আঁখ: শেষ পর্ব

আঁখের বীজ লাগানোর সময় ও দূরত্বঃ

আগুল লাগানোর সময় ভাদ্রের ১৫ হতে কার্তিকের ১৫ তারিখ পর্যন্ত, সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ১০০ সে.মি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ৬০ সে.মি এবং প্রতি হেক্টরে বীজখন্ডের সংখ্যা হবে ১৬৭০০ টি।

মধ্যম লাগানোর সময় কার্তিকের ১৬ হতে পৌষের ১৫ তারিখ পর্যন্ত, সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৯০ সে.মি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ৪৫ সে.মি এবং প্রতি হেক্টরে বীজখন্ডের সংখ্যা হবে ২৪৭০০ টি।

নাবিলা লাগানোর সময় মাঘের ১৫ হতে বৈশাখের মাঝামাঝি পর্যন্ত, সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৬০ সে.মি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ৩০ সে.মি এবং প্রতি হেক্টরে বীজখন্ডের সংখ্যা হবে ৫৫৫০০ টি।

চারা রোপনের সময় ও সারের পরিমান, প্রয়োগ পদ্ধতিঃ

আগামঃ ভাদ্র মাসের ১৬ তারিখ হতে কার্তিক মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে।

মধ্যমঃ কার্তিক মাসের ১৬ তারিখ হতে পৌষ মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত।

নাবীঃ মাঘ মাসের ১৫ তারিখ হতে বৈশাখ মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে।

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ (কেজি/হেঃ)ঃ

ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ প্রথম কিস্তি সার দেয়ার সময় রোপনের ১০-১৫ দিন পর মাটির উর্বরা শক্তি কম হলে ১৬০ কেজি/হে. এবং মধ্যম থেকে বেশী হলে ১২৫ কেজি/হে.।

ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ দ্বিতীয় কিস্তি সার দেয়ার সময় রোপনের ১২০-১৫০ দিন পর মাটির উর্বরা শক্তি কম হলে ১৬০ কেজি/হে. এবং মধ্যম থেকে বেশী হলে ১২৫ কেজি/হে.।

ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ তৃতীয় কিস্তি সার দেয়ার সময় রোপনের ১৮০-২০০ দিন পর মাটির উর্বরা শক্তি কম হলে ১৬০ কেজি/হে. এবং মধ্যম থেকে বেশী হলে ১২৫ কেজি/হে.।

টিএসপি বেছাল (খাদে) সার দেয়ার সময় হ’ল খাদ তৈরীর সময় মাটির উর্বরা শক্তি কম হলে ৩৫০ কেজি/হে. এবং মধ্যম থেকে বেশী হলে ২৭৫ কেজি/হে.।

এমপি বেছাল (খাদে) সার দেয়ার সময় হ’ল খাদ তৈরীর সময় মাটির উর্বরা শক্তি কম হলে ১২৫ কেজি/হে. এবং মধ্যম থেকে বেশী হলে ৬৫ কেজি/হে.।

এমপি প্রথম উপরি প্রয়োগ সার দেয়ার সময় রোপনের ১২০-১৫০ দিন পর মাটির উর্বরা শক্তি কম হলে ১২৫ কেজি/হে. এবং মধ্যম থেকে বেশী হলে ৬৫ কেজি/হে.।

এমপি দ্বিতীয় উপরি প্রয়োগ সার দেয়ার সময় রোপনের ১৮০-২০০ দিন পর মাটির উর্বরা শক্তি কম হলে ১২৫ কেজি/হে. এবং মধ্যম থেকে বেশী হলে ৬৫ কেজি/হে.।

জিপসাম বেছাল (খাদে) সার দেয়ার সময় হল খাদ তৈরীর সময় মাটির উর্বরা শক্তি কম হলে ১৮০ কেজি/হে. এবং মধ্যম থেকে বেশী হলে ১২০ কেজি/হে.।

জিংক সালফেট বেছাল (খাদে) সার দেয়ার সময় হ’ল খাদ তৈরীর সময় মাটির উর্বরা শক্তি কম হলে ১৫ কেজি/হে. এবং মধ্যম থেকে বেশী হলে ১০ কেজি/হে.।

গোবর সার বেছাল (খাদে) দেয়ার সময় হ’ল খাদ তৈরীর সময় মাটির উর্বরা শক্তি কম হলে ১৫০০০ কেজি/হে. এবং মধ্যম থেকে বেশী হলে ১০০০০ কেজি/হে.।

সরিষার খৈল (পঁচানো) বেছাল (খাদে) সার দেয়ার সময় হল খাদ তৈরীর সময় মাটির উর্বরা শক্তি কম হলে ৫০০ কেজি/হে. এবং মধ্যম থেকে বেশী হলে ৩০০ কেজি/হে.।

আঁখের পোকা মাকড়ঃ

ডগার মাজরা পোকাঃ

আক্রমণের লক্ষণঃ ডিম হতে সদ্য ফুটে বের হওয়া কীড়াগুলো পাতার মধ্যশিরার মধ্য দিয়ে গর্ত করে শেষ পর্যন্ত কান্ডের উপরের মাথায় শেষ প্রান্তে পৌঁছে। নবীন পাতার মধ্যশিরার উপর পেন্সিলের ন্যায় সুড়ঙ্গ পথের উপস্থিতিই এই পোকার আক্রমণের প্রথম লক্ষণ। এই দাগ পরে লাল রং ধারণ করে। নতুন উন্মোচিত পাতার গায়ে পাশাপাশি দুটি সমান্তরাল সারিতে গুলির দাগের মতো ছিদ্রের উপস্থিতি এই পোকার আক্রমণ সনাক্ত করার আরেকটি উপায়। আক্রান্ত গাছের মাইজ পাতা মরে যায়। মরা মাইজ পাতা ধরে টান দিলে সহজে খুলে আসে না। নবীন কুশি আক্রান্ত হলে দ্রুত মারা যায়। বয়স্ক গাছ আক্রান্ত হলে শুধু বর্ধিষ্ণু অঞ্চলটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পরে চোখ হতে পার্শ্ব শাখা বের হয়।

যান্ত্রিক দমন পদ্ধতিঃ এই পোকার স্ত্রী মথ সবুজ পাতার নীচের দিকে গাদা করে ডিম পাড়ে। এগুলো সমান্য পাতাসহ কেটে সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে। জানুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত এই পোকার মথ ধরে হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলতে হবে। ফেব্রুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত আক্রান্ত গাছগুলো পোকাসহ কেটে ধ্বংস করতে হবে।

রাসায়নিক দমন পদ্ধতিঃ ফুরাডান ৫জি/কুরাটার ৫জি/ ফুরাটাফ ৫জি/ ফুরাফুরান ৫ জি/ সানফুরান ৫জি/ ব্রিফার ৫জি/ ফেনডোর ৫জি এর যে কোন ১টি কীটনাশক হেক্টর প্রতি ৪০ কেজি অথবা মার্শাল ৬জি কীটনাশক হেঃ প্রতি ৩৩ কেজি আঁখের সারির দু’পাশে নালায় প্রয়োগ করতে হবে। অতঃপর মাটি দিয়ে ঢেকে সেচ দিতে হবে। ১ম বার মার্চে এবং ২য় বার মে মাসে মোট দু’বার প্রয়োগ করতে হবে।

আগাম মাজরা পোকাঃ

আক্রমণের লক্ষণ- এই পোকার কীড়া মাটির সমতলে অবস্থিত কান্ড বা কুশির অংশ বিশেষ প্রবেশ করে। ১টি চারায় ১টি কীড়া প্রবেশ করে প্রবেশাঞ্চলের কোষ সমূহ সম্পূর্ণ খেয়ে ফেলে। ফলে গাছের মাইজ মরে যায়। মাইজ ধরে টান দিলে সহজেই খুলে আসে। আক্রান্ত নবিন কুশিগুলি মারা যায়। ঝাড়ের সব কুশিগুলো ধ্বংস হলে ক্ষেতে শূণ্যস্থানের সৃষ্টি হয়। ফেব্রুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত এই পোকার আক্রমণ তীব্র হয়।

যান্ত্রিক দমন পদ্ধতিঃ জানুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত আক্রান্ত গাছ গুলি মাটির নিচ খেকে তুলে পোকাসহ ধ্বংস করে ফেলতে হবে।

রাসায়নিক দমন পদ্ধতিঃ ফুরাডান ৫জি/ কুরাটার ৫জি/ ফুরাটার ৫জি/ সানফুরান ৫জি/এগ্রি ফুরান ৫জি/ ব্রিফার ৫জি/ ফেনডোর ৫জি/ ফুরাসান ৫জি/ রাজ ফুরান ৫জি এর যে কোন ১টি কীটনাশক হেক্টর প্রতি ৪০ কেজি অথবা মার্শার ৬জি কীটনাশক হে: প্রতি ৩৩ কেজি রোপণের সময় নালায় অথবা পোকার ২য় প্রজন্মে (ফেব্রুয়ারী মাসে) আঁখের সারির দু’পাশে ৮ সেমি গভীর নালায় ও গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করে মাটি দিয়ে ঢেকে সেচ দিতে হবে। অথবা রিজেন্ট ৫০ এসসি কীটনাশকটি হেক্টর প্রতি ২ লিটার হারে রোপণকৃত বীজখন্ডের উপর স্প্রে করতে হবে।

কান্ডের মাজরা পোকাঃ

আক্রমণের লক্ষণ- প্রাথমিক লক্ষণ হলো ক্ষেতের মধ্যে শুকনো মাথা বিশিষ্ট আঁখ গাছের উপস্থিতি। পোকা আক্রমণের ফলে উপরের সমস্ত পাতাগুলো মরে যায়। আক্রান্ত কান্ডের গায়ে গুলির ছিদ্রের ন্যায় অসংখ্য ছিদ্র দেখা যায়। এগুলো দিয়ে করাতের গুড়োর মত লাল পদার্থ বের হয়। আক্রান্ত কান্ডের মধ্যে ২০০ পর্যন্ত কীড়া পাওয়া যায়। অতিমাত্রায় আক্রান্ত কান্ডগুলো হতে ক্ষেতে আক্রমণ ব্যপকভাকে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত বয়স্ক আঁখগাছে মাত্র কয়েকটি কীড়া পাওয়া যায়। এ অবস্থায় ক্ষেতে শুকিয়ে যাওয়া মাথা সচরাচর দেখা যায় না।

যান্ত্রিক দমন পদ্ধতিঃ মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিক আক্রান্ত গাছগুলো পোকাসহ কেটে ধ্বংস করতে হবে।

রাসায়নিক দমন পদ্ধতিঃ পাদান ৪ জি হেক্টরপ্রতি ৭৫ কেজি আখের সারির উভয় পাশে নালা কেটে ছিটিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত ২-৩ বার প্রয়োগ করতে হবে।

গোড়ার মাজরা পোকাঃ

আক্রমণের লক্ষণ- এই পোকার কীড়া মাটির নীচে অবস্থিত গাছের অংশে প্রবেশ করে। সেখানকার কোষগুলি খেয়ে ফেলে। ফলে নতুন চারাগুলোর মাইজ মরে যায়। মাইজ ধরে টান দিলে সহজেই খুলে আসে না। আক্রমণ তীব্র হলে চারাগুলো মরে গিয়ে ক্ষেতে শূণ্য স্থানের সৃষ্টি হয়। বর্ষাকালে এদের আক্রমণ হ্রাস পেলেও অতিমাত্রায় আক্রান্ত ক্ষেতে ধ্বংসযজ্ঞ আঁখ কাটার আগে পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। পাতার হলুদ-বাদামী রং ধারণ গোড়ার মাজরা পোকা আক্রমণের তীব্রতা হ্রাসের একটি নিদর্শন।

যান্ত্রিক দমন পদ্ধতি- এই পোকার কীড়া ও পুত্তলীগুলো আখ গাছের নীচের অংশে থেকে যায় ফলে সেখান থেকে তারা পূর্ণাংগ মথ হয়ে নুতন আখে আক্রমণ করে। কাজেই এই পোকা দমনের জন্য আঁখ কাটার পর ঝাড়ের মোথাগুলো চাষ দিয়ে তুলে ফেলে জমা করে পোকাগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করতে হবে। এলাকায় সকল চাষীকে একযোগে এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

রাসায়নিক দমন পদ্ধতি- লরস্বান ১৫ জি হেক্টর প্রতি ১৫ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। মার্চ, মে ও জুলাই মাসে ৩ বার প্রয়োগ করলে কার্যকরীভাবে দমন সম্ভব হবে।

হোয়াইট গ্রাবঃ

আক্রমণের লক্ষণ- গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাওয়া ও পাতার হাল্কা হলুদ রং ধারণ ক্ষেতে হোয়াইট গ্রাব আক্রমণের প্রথম লক্ষণ। ভীষণভাবে আক্রান্ত গাছ মারা যায়। পোকার কীড়াগুলো শিকড়ের কোষসমূহ খেতে থাকে এবং ক্রমে সমস্ত শিকড়গুচ্ছ ধ্বংস করে। মাঝে মাঝেই পোকার কীড়াগুলো মাটির নীচে অবস্থিত কান্ডের মধ্যে ঢুকে কান্ডের কোষগুলো খেতে থাকে। আক্রান্ত আখের ঝাড়গুলো অতি সহজেই মাটি থেকে টেনে তোলা যায়।

যান্ত্রিক দমন পদ্ধতি- হোয়াইট গ্রাবের বিটলগুলো সন্ধ্যাবেলা মাঠ থেকে উঠে এসে আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা ইত্যাদি গাছে আশ্রয় নেয় এবং রাতে অবস্থান করে। আবার ভোর বেলায় মাঠে প্রত্যাবর্তন করে। গাছে আশ্রয় নেয়া বিটল জানুয়ারী থেকে মে মাস পর্যন্ত- আলোর ফাঁদে আঁটকে মারতে হবে।

রাসায়নিক দমন পদ্ধতি- ফুরাডান ৫জি/কুরাটার ৫জি/ ফুরাটাফ ৫জি/ সানফুরান ৫জি/ এগ্রি ফুরান ৫জি/ ব্রিফার ৫জি/ ফেনডোর ৫জি/ ফুরাসান ৫জি/ রাজ ফুরান ৫জি এর যে কোন ১টি কীটনাশক হেক্টর প্রতি ৪০ কেজি অথবা মার্শাল ৬জি কীটনাশক হে: প্রতি ৩৩ কেজি অথবা লরস্বান ১৫ জি কীটনাশকটি হেক্টর প্রতি ১৫ কেজি নালায় ও গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করে মাটি দিয়ে ঢেকে সেচ দিতে হবে। ১ম বার মার্চে এবং ২য় বার এপ্রিলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

উই পোকাঃ

আক্রমণের লক্ষণ- উইপোকা জমিতে রোপন করা বীজখন্ডের দুই পাশের কাটা অংশ দিয়ে ঢুকে ভিতরের সবকিছু খেয়ে ফেলতে পারে। চোখও এদের আক্রমণের শিকার হয়। বয়স্ক আখ গাছের মাটি সংলগ্ন অংশ দিয়ে ঢুকে কোষসমূহ খেতে খেতে এরা উপরের দিকে উঠতে থাকে। নবীন চারাগুলো এদের আক্রমণে মারা যায়না কিন্তু পাতা মলীন হলুদ রং ধারণ করে, কুশি বেরোনো ও শিকড় সৃষ্টি কমিয়ে দেয়।

যান্ত্রিক দমন পদ্ধতি- আশে পাশের জমিতে উই পোকার ঢিপি দেখলে তা কোদাল দিয়ে খুঁড়ে ভেঙ্গে ফেলতে হবে। রাণী উইকে খুঁজে বের করে মেরে ফেলতে হবে।

রাসায়নিক দমন পদ্ধতি- নিম্নের ক,খ,গ, ঘ. ঙ এর যে কোন একটি ব্যবস্থা অবলম্বন করে উইপোকা দমন করা সম্ভব।

ক) ১ লিটার পানিতে গাউচো ৭০ ডব্লিউএস ২ গ্রাম/ক্রুজার ৭০ ডব্লিউএস ১ গ্রাম/টিড্ডো ২০ ইসি ৭ মিলি মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করে রোপনের পূর্বে বীজখন্ডগুলো ৩০ মিনিট চুবিয়ে শোধন করে রোপন করতে হবে।

খ) রাগবি ১০ জি/পাউন্স ১.৫ জি হেক্টর প্রতি ২০ কেজি বীজখন্ড রোপনের সময় একবার (১ম বার) নালায় এবং মে মাসে (২য় বার) আখের সারির উভয় পাশে নালা কেটে নালায় ছিটিয়ে প্রয়োগ করে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে রিজেন্ট ৩ জি আর কীটনাশক হেক্টরপ্রতি ৩৩ কেজি রোপণের সময় নালায় বীজখন্ডের উপর ছিটিয়ে প্রয়োগ করে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে অথবা লরস্বান ১৫ জি কীটনাশকটি হেক্টর প্রতি ১৫ কেজি রোপনের সময় নালায় প্রয়োগ করে মাটি দিয়ে ঢেকে সেচ দিতে হবে।

গ) রিজেন্ট ৫০ এসসি কীটনাশকটি হেক্টর প্রতি ২ লিটার অথবা এডমায়ার ২০০ এসএল হেক্টরপ্রতি ১ লিটার হারে রোপনকৃত বীজখন্ডের উপর স্প্রে করে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

ঘ) ডারসবান ২০ ইসি/ পাইরিফস ২০ ইসি/ ক্লাসিক ২০ ইসি হেক্টরপ্রতি ১১.২৫ লিটার বীজখন্ড রোপণের সময় নালায় (১ম বার) মার্চ মাসে (২য় বার) এবং মে মাসে (৩য় বার) পানির সাথে মিশিয়ে আখের সারির উভয় পাশে নালা কেটে নালায় ছিটিয়ে প্রয়োগ করে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

ঙ) টলস্টার ২ ডব্লিউপি হেক্টরপ্রতি ১০ কেজি হারে পানির সাথে মিশিয়ে রোপণের সময় স্প্রে করে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। দ্বিতীয়বার মে মাসে গাছের গোড়ায় স্প্রে করে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

পাইরিলাঃ

আক্রমণের লক্ষণ- নিম্ফ এবং বয়স্ক পোকা উভয়ই দলবদ্ধভাবে সবুজ পাতার নিম্নাংশ হতে রস শোষণ করে। রস শোষণ করার সময় পোকার শরীর হতে মধু জাতীয় পদার্থ নির্গত হয় যা সুটি মোল্ড নামক ছত্রাকের আক্রমণ ও বংশবিস্তারে সহায়ক হয়। এতে পাতার আলোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।

যান্ত্রিক দমন পদ্ধতি- ফেব্রুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত হাত জাল দ্বারা নিম্ফ ও পূর্ণাঙ্গ পোকা ধরে মেরে ফেলতে হবে।

জৈবিক দমন পদ্ধতি- এদের পূর্ণাঙ্গ/ নিম্ফের পরজীবি ইপিরিকানিয়ার পিউপা ( যা পাতায় লেগে থাকে) এবং ডিমের পরজীবি টেট্রাসটিকাস পাইরিলি (পাতায় ডিমের মধ্যে থাকে) এক জমি থেকে অন্য জমিতে বা একস্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরের মাধ্যমে বিস্তার করে পাইরিলা দমন করা যেতে পারে।

রাসায়নিক দমন পদ্ধতি- এডমায়ার / ইমিটাফ নামক কীটনাশক প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর সেপ্র করতে হবে।

images4

মুড়ি আখ চাষঃ

মুড়ি আখের চাষ মূল আখ চাষের চেয়ে লাভজনক। মুড়ি আখ চাষের ক্ষেত্রে বীজের প্রয়োজন হয় না। বীজ রোপন এবং জমি তৈরীর খরচ অনেক কম লাগে। মুড়ি আখ অনেক আগেই পরিপক্কতা লাভ করায় আগাম গুড় উৎপাদন করা যায় এবং চিনি কলে অধিক চিনি আহরন করা যায়। মুড়ি আখ চাষের জন্য আখ কাটার ৭ দিনের মধ্যে মূল আখের পাতা ও পরিত্যাক্ত অংশ পুড়িয়ে, মোথা মাটির সমতলে কেটে ফেলা হয়। এরপর দুই সারি আখের মাঝে লাংগল দিয়ে ৩/৪ টি চাষ বা কোদাল দিয়ে কুপিয়ে অনুমোদিত মাত্রার অর্ধেক ইউরিয়া ও এমপি এবং সম্পূর্ণ টিএসপি সার প্রয়োগ করে মই দিয়ে জমি সমান করা হয়। অবশিষ্ট ইউরিয়া ও এমপি সার কুশি বের হওয়ার সময় উপরি প্রয়োগ করতে হবে। হেক্টর প্রতি সারের মাত্রা মূল আখ চাষের অনুরূপ তবে মুড়ি আখের ক্ষেতে হেক্টর প্রতি ১০০ কেজি ইউরিয়া সার বেশী দিতে হয়।

নতুন রোপনকৃত ইক্ষু কাটার পর সেই জমিতে কমপক্ষে একবার মুড়ি আখের চাষ করা উচিৎ। যে জমিতে মুড়ি আখ চাষ করা হবে তার আখ কোন সময়ই তীব্র শীতের মধ্যে কাটা উচিৎ নয়। ক্ষেতে ফাঁকা জায়গা দেখা গেলে পলিব্যাগে উৎপন্ন চারা (ফসল কাটার ১ মাস পূর্বে তৈরীকৃত) দ্বার তা পূরণ করতে হবে। সাধারণত জমির আখ কাটার ১৫ দিনের মধ্যেই নতুন চারা দিয়ে গ্যাপ পূরণ করা ভাল।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *