বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অতিদারিদ্র কমেছে ১২.৯ শতাংশ

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকায় বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে বাংলাদেশে ‘অতিদরিদ্র’ মানুষের সংখ্যা মোট জনগোষ্ঠীর ১২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ, ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে (পারচেজিং পাওয়ার পেরিটি) বাংলাদেশের ১২ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষের দৈনিক আয় ১ দশমিক ৯ ডলারের (১১৫ টাকা) কম। বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে অতিদারিদ্র্যের হার ছিল ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

সোমবার প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে এ তথ্য  প্রকাশ করা হয়। বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদন এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে অর্জিত ৭.১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ভিত্তি ধরে তারা অতিদারিদ্র্যের হার হিসাব করেছেন। “দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অর্জন প্রশংসনীয়। এমনিক ভারত, পাকিস্তান ও ভুটানের চেয়েও ভালো।”

জাহিদ হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে কোনো দেশের দারিদ্র্যেপর হার বলতে মূলত হতদরিদ্রদেরই বোঝানো হয়। প্রত্যেতক অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির ভিত্তিতে বিচার করে বিশ্ব ব্যাং ক এই হার ঠিক করে। সেই হিসেবে ২০১০-১১ সময়ে বাংলাদেশে অতিদারিদ্র্যের হার ছিল ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ;২০১১-১২ অর্থবছরে ছিল ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ; ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ; ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০০৫ সালে বাংলাদেশে হতদারিদ্র্যের হার ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল বলে বিশ্ব ব্যাং কের প্রতিবেদনে জানানো হয়।

জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ‘শূন্যেষ’ (৩ শতাংশের নিচে নেমে এলেই তাকে শূন্য্ ধরা হবে) নামিয়ে আনার যে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে, তা অর্জন করতে হলে বাংলাদেশকে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে বলে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন জানান। এর ব্যােথ্যাতয় তিনি বলেন, “তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে যদি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ে তাহলে দারিদ্র্য ১ দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট কমে। সে হিসাবে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে অতিদারিদ্র্যের হার ২ দশমিক ৯১ শতাংশে নেমে আসবে।” সরকার চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করলেও বিশ্ব ব্যাং্কের পূর্বাভাস বলছে, শেষ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। সেক্ষেত্রে অতিদারিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসবে।

জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ‘কিছু অনিশ্চয়তার কারণে’ আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। সেক্ষেত্রে অতিদারিদ্র্যের হার কমে হবে ১২ দশমিক ১ শতাংশ। যাদের আয় দিনে ১ দশমিক ৯০ ডলারের কম, তাদেরকেই বিশ্ব ব্যাং ক ‘অতিদরিদ্র’ হিসেবে চিহ্নিত করে। বিশ্ব ব্যাং কের ২০১৩ সালের তথ্যছ অনুযায়ী, বিশ্বের ১০ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ বাস করছে অতিদারিদ্র্য সীমার নিচে।

সংবাদ সম্মেলনের স্বাগত বক্তব্ বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান বলেন, দারিদ্র্যের হার কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ‘প্রশংসার দাবিদার’। কর্মসংস্থানের নানা সুযোগে কমেছে এই হার।“যেভাবে বাংলাদেশের অগ্রগতি হচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে দারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশে নেমে আসবে বলে আমার বিশ্বাস।”

নানা ধরনের উন্নয়ন দক্ষতা, সুষম অর্থনৈতিক বণ্টন, লিঙ্গ বৈষম্য, সফল পরিবার পরিকল্পনা বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনের সুফল বয়ে আনছে বলে মনে করেন বিশ্ব ব্যাংরকের ঢাকা অফিসের প্রধান। ‘প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৮ শতাংশ’

বিশ্ব ব্যাংধকের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ছাড়া অর্থনীতির অন্য সব সূচক ‘ইতিবাচক’ রয়েছে জানিয়ে এই পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি।

তবে বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা, অবকাঠামোর ঘাটতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ঘাটতির কারণে আগামী অর্থবছরে এই হার কমে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্ব ব্যাংকের অর্থনীতিবিদরা।

চ্যালেঞ্জ

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকির কথাও তুলে ধরা হয়েছে। চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে- বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা, অবকাঠামো ঘাটতি, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দুর্বলতা এবং ব্রেক্সিটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে ধাক্কার প্রভাব। জাহিদ হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখনো কিছু উদ্বেগ রয়েছে। স্থিতিশীলতা থাকলেও উদ্বেগ কাটেনি। বিনিয়োগ না হয়ে সঞ্চয়ের অর্থ পাচার হচ্ছে।

“বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ না বাড়ায় সরকারি ও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের ব্যবধান বেড়েছে। বিনিয়োগে স্থবিরতা রয়েছে। অর্থের অভাব নেই। রিজার্ভ বাড়ছে। কিন্তু সেটা বিনিয়োগে কাজে লাগছে না।

অবকাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার না হওয়া এব্ং ব্যবসা করতে গিয়ে ‘ভোগান্তিকে’ অর্থ পাচারের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ২ দশমিক ৫২ শতাংশ কমেছে, যা আগের অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছিল।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *