার প্রথম বছরেই তা সংস্কার করেন এবং গুয়ানতানামো কারাগার বন্ধ করার জন্য প্রচরণা শুরু করেন। ২০০৪ সালে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক অভিযানের উদ্যোগ নেন তিনি। যে ধরনের কর্মকান্ড সাধারন মানুষকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি বিঘ্নিত করে, আইরিন খান তার বিরুদ্ধে লড়তে ২০০৯ সালের মে মাসে আ্যমনেস্টি’র ‘ডিমান্ড ডিগনিটি’ ক্যাম্পেইন সূচনা করেন। সাধারণ মানুষের দুর্দশা লাঘবে আইরিন খানের উদ্যোগ,সাধারণ মানুষকে তাদের অধিকার আদায়ে সচেতন করে তুলেছে এবং যেকোনা ধরনের অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শিখিয়েছে।

তারামন বিবি (আনুমানিক ১৯৫৭)

তারামন বিবি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে একমাত্র মহিলা মুক্তিযোদ্ধা যিনি সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তি বাহিনীর পক্ষে তিনি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন। তারামন বিবি ১১ নং সেক্টরে সেক্টর কমান্ডার আবু তাহেরের অধীনে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধ শেষে তারামন বিবি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বীর প্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত হন। তারামন বিবির সাহসিকতায় অনুপ্রাণিত এদেশের মেয়েদের কাছে এখন আর অসাধ্য বলে কিছু নেই।

জোবেরা রহমান লিনু (১৯৬৫)

বাংলাদেশের একমাত্র মহিলা ক্রীড়াবিদ যিনি ‘গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ তাঁর নাম লিখিয়েছেন, তিনি আর কেউ নন বিখ্যাত টেবিল টেনিস খেলোয়ার জোবেরা রহমান লিনু। বাংলাদেশে টেবিল টেনিসের পথিকৃত জোবেরা রহমান লিনু ১৯৬৫ সালের ৯ জুন চট্টগ্রামের কাপ্তাইয়ে জন্মগ্রহন করেন। লিনু জাতীয় টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে ব্যক্তিগত বিভাগে ১৬ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন, যেটি সারা বিশ্বে আর কোনো ক্রীড়াবিদের পক্ষেই অর্জন করা সম্ভব হয় নি। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের ক্ষেত্রে লিনুর নিষ্ঠা দেশের মহিলা এ্যাথলেটদের বিশ্বখ্যাত হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 
Subscribe to Comments RSS Feed in this post

One Response

  1. Pingback: Monoj Das

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *