হামলার অভিযোগ খুলনায় চিকিৎসকদের ২৪ ঘণ্টার কর্মবিরতি ঘোষণা

শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহ’র উপর হামলার প্রতিবাদে বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত খুলনায় ২৪ ঘণ্টার কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে চিকিৎসকরা।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর বিএমএ ভবনে এক সাংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম। তিনি বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খুলনা মহানগরীর শেখপাড়াস্থ হক নার্সিং হোমে অপারেশন চলাকালীন হামলা করে রোগীর স্বজন শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহকে শারিরিকভাবে লাঞ্ছিত ও নিগৃহীত করে। এ সময় তাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। শুধু তাই নয়, তিনি একজন মুমূর্ষ রোগীর অপারেশন করছিলেন। সেখান থেকে একমাস পূর্বে অপারেশন করা রোগীর জটিলতার অজুহাতে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশে কর্মরত এএসআই নাঈম ও তার সঙ্গীরা তাকে জোর করে অপারেশন মাঝপথে বন্ধ করে দেয়। এসময় তারা উপর পৈশাচিকভাবে ঝাপিয়ে পড়ে এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। সংরক্ষিত প্রবেশ অধিকারের নিরাপদতম স্থান অপারেশন থিয়েটারও ভাঙচুর করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সহকর্মী ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহ্ খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কেবিনে শারীরিক ও মানষিক অস্বস্থিতে বেঁচে আছে। বহুবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আমলাদের বোঝানো হয়েছে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানসমূহ ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় নিরাপত্তা বিধান করা হোক। কিন্তু কখনোই এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু এবার ঘটেছে আরও মারাত্মক ঘটনা। আইনের রক্ষক পুলিশের পোশাক পরিহিত এএসআই নাঈম ও তার সঙ্গীরা চিকিৎসকের উপর ঝাপিয়ে পড়ে হত্যার চেষ্টা করেছে। সভ্য সমাজে এই ধরনের পৈশাচিক ঘটনা বিরল। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা যাবত একজন চিকিৎসককে আটকে রেখে উপহাস করা হয়েছে বিভৎস ভাষায়। গালিগালাজ আর নগ্ন আচরণের বর্ণনা শুনলে গা শিউরে ওঠে। সেই ঘটনার স্বাক্ষী হয়েছে খুলনার হক নার্সিং হোম। আর নির্বিকার অসহায়ভাবে চিকিৎসক সহ্য করেছেন সেই বর্ণনাতীত নির্যাতন।

ডা. বাহার বলেন, চিকিৎসা পাওয়া মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। রোগী বা চিকিৎসা প্রত্যাশি জনগণের এই মৌলিক অধিকারপূরণ করার দায়িত্ব রাষ্ট্র বা সরকারের। এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলুষ্ঠিত হবে। চিকিৎসকরা রাষ্ট্রের সীমিত ব্যবস্থাপনায় বহুলাংশে জনগণের এই মৌলিক অধিকারপূরণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু নিজেকে অরক্ষিত ও অনিরাপদ রেখে চিকিৎসকরা আর কর্মস্থলে যেতে চাই না।

তিনি বলেন, ওই ঘটনার প্রতিবাদে আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে এ এস আই নাঈম ও তার সঙ্গীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় না আনা হলে বুধবার সকাল ৬ টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত খুলনা জেলার সকল সরকারি-বেসরকারি, স্বায়ত্বশাষিত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে পূর্ণকর্ম বিরতি পালন করা হবে। তবে, শুধুমাত্র মানবিক কারণে জরুরি বিভাগ খোলা থাকবে। এছাড়া বুধবার সকাল ১০ টায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহিবির্ভাগ চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষনা করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন বিএমএ খুলনার সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজ, যুগ্ম সম্পাদক ডা. নেওয়াজ মোস্তাফি চৌধুরী প্রমুখ।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *