পাট তন্তু জাতীয় উদ্ভিদ। পাট গাছের ছাল থেকে পাটের আঁশ সংগ্রহ করা হয়। আমাদের দেশে পাট কে সোনালি আঁশও বলা হয়। কারণ পাটের আঁশের রঙ সোনালি। পাট থেকে বিভিন্ন প্রকার পাটজাত দ্রব্য উৎপাদিত হয়ে থাকে। যেমন- সুতা, থলি, চট, দড়ি, সুতলি, কার্পেট, ত্রিপল, গালিচা, গদি, শিঁকা। এ ছাড়া পাটখড়ি দ্বারা কাগজ, পার্টেক্স, হার্ডবোর্ড ইত্যাদি তৈরী হয়।
বিশ্বে মোট ১৮.৮৮ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয় এবং ৩২ লাখ মেট্রিক টন পাট উৎপাদিত হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদন হয় প্রায় এক হাজার ৬৫৬ কেজি। পাট উৎপাদনে বিশ্বে এশিয়া মহাদেশই প্রথম।বিশ্বের ৯৫ শতাংশ পাট এশিয়ায় জন্মে। পাট উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়।
২০০৪ সালে বাংলাদেশে পাট উৎপাদনহয় ৮.৩৩ লাখ মেট্রিক টন। এ সময় ৫ লাখ এক হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয় এবং হেক্টরপ্রতি উৎপাদন হয় এক হাজার ৬২৩ কেজি। বিশ্বের মোট উৎপাদনের তুলনায় এ পরিমাণ ২৬.০২ শতাংশ।
মেস্তা পাট উৎপাদনে ভারত প্রধান দেশ। ১৭.৮২ লাখ মেট্রিক টন পাট উৎপন্ন হয় ভারতে। বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৫৫.৬৮ শতাংশ। ৯.৯০ লাখ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদন হয় ভারতে।হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদনের পরিমাণ এক হাজার ৭৫৮ কেজি।
বাংলাদেশে উৎপাদিত পাটের ২৫শতাংশ পাটে আমাদের চাহিদা পূরণ হয় এবং ১৫ শতাংশ ভারতে ও ৬০ শতাংশ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হয়। বাংলাদেশে পাটগবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৪ সালে।
ভারতীয় উপমহাদেশে পাট চাষের আগমন ঘটে ১৭৯৫ সালে তৎকালীন বোটানিক্যাল গার্ডেনের পরিচালক Sir William Roxburg’র মাধ্যমে। তাঁর গবেষণার ফল হিসেবে পাট থেকে পাটজাত দ্রব্য উৎপাদনের ইতিহাসের সূত্রপাত হয়। পরবর্তী সময়ে কাঁচামাল হিসাবে পাট ব্যবহার করে ১৮৩২ সালে Thomas Neigh প্রতিষ্ঠা করেন উন্নত ড্যান্ডি ইন্ডাস্ট্রি। এর পর পর্যায়ক্রমে আজকের এ সোনালি আঁশের বিকাশ ও ব্যবহার পৃথিবীর মানুষকে আকৃষ্ট করেছে।
পাট বিভিন্ন জাতের হয়ে থাকে। পাটের জাত অনুযায়ী পাট উৎপাদনে জমি, চাষ পদ্ধতি ও সময় উপযোগী জৈব এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার হয়ে থাকে। আমাদের দেশে তোষা ও দেশি দুই ধরনের পাট হয়ে থাকে।এ ছাড়া অল্প পরিমাণ কেনাফ এবং মেস্তা পাট উৎপাদিত হয়ে থাকে। তোষা পাট প্রধানত উঁচু জমিতে ভালো জন্মে। পক্ষান্তরে দেশি পাট নিচু, মধ্যম ও উঁচু সব প্রকার জমিতে জন্মে। উর্বর জমি ছাড়াও যে সব জমিতে খরিফ মৌসুমে বোনা আউশ ধান এবং পাটের ফলন সন্তোষ জনক হয় না সে সব জমিতেও কেনাফ এবং মেস্তা ভালো হয়। তবে মেস্তা বেলে মাটির জন্য অধিক উপযোগী এবং কেনাফ নিচু জমিতেও হতে পারে।
তোষা, দেশি, কেনাফ এবং মেস্তার মধ্যে তোষা পাটের আঁশ সবচেয়ে সুক্ষ্ণ, মসৃণ এবং শক্ত হয়। পাট থেকে কাপড় ও পাটজাত দ্রব্য তৈরীতে তোষা পাটের উপযোগিতা অধিক বলে এ পাটের দামও অপেক্ষাকৃত বেশী।তাই তোষা পাটের আবাদ আমাদের দেশে বাড়ছে। পৃথিবীতে ২৯ প্রকার পাটের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে, তার মধ্যে তোষাই সর্বোৎকৃষ্ট।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ