খুলনা মহানগরীর গণপরিবহনের এখন লেজেগবরে অবস্থা। চলাচল করছে নগরীর রাস্তার ধারণ ক্ষমতার বহুগুণ বেশী যানবাহন। ব্যাবস্থাপনায় কোন কর্তৃপক্ষ না থাকায় চলছে মগের মুলুক। ফলে একদিকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব লোপাট, অন্যদিকে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে চলাচলের অযোগ্য বিপদজনক পরিবেশ সৃষ্টি হলেও ভ্রুক্ষেপ নেই কেসিসি কর্তৃপক্ষের।
খুলনা মহানগরীর প্রধান গণ পরিবহন হ’ল রিক্সা, ইজিবাই এবং সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও ডিজেল চালিত থ্রি-হুইলার মহেন্দ্র-অতুল।
সূত্রমতে, ২০১০ সাল পর্যন্ত খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সড়কের ধারণ ক্ষমতানুযায়ী লাইসেন্সপ্রাপÍ রিক্সার সংখ্যা ছিলো ১৭ হাজার। এর সাথে ছিলো কয়েক শত অটোরিক্সা। ২০১১ সালে দুই হাজার টাকা বাৎসরিক ফি নির্ধারণ করে দুই হাজার ইজিবাইক চলাচলের লাইসেন্স দেওয়া হয় এবং সে কারণে রিক্সার সংখ্যা কমিয়ে করা হয় ১০ হাজার।
নগরীর যানবাহনে শুরু হ’ল মগের মুলুকঃ ইজিবাইক’র লাইসেন্স কে দেবে, বিআরটিএ না সিটি কর্পোরেশন এ বিতর্ক চলমান অবস্থায় ২০১১ সালে খুলনা সিটি কর্পোরেশন দুই হাজার ইজিবাইকের লাইসেন্স প্রদান করে। এ সময় দুই হাজার লাইসেন্স ওয়ালা ইজিবাইকের বিপরীতে নগরীতে চালু হয় পাঁচ হাজারের অধিক ইজিবাইক। এর এক বছরের মাথায় মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে সেগুলির নবায়ন না করা এবং নতুন লাইসেন্স না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ফলে নগরীতে বর্তমানে চলাচলকারী সকল ইজিবাইকই হয়ে পড়ে অবৈধ।
ইজিবাইক’র লাইসেন্স প্রদান বিতর্কের মিমাংসা না হলেও থেমে নেই নতুন নতুন ইজিবাইকের আগমন। কোন সংস্থার নিয়ন্ত্রন না থাকায় নগরীর রাস্তার ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়ে নগরীতে ইজিবাইকের সংখ্যা এখন প্রায় ২৪ হাজারের অধিক বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। উল্লেখ্য, এর পরেও আছে এক হাজারেরও বেশী অতুল-মহেন্দ্র-সিএনজি। যানবাহনের ভারে আক্রান্ত খুলনা মহানগরীতে দুর্ঘটনা এখন নৈমিত্তিক ঘটনা।
মোঃ রহমত আলী একজন ইজিবাইক চালক। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন তার গাড়ির কোন লাইসেন্স নেই। তার ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কি-না জানতে চাইল তিনি বলেন না নেই। তিনি ট্রাফিক আইন জানেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘ না, জানি না।’ একই উত্তর দেন ইজিবাইক চালক মজিদ ও সবুজ মিয়া। এদের দাবি কোন ইজিবাইক চালকেরই গাড়ির লাইসেন্স ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই এবং তারা কেউই ট্রাফিক আইন জানে না। এ সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও জ্ঞান ছাড়া তারা কি ভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, এসব লাগে না। কেন লাগে না জানতে চাইলে তারা বলেন, গাড়ির লাইসেন্স কেউ দেয় না, আর ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও কেউ কিছু বলে না, তাই এসব লাগে না।
কোন প্রকার লাইসেন্স না থাকায় প্রতি বছর ইজিবাইক মালিকদের নিকট থেকে প্রাপ্ত কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন অর্থাৎ জনগণ, যা দিয়ে তৈরী হতে পারে নগরবাসির অতি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সেবা। বর্তমানে নগরীতে চলাচলকারী ২৪ হাজার ইজিবাইক থেকেই শুধু আদায় হতে পারে বছরে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা, যা নিয়ে কেসিসি কর্তৃপক্ষের নেই বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ! অথচ কোন প্রকার রাজস্ব না দিয়েই ইজিবাইক মালিকরা করে চলেছে চুটিয়ে ব্যবসা, নগরবাসির টাকায় তৈরী রাস্তায়!
সাইকেল আরোহীরা মহাবিপদেঃ কয়েক হাজার সাইকেল চালকের জন্য খুলনা মহানগরী এখন বিপদজনক শহর। এদের মধে আছে বিপুল সংখ্যক স্কুল-কলেজের ছাত্র যারা যানবাহনের ভিড়ে ঠাসা রাস্তায় সাইকেল চালায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে, কারণ ইজিবাইকের চাপে তারা প্রায়সই রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ে হচ্ছে জখম। ফলে অভিভাবকগণ তাদের সাইকেল চালক সন্তানদের নিয়ে সদা উৎকন্ঠিত।
গোদের উপর বিষফোড়া ইঞ্জিন রিক্সাঃ নগরীতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে উপচে পড়া যানবাহনের মাঝে আবার যুক্ত হয়েছে মূর্তিমান আতঙ্ক কয়েক হাজার ইঞ্জিন রিক্সা। ব্যাটারী চালিত এ সকল রিক্সা তার গঠন ও গতির সামঞ্জস্যহীনতার কারণে নগরীতে চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য। এ কারণেই খুলনা সিটি কর্পোরেশন এ রিক্সাকে অবৈধ ঘোষণা করেছে এবং এ সকল রিক্সার লাইসেন্স দেওয়া হবেনা বলে জানিয়েছে। তার পরও নগরীতে পাঁচ হাজারের অধিক অবৈধ ইঞ্জিন রিক্সা চলছে! নগরবাসির অভিযোগ, মূর্তিমান আতঙ্ক ইঞ্জিন রিক্সা নগরীর সড়ক দুর্ঘটনাগিুলর একটি অন্যতম কারণ।
এ সকল বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স অফিসার (যানবাহন) বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকার রাস্তার ধারণ ক্ষমতানুযায়ী ইজিবাইক, সিএনজি, অতুল-মহেন্দ্র ইত্যাদি মিলে সর্বোচ্চ তিন হাজার থ্রি-হুইলার এবং তার সাথে ১০ হাজার রিক্সা চলাচল করতে পারে। কিন্তু সেখানে শুধু ইজিবাকই চলছে প্রায় ২৪ হাজার যা নগরীকে চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী করে তুলেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে খুলনা মহানগরী বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, সিটি কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, অন্যথায় মারাত্মক অব্যবস্থার সৃষ্টি হবে যার সমাধান কঠিন হয়ে পড়বে।
![Share on Facebook facebook](https://www.sundarbansamachar.com/wp-content/plugins/social-media-feather/synved-social/image/social/regular/96x96/facebook.png)
![Share on Twitter twitter](https://www.sundarbansamachar.com/wp-content/plugins/social-media-feather/synved-social/image/social/regular/96x96/twitter.png)
![Share on Google+ google_plus](https://www.sundarbansamachar.com/wp-content/plugins/social-media-feather/synved-social/image/social/regular/96x96/google_plus.png)
![Share on Reddit reddit](https://www.sundarbansamachar.com/wp-content/plugins/social-media-feather/synved-social/image/social/regular/96x96/reddit.png)
![Pin it with Pinterest pinterest](https://www.sundarbansamachar.com/wp-content/plugins/social-media-feather/synved-social/image/social/regular/96x96/pinterest.png)
![Share on Linkedin linkedin](https://www.sundarbansamachar.com/wp-content/plugins/social-media-feather/synved-social/image/social/regular/96x96/linkedin.png)
![Share by email mail](https://www.sundarbansamachar.com/wp-content/plugins/social-media-feather/synved-social/image/social/regular/96x96/mail.png)
![feather](https://www.sundarbansamachar.com/wp-content/plugins/social-media-feather/synved-social/image/icon.png)
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ