উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনের দাবি ঘরে ঘরে সুপেয় পানির সরবরাহ নিশ্চিৎ করতে হবে

ঐতিহ্যঃ উপকূলীয় পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ফোরাম, খুলনা জেলা কমিটির উদ্যোগে উপকূলীয় অঞ্চলে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে “ঘরে ঘরে সুপেয় পানি” স্লোগানকে সামনে রেখে পেশাজীবি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সমন্বয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গতকাল এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নগরীর উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষের ব্যবহার উপযোগী পানিতে অধিগম্যতা না থাকায় তাদের জীবন জীবিকার ক্ষেত্রে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের সুপেয় পানির সংকট বাড়ছে, জীববৈচ্যিত্র নষ্ট হচ্ছে, কৃষিতে উৎপাদন কমে যাচ্ছে, জীবন জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে, খাদ্য নিরাপত্তা নষ্ট হচ্ছে, স্বাস্থ্য সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, মানুষ দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা হারাচ্ছে এবং ফল স্বরূপ এলাকা অর্থাৎ বসত-ভিটা ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে।

বক্তারা বলেন, এই অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে উপরোক্ত সমস্যা ভোগ করছে এবং এই সমস্যা থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় তার জন্য বিচ্ছিন্ন ভাবে নানা জনে নানা উদ্যোগও গ্রহণ করেছে কিন্তু সমন্বিত ভাবে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভব না হওয়ায় বিশেষ কোন ফললাভও হয় নি।

এমতাবস্থায় খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষিরা জেলায় কর্মরত কিছু উন্নয়ন সংগঠন সম্মিলিত ভাবে কাজ করার উদ্দেশ্যে ঐতিহ্যঃ ঃ উপকূলীয় পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ফোরাম গঠন করা হয়েছে।

বক্তারা বলেন, “দীর্ঘদিনের উন্নয়ন কর্মকান্ডের অভিজ্ঞতায় আমরা বুঝতে পেরেছি যে এই সমস্যা সমাধানে সরকারী উদ্যোগ গ্রহণ করা আশু প্রয়োজন। এই কারণে সুশীল সমাজকেও এ উদ্যোগে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন, যাতে সরকার এই অঞ্চলের সমস্যার সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে আর তার জন্য অধিপরামর্শের মধ্য দিয়ে সরকারকে যথাযথ ভূমিকা পালনে সহয়োগিতা করতে সক্ষম হয়।

বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকার যেমন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিৎ করতে সক্ষম হয়েছে ঠিক তেমনি উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনের দাবি ‘ঘরে ঘরে সুপেয় পানি’র সরবরাহও নিশ্চিৎ করতে সক্ষম হবে যদি সমন্বিত ভাবে আগামীদিনে সরকারকে অধিপরার্ম প্রদানে সফল হওয়া সম্ভব হয়।

বক্তারা বলেন, বিগত কয়েক দশকে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে বাংলাদেশ ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।এরই ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG-6): সকলের জন্য নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণ’র জন্য বাংলাদেশ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্যমতে, বর্তমানে দেশের ৯৭ ভাগ মানুষের পানিতে অভিগম্যতা থাকলেও লবনাক্ততা, আর্সেনিক ও আঞ্চলিক দূর্গমতা বিবেচনায় সুপেয় নিরাপদ পানিতে ৬০ ভাগ মানুষেরই অভিগম্যতা নেই। খোলা স্থানে মলত্যাগের হার শূণ্যের ঘওে এনে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ প্রশংসিত হয়েছে, তবে নিরাপদ ও টেকসই স্যানিটেশন সেবার আওতায় এসেছে মাত্র ৪৭ ভাগ মানুষ।

নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর সুস্পষ্ট অঙ্গীকার এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন। এ প্রেক্ষিতে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সুস্পষ্ট অঙ্গীকার জনগণ প্রত্যাসা করে। নির্বাচনী  ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে জনগণের জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সেবা নিশ্চিত করতে হলে Ñ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের ঘরে ঘরে সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে হবে। ক্রমবর্ধমান লবনাক্ততা ও      আর্সেনিক সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। টেকসই ও নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি পুকু,ে খাল ও জলাধার দখলমুক্ত করে মিষ্টি পানির আধাওে পরিণত করা সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরী। এ সকল ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আইন প্রণেতাদের সুনির্দিষ্ট ভাবে অংশগ্রহণ জরুরী, আর সেটা সম্ভব হবে প্রজ্ঞাবান রাজনীতিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদেও সঠিক দিক নির্দেশনায়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুশীলন’র নির্বাহী প্রধান মোস্তফা নুরুজ্জামান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন Ñ এ্যাডঃ এনায়েত আলী, অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির, নাজমুল আজম ডেভিড, এ্যাডঃ কুদরত-ই-খোদা, আশরাফ-উজ-জামান, নূর মোহাম্মদ মোড়ল, গৌরাঙ্গ নন্দী প্রমূখ।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *