বৃষ্টিভেজা সবুজ আর দূরন্ত যৌবনা সুন্দরবন দেখতে হলে যেতে হবে বর্ষায়

প্রকৃতির বিস্ময় পৃথিবীর একক বৃহত্বম অপরূপ ম্যানগ্রভ বন সুন্দরবনের সৌন্দর্যের ষোলকলা দেখতে হলে ‘বর্ষায় ভ্রমণ’ করতে হবে সুন্দরবন।

মূলত বর্ষা ঋতু হ’ল সুন্দরবনের যৌবন কাল। সুন্দরবনের আর এক নাম ‘জল ‘ বন কারণ জলের মধ্যে জন্ম এ বন প্রতিদিন দুইবার জোয়ারের পানিতে ডুবে থেকে নিজেকে সতেজ রাখে যা তার বেঁচে থাকা ও বিকাশেরও অপরিহার্য শর্ত। আর বর্ষায় সুন্দরবনের অসংখ্য নদী ও খাল হয়ে ওঠে খরস্রোতা এবং আকাশ থেকে ঝরতে থাকে অবিরাম ধারার বৃষ্টি, তখন সুন্দরবনকে ভিনগ্রহের কোন স্থান বলে ভ্রম হয়।

তাই বর্ষায় দূরন্ত যৌবনা সুন্দরবন গাঢ় সবুজ আর তার বিচিত্র অর্কিড ও বিপুল ফল’র অলঙ্কারে সাজে যেন ধরণীর কোল থেকে বিচ্ছিন্ন একখন্ড স্বর্গ, যার অপ্সরীসম রূপ বর্ণনাতীত, যে রূপ অন্য ঋতুতে বিরল।

 

 

এ সময় বনভূমি যখন ঘন পলি মিশ্রিত ধুশর রঙের পানির তীব্র স্রোতের টানে প্লাবিত হতে থাকে তখন উর্দ্ধাকাশে চলে ঘন মেঘের পরে মেঘের জমে ওঠা যা আকাশ আর বনভূমিকে এক রঙে করে দেয় একাকার। তখন এই মেঘ রঙের ক্যানভাসে ফুটে ওঠে বনের গাঢ় সবুজ রঙের বৃক্ষরাজি, যেন সবুজের বান ডেকেছে, মনে হয় একটু নাড়া লাগলেই গাছের সব সবুজ টুপ টুপ করে ঝরে পড়বে।

আদগিন্ত বৃক্ষগুলি সেজে আছে নানা রং ও রূপের ফলের অলঙ্কারে, যে রূপের টানে প্রেমে পাগল অসংখ্য বিচিত্র সব অপরূপ পাখিরা ভিড় করেছে এ সকল বৃক্ষ শাখায় আর গান ধরেছে মানিনী বন কন্যাদের মান ভাঙাবে বলে। এ পরিবেশে ভাষা অর্থহীন, ভাবনা হাস্যকর, শুধু একমাত্র কাজ তন্ময় হয়ে দু’চোখ দিয়ে বনপ্রীয়ার শুধা পান করা।

বিশাল সুন্দরবনের বিপুল বৃক্ষরাজির অন্যতম একটি বিষয় হ’ল এর সিডলিং অর্থাৎ এর বীজ বপন ব্যাস্থার মাধ্যমে বংশবিস্তারের রহস্য। এই বৃহৎ যজ্ঞটি প্রকৃতি তার নিজ হস্তে সম্পন্ন করে থাকে। সুন্দরবনে প্রকৃতির এই বীজ বপন যজ্ঞ দর্শনের একমাত্র সুযোগ পাওয়া যেতে পারে শুধু বর্ষাকালেই।

কিছিু কিছু ম্যানগ্রোভ আছে যাদের পাতা থেকেই গাছ জন্মায়। তবে অধিকাংশ ম্যানগ্রোভেরই বংশ বিস্তার ঘটে তাদের বীজ থেকে। কিছু ম্যানগ্রোভের বীজ আকৃতিতে অস্বাভাবিক বড়, এদের বলা হয় প্রপাগুলস্। বর্ষায় সমগ্র বনভূমির উচ্চ স্থানগুলিতেও যখন জোয়ারের পানি পৌঁছে যায় তখন লাখ লাখ ম্যানগ্রোভের বীজ, প্রপাগুলস্ এবং ফল জোয়ারের পানির সাহাজ্যে সমগ্র বনভূমিতে রোপিত হয়। তখন মনে হয় যেন ব্রিগেড’র পর ব্রিগেড প্রকৃতির সৈন্যরা মহাব্যাস্ততায় ছুটে চলেছে বিশাল কোনো কর্ম যজ্ঞে, যে অসাধারণ দৃশ্যের দেখা শুধু বর্ষায়ই পাওয়া সম্ভব অন্য ঋতুতে নয়।

বর্ষার গাঢ় মেঘ যখন জমতে জমতে এক সময় বনের সবুজ মেঘের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে অঝর ধারায় ঝরতে থাকে, সে দৃশ্য শুধু ভাগ্যবানের বরাতেই জোটে, যা শুধু উপভোগই করা সম্ভব, বর্ণনার কথা ভাবাও বাতুলতা।

এক সময় যখন বৃষ্টিরা থামে তখন আলো-আধারীতে বন যেন সদ্যস্নাতা নববধূ, মেঘের ঘোমটার আড়ালে তাকিয়ে আছে চরাচরের দিকে, আহা এমন রূপ দেখেই বোধ হয় অনেকে আজন্মের তরে ঘুরে বেড়ায় বনে বনান্তরে প্রকৃতির পাগল হয়ে।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *