আজ নাগরিক সমাজের ১৪টি সংগঠন ও নেটওয়ার্কের উদ্যোগে খুলনা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘জলবায়ু উদ্বাস্তুদের অধিকার রক্ষায় জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা প্রণয়ন’র দাবি জানানো হয়।
ন্যানসেন ইনিশিয়েটিভের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৩-৫ এপ্রিল খুলনায় অনুষ্ঠিতব্য জলবায়ু ও দুর্যোগতাড়িত বাস্তুচ্যুতি বিষয়ক আন্তরাষ্ট্রীয় সম্মেলন উপলক্ষ্যে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সার্ক ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৪টি দেশের সরকারি প্রতিনিধি ছাড়াও জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের শতাধিক প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জলবায়ু বাস্তুচ্যুতির উপর আলোকপাত করে শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ অগত্যা বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৩ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। তিনি ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের অব্যাহত দাবির কথা তুলে ধরে বলেন, এ বাস্তুচ্যুতি ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগ একান্ত জরুরী। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আহসান উদ্দীন আহমেদ বলেন, জলবায়ু দুর্যোগের জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলোকেই জলবায়ুতাড়িত বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসনে দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি জরুরী ভিত্তিতে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা তৈরির উপর গুরুত্বারোপ করেন।
তবে প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তারা দাবি করেন, জলবায়ু পরিবর্তন নয়, মনুষ্য সৃষ্ট অপকর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে। এডিবি, বিশ্বব্যাংক সহ বিভিন্ন ঋণদানকারী সংস্থার হাজার হাজার কোটি ঋণের টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে জেলা প্রশাসন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় দেশের শত শত নদী-খালের স্বাভাবিক অবকাঠামো নষ্ট করে প্রাকৃতিক জলপ্রবাহ ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে এবং নদী-খাল লীজ দিয়ে অবৈধ দখলের সুযোগ করে দিয়েছে। এর ফলে একদিকে প্রাকৃতিক ভূমিগঠন প্রক্রিয়া ধ্বংস হয়েছে, অন্যদিকে নদী-খাল ধ্বংস হওয়ায় বন্যা জলোচ্ছাসের পানি নদী-খালে স্থান না পেয়ে জনবসতি এলাকায় ঢুকে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে, ফলে মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। কিন্তু এ সকল বিষয় সংবাদ সম্মেলনে স্থান পায় নি বরং এ সব কিছুই জলবায়ু পরিবর্তনের ফল হিসেবে দেখানো হচ্ছে যা আসলে আন্তর্জাতিক ঋণ ব্যবসায়ীদেরই সুযোগ করে দিচ্ছে। ইতোমধ্যেই জলবায়ু ফান্ড’র টাকা এডিবি কে ঋণ হিসেবে বিভিন্ন দেশে খাটানোর ঘোষনাও দেওয়া হয়েছে। বক্তারা বলেন, জরবায়ু পরিবর্তনের কল্পিত দোহাই প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে ঋণের টাকায় দেশের প্রাকৃতিক অবকাঠামো ধ্বংসের অপরাধ কে ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রচারের আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ক্লিন’র প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন সিএসআরএল’র সাধারণ সম্পাদক শরমিন্দ নিলোর্মী, সিজিসি’র ড. আহসান উদ্দীন আহমেদ, ইক্যুইটিবিডি’র প্রধান সঞ্চালক রেজাউল করিম চৌধুরী ও অক্সফ্যাম’র অ্যাডভোকেসি কোঅর্ডিনেটর তানভীর মাহমুদ।
সংবাদ সম্মেলন শেষে কাউন্টার ফটো’র দীন মোহাম্মদ শিবলীর জলবায়ু বাস্তুচ্যুতি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও ক্যাম্পেইন পোস্টকার্ড উম্মোচন করেন খুলনা নাগরিক ফোরামের চেয়ারপারসন শেখ আব্দুল কাইয়ুম।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ