এসডিজি বাস্তবায়নে আইনী বাধ্যবাধকতামূলক জলবায়ু চুক্তি অপরিহার্য:
জাতিসংঘের আসন্ন সম্মেলনে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর স্বার্থে জোরালো ভূমিকা পালনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছে ২৩টি নাগরিক সংগঠন।
তারা বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রা কখনই পূরণ করা সম্ভব নয় যদি জলবায়ু পরির্বতনের জন্য দায়ী বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা না যায়। তাই, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যারা প্রধানত দায়ী তাদেরকে একটি আইনী বাধ্যবাধকতামূলক চুক্তির আওতায় আনার জন্য একটি চুক্তি আসন্ন প্যারিস সম্মেলনে যেন হতে পারে তার দাবি এই সম্মেলনে জানাতে হবে।
আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কৃষক, শ্রমিক এবং অধিকার ভিত্তিক ২৩টি সংগঠন ‘প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে আমাদের কথাগুলো তুলে ধরুন, এসডিজি বাস্তবায়নে আইনী বাধ্যবাধকতামূলক জলবায়ু চুক্তি অপরিহার্য’ শীর্ষক এই মানব বন্ধন আয়োজন করে। ইক্যুইটিবিডি আয়েভফঁশ অনুষ্ঠিত এই মানব বন্ধনটি আয়োজনে সহযোগিতা করে আন্তর্জাতিক সংগঠন সিএনসিএ এবং এ্যাকশন ২০১৫।
মানব বন্ধনে আয়োজকদের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইক্যুইটিবিডি’র মোস্তফা কামাল আকন্দ। এতে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের বদরুল আলম, উন্নয়ন ধারার আমিনুর রসুল বাবুল, অর্পনের কাদের হাজারী, জাতীয় শ্রমিক জোটের আব্দুল ওয়াহাব, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের জায়েদ ইকবাল খান, বাংলাদেশ ভূমিহীন সমিতির সুবল সরকার এবং পাবলিক সার্ভিস ইন্টারন্যাশনালের কাজী হাফিজুর রহমান।
লিখিত বক্তব্যে মোস্তফা কামাল আকন্দ উল্লেখ করেন, বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর প্রায় ২-৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি স্বীকার করতে হয় এবং আগামীতে এর পরিমাণ আরও বাড়বে বলেই মনে করা হয়। এই পরিবর্তন মোকাবেলা করার জন্য বর্তমান প্রচলিত উন্নয়ন কৌশলের পরিবর্তন আনতে হতে পারে, যার ফলে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ঘাটতিদেখা দিতে পারে এবং উন্নয়ন গতি শ্লথ হতে পারে। কোনও আইনী বাধ্য বাধকতা না থাকায় গত বিশ বছরে কার্বন কমার বদলে বেড়েছে প্রায় ৬০%! তাই বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের পক্ষ থেকে আইনী বাধ্যবাধকতামূলক একটি জলবায়ু চুক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা এই সম্মেলনেই তুলে ধরতে হবে। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু তাড়িত বাস্তুচ্যুতদের সার্বজনীন প্রাকৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের অধীনে একটি নতুন সনদ বা প্রোটোকল গ্রহণের জোরালো দাবি উত্থাপনেরও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়।
আমিনুর রসুল বাবুল বলেন, বাংলাদেশের এমডিজি অর্জনের জন্য প্রতি বছর ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সহায়তার প্রয়োজন হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ গড়ে প্রতি বছর বৈদেশিক সাহায্য পেয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের প্রতিশ্রুতি রাখেনি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে যে অর্থের প্রয়োজন হবে, তার জন্য ধনী দেশগুলো প্রতিশ্রুতি হয়তো দেবে, কিন্তু যথারীতি সেটা তারা পূরণ করবে না। আসন্ন সম্মেলনে এই বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা প্রণয়নের দাবি করতে হবে।
বদরুল আলম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য কৃষকেরা দায়ী না হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের জীবন-জীবিকা আজ হুমকির মুখে। জাতিসংঘের সম্মেলনে কৃষকের স্বার্থে এই কথাগুলো বলতে হবে।
কাজী হাফিজুর রহমান বলেন, এসডিজি বাস্তবায়ন সফল করতে হলে এবং এর সাফল্যকে ধরে রাখতে হলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আর সেটার জন্য বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
সুবল সরকার বলেন, এমডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য লাভ করেছে, এর নেতৃত্ব দিয়েছে অবশ্যই সরকার, কিন্তু নাগরিক সমাজেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে নাগরিক সমাজের জন্য একটি অবাধ পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং সকল ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ