মায়ের দুধের কোন বিকল্প নেই। ছয়মাস বয়স পর্যন্ত প্রতিটি শিশুর একমাত্র খাদ্য হ’ল মায়ের বুকের দুধ। এ ছাড়া অন্য কিছু খায়ানো হলে শিশুর জীবন হয়ে পড়ে ঝুকিপূর্ণ ও বিপদগ্রস্ত। যে ক্ষতি পরবর্তী সারা জীবনেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়, জানিয়েছেন বিশেসজ্ঞগণ।
জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে কারণ শালদুধ শিশুর প্রথম পায়খানা হতে সাহায্য করে, যা শিশুকে জন্ডিস হতেও রক্ষা করে। শালদুধে প্রচুর পরিমাণে রোগ প্রতিরোধকারী ইমিউনোগ্লোবিউলিন থাকে, যা শিশুর প্রথম টিকা হিসেবে কাজ করে, এবং এক ধরনের এনজাইম যা চর্বি হজম করতে সাহায্য করে। মায়ের দুধে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে, ফলে শিশুকে আলাদা ভাবে পানিও খায়াতে হয় না এবং ছয়মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়ালে ১৩ শতাংশ শিশুমৃত্যু রোধ করা সম্ভব।
এ সকল বিষয়ে মায়েরা কতটুকু ওয়াকিবহালঃ খুলনা মহানগরীর শিশু হাসপাতাল সহ বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্র ঘুরে মোট ৩০ জন মহিলার সাথে আলাপ হয় যারা প্রত্যেকেই দুইদিন থেকে ছয়মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের মাতা। তাদের শিশুরা কি খায় জানতে চাইলে ১৯ জন মহিলা জানান যে তাদের শিশু শুধু বুকের দুধ খায়। বাকি ১১ জন মহিলা জানান যে তাদের শিশুরা চিনির পানি এবং বিভিন্ন গুড়োদুধ যথা এলডোরিন, বেবিকেয়ার, বায়োমিল ইত্যাদি পান করে। বুকের দুধ বাদে কেন তারা এ সকল দুধ পান করে জানতে চাইলে তারা জানান, বুকের দুধের সমস্যা হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শেই তারা শিশুদের গুড়োদুধ পান কারান।
অনেক মা-ই অভিযোগ করেছেন যে তাদের বাচ্চার প্রয়োজনীয় পরিমাণ দুধ তাদের বুকে হয় না, সে কারণেই তারা তাদের বাচ্চাকে গুড়োদুধ বা বিকল্প খাদ্য খাওয়ান। তবে বিশেসজ্ঞ চিকিৎসকদের বক্তব্য, মায়েদের এ সকল অভিযোগ সঠিক নয়, কারণ বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর অভ্যেস করলেই মায়েদের বুকে দুধ আসে। চিকিৎসকগণ বলেন, কোন শিশু যখন মায়ের দুধ খেতে নিপিলে মুখ দেয় তখনই মায়ের মস্তিস্কে একধরনের সংকেত যায় যা একধরনের হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে মায়ের বুকে দুধ তৈরীতে কায করে এবং দুধ তৈরী হতে থাকে।
কেন ছয়মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো জরুরী : মায়ের বুকের দুধ হ’ল শিশুর রোগ প্রতিরোধক, যাতে রোগ প্রতিরোধকারি ইমিউনোগ্লোবিউলিন থাকে। ছয়মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ালে শিশুর ডায়রিয়া, সেপসিস, নিউমোনিয়া, কান পাকা এবং ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি রোগ ইত্যাদি থেকে শিশু রক্ষা পায়।
শুধুমাত্র মায়ের দুধেই একমাত্র জীবন্ত উপাদান ‘ডিএইচএ‘ থাকে, যা শিশুর মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। যা মায়ের দুধ ছাড়া অন্য কোন খাদ্য উপাদানে থাকে না।
শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ালে মায়ের স্তন ও ওভারি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। মায়ের মানসিক সুস্থ্যতা বজায় থাকে এবং গর্ভফুল তাড়াতাড়ি পড়ে ও রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়, ফলে মায়ের রক্ত স্বল্পতা হওয়ার আশংকা কমে যায়।
এর পাশাপাশি বিপুল পরিমান অর্থ খরচ করে গুড়োদুধ ক্রয় করে শিশুকে খাওয়ানো মানে বিভিন্ন ধরনের রোগ ক্রয় করে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি তৈরী করা এবং তার থেকে নিস্কৃতি পেতে চিকিৎসকের সরনাপন্ন হয়ে শিশুকে বাঁচাতে বিপুল পরিমানের ওষুধ ক্রয় করা। আর এ সবের মাধ্যমে একদিকে যেমন শিশুকে মৃত্যুর ঝঁকিতে ঠেলে দেওয়া হয় অন্যদিকে তেমনি বিপুল পরিমাণ অর্থও খরচ হয়।
এসব থেকে শিশু এবং পরিবারকে একমাত্র রক্ষা করতে পারে মায়ের বুকের দুধ। তাই সুস্থ্য ও ভবিষ্যৎ নিরোগ বুদ্ধিমান শিশুর বিকাশ নিশ্চিৎ করতে এবং পরিবারের বাড়তি খরচ রোধ করতে অবশ্যই ছয়মাস পর্যন্ত প্রতিটি শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেসজ্ঞ চিকিৎসকগণ।
এ সকল বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ ইয়াসিন আলী সরদার বলেন, প্রতিটি শিশুকে ছয়মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে, এর সাথে কোন আপোষ নয়। তিনি বলেন, এটা নিশ্চিৎ করতে সরকারী বে-সরকারী বিভিন্ন ভাবে প্রচার প্রচেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে গ্রামের চেয়ে শহরের মায়েরা পিছিয়ে আছে, এ বিষয়টি সফল করতে অরও ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে এবং যে সকল চিকিৎসকগণ মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে ক্ষতিকর পরামর্শ দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ