ধান চাষের ইতিহাস থেকে জানা যায় প্রত্নতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক ও ধান বিজ্ঞানীদের মধ্যে ধানের বিভিন্ন জাতের বিবর্তন নিয়ে যথেষ্ট মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও সবাই স্বীকার করেন যে আদি ধান জাতের প্রথম আবির্ভাব ঘটে গন্ডোয়ানা ল্যান্ড নামক প্রাচীন বিশাল মহাদেশে।
কালক্রমে গন্ডোয়ানা ল্যান্ড ভেঙ্গে চুরে যে অংশটি বর্তমানে ভারত উপমহাদেশে তা থেকেই আদি ধান জাতের ক্রম বিকাশ ঘটতে থাকে এবং সৃষ্টি হয় ওরাইজা জেনেরার। পরবর্তীকালে এই ওরাইজা থেকে সৃষ্টি হয় অনেক উপজাতের, যার মধ্যে ওরাইজা সেটাইভা ও ওরাইজা গ্লারিরীমা পৃথিবীর দুই মহাদেশে যথা ওরাইজা সেটাইভা চিরস্থায়ী হয়ে যায় এশিয়ায় ও গ্লারিরীমা সারা আফ্রিকায় জুড়ে বসে।
বাংলাদেশের মধুপুর বা বরেন্দ্র ভূমি যথেষ্ট পুরাতন (মধ্য মায়োসীন থেকে গ্লায়োসীন যুগ) বটে, তবে এসব অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা হয়নি। এসব অঞ্চলে বুনো ধান জাত এখনো পাওয়া যায়। প্রত্নতাত্ত্বিকরা চীনের জোমিয়াং প্রদেশের ইউইয়াও কাউন্টির হেমেডু গ্রামে ৭০০০ বছর পূর্বে ইন্ডিকা জাতের ধানের খোঁজ পান এবং প্রমান পান যে সে সময়ে হ্যাংগঝু উপসাগরের কূলবর্তী অঞ্চলেই ইন্ডিকা ধানের আবাদ প্রচলিত ছিল। থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার সীমান্তের ভূতের গুহানামে পরিচিত স্থানে ধানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, ওই গুহা প্রায় ১০০০ বছরের পুরাতন এবং ওই অঞ্চলের ধানের আবাদ আদিকালে প্রায় ৬০০০ বছরের পুরাতন বলে ওদের ধারণা।
ইংরেজি রাইস শব্দের উৎপত্তি
চীনের ব্যবসায়ীরা প্রাচীন যুগ থেকেই আরব-মিশর দেশের সঙ্গে স্থলপথে ব্যবসা করতে থাকেন। নানাবিধ পণ্যের মধ্যে চীনের রেশম বস্ত্র ও চাল বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে। চিনের নিংপো উপভাষায় ধানকে উলিজ বা উলিস বলা হতো। এই উলিজ শব্দকে আরবীয়রা ওরাজ নাম দেয়, যা পরবর্তী সময়ে গ্রিক ভাষায় ওরিজা বা রাইস হয়ে যায়। রাইস বলতে ধান বোঝায় তবে আমাদের দেশে রাইস মানে চাল এবং ধানের ইংরেজি নাম পেডি। চাল হলো মিলড রাইস বা কলে ছাঁটা ধান।
ধান শব্দের উৎপত্তি
পুরাতন দ্রাবিড় ভাষায় ধানকে অরছি বলা হতো। কিছু ভারতীয় পন্ডিতের মতে, ধানকে ব্রীহী বলা হতো। ধান শব্দটি সংস্কৃত নয়। বাংলা ভাষাতত্ত্ববিদদের মতে, দন থেকে ধান শব্দ হয়, যা থেকে ধান্য (ধন্য যা ধনরূপে জাত)। ধন্য পালি শব্দ যা থেকে প্রাকৃত ভাষায় ধান্য শব্দের বিকাশ হয়। এই প্রাকৃত ধান্য শব্দ থেকেই বাংলা ভাষায় ধান শিব্দের উৎপত্তি।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ