আবারও সুন্দরবনের করমজল থেকে কুমির ছানা উধাও ধরা পড়েনা শিয়ালরা !

সরকারি পর্যায়ে দেশের একমাত্র কুমির প্রজনন কেন্দ্র সুন্দরবনের ‘করমজল বন্যপ্রাণী ও কুমির প্রজনন কেন্দ্র’ থেকে প্রায় অর্ধশত কুমির ছানার সন্ধান মিলছে না। বাচ্চাগুলো চুরি না পাচার হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারেনি বন বিভাগ। বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছে ধু¤্রজাল।

উল্লেখ্য কয়েক বছর আগে একই ভাবে এখান থেকে উধাও হয়ে যায় কুমির ছানা তবে শিয়ালরা সে সময়ও ধরা পড়েনি।

এদিকে ঘটনার তদন্তে বন বিভাগের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ২৯ জানুয়ারি ভোর থেকে করমজল বন্যপ্রাণী ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রের প্যান (খাঁচা) থেকে ৩৬টি কুমিরেরে বাচ্চা নিখোঁজ হয়। পর দিন প্যান থেকে আরও ছয়টি  বাচ্চা নিখোঁজ হয়। বাচ্চাগুলোর অধিকাংশের বয়স ছয় মাস। এছাড়া এক থেকে দেড় বছরেরও কয়েকটি বাচ্চা রয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন অফিসার (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, “৩০ জানুয়ারি আমরা জানতে পেরেছি যে ৪৩টি কুমির হারিয়ে গেছে বা এখন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মেহেদীজ্জামানকে বিষয়টি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ঘটনাস্থল ঘুরে এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসিএফ মেহেদীজ্জামান বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে প্রজনন কেন্দ্রের বনকর্মী (লস্কর) মাহাবুব হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রে দেখভালের জন্য মাস্টাররোলে কর্মরত একজন কর্মী ছিলেন। তাকেও আমরা সেখান থেকে বিদায় দিয়েছি।” তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুুতি চলছে তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় নি।

এদিকে, সার্বিক বিষয় তদন্তের জন্য রোববার চাঁদপাই রেঞ্জের এসিএফ মেহেদীজ্জামানকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে ডিএফও বরাবর তদন্ত  প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন-চাঁদপাই স্টেশন অফিসার (এসও) মো. আলাউদ্দিন ও করমজল কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অফিসার (ওসি) তহিদুল ইসলাম।

ডিএফও বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। কমিটি সার্বিকভাবে তদন্ত করে দেখবে।

প্রজনন কেন্দ্রে ১৭৭টি কুমির ছিল। নিখোঁজ হওয়ার পর বর্তমানে তিনটি বড় কুমিরসহ মোট ১৩৪টি কুমির রয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ সূত্র জানায়, বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির নোনা পানির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণে ২০০২ সালে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজলে দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজননকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর জন্য বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন প্রকল্পের ৩২ লাখ টাকা ব্যয় হয়।

শুরুতে জেলেদের জালে ধরা পড়া ছোট-বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে কেন্দ্রে প্রজনন কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে কেন্দ্রে নোনা পানির দু’টি নারী কুমির-জুলিয়েট ও পিলপিল এবং একটি পুরুষ কুমির রোমিও রয়েছে।

করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রের সাবেক অফিসার ও কুমির বিশেষজ্ঞ আবদুর রব বলেন, বাংলাদেশে তিন প্রজাতির কুমিরের অস্তিত্ব ছিল। লবণ পানির কুমির, মিঠা পানির কুমির ও গঙ্গোত্রীয় কুমির বা ঘড়িয়াল। এর মধ্যে মিঠা পানির কুমির ও ঘড়িয়ালের অস্তিত্ব বিলীনের পথে। শুধু টিকে আছে লবণ পানির কুমির। এই প্রজাতির কুমরি সাধারণত ৬০-৬৫ বছর পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। আর গড় আয়ু ৮০-১০০ বছর পর্যন্ত।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *