নগরীর ‘ভুতের বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত বর্তমান আনসার ক্যাম্পের পুরনো বাড়িটিতে মুক্তিযুদ্ধকালে দেশের প্রথম রাজাকার ক্যম্প গড়ে ওঠে। ওই বাড়ির সামনের রাস্তায় একটি পরিচিতি ফলক স্থাপন করা হয়েছে। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৫টার দিকে এই ফলক স্থাপন করেন। এর আগে গত ২৫ অক্টোবর ফলক স্থাপনের কাজ করতে গেলে খুলনার আনসার ক্যাম্পের অফিসারগণ বাধা দেন। তারা কাজ বন্ধ করে দেন। বৃহস্পতিবারও তারা কাজে বাধা দেন। তবে বাধা উপেক্ষা করেই পরিচিতি ফলকটি স্থাপিত হয়েছে। এসময়ে বিপুল সংখ্যক জনতা উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর সারাদেশের বধ্যভূমি, রাজাকার বাহিনীর অত্যাচারের স্থানসমূহ চিহ্নিতকরণের অংশ হিসেবে এই পরিচিতি ফলক স্থাপন করে। ফলক স্থাপনকালে আয়োজিত সমাবেশে জাদুঘরের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ও ট্রাস্টি সম্পাদক ডা: শেখ বাহারুল আলম বক্তৃতা করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি ড. মাহবুবুর রহমান, ট্রাস্টি গৌরাঙ্গ নন্দী, ট্রাস্টি হুমাযূন কবির ববি, ট্রাস্টি শঙ্কর কুমার মল্লিক, জাদুঘর পরিচালনা কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, রূপসা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফ ম সালাম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার অধ্যাপক আলমগীর কবির, শ্রমিক নেতা বিএম জাফর সহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ।
প্রফেসর মামুন তাঁর বক্তৃতায় বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনাবাসীকে জাদুঘর উপহার দিয়েছেন। সেই জাদুঘর সারাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানী বাহিনী, রাজাকার, আলবদর, আলশামসের অত্যাচারের স্থানসমূহ চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে খুলনায় বেশ কয়েকটি স্থানে পরিচিতি ফলক স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, খুলনায় জন্মগ্রহণকারী জামায়াত নেতা একেএম ইউসুফ মুত্তিযুদ্ধকালে খুলনার আনসার ক্যাম্পে রাজাকার ট্রেনিং ক্যাম্প গড়ে তোলেন। মাওলানা ইউসুফ যুদ্ধাপরাধের দায়ে হাজতে থেকে মারা গেছে। তার অত্যাচারের ইতিহাস খুলনাবাসীসহ দেশবাসীকে জানাতে হবে। বর্তমানে আনসারবাহিনী একটি দেশপ্রেমিক আনসার বাহিনী হিসেবে দেশমাতৃকার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। পরিচিতি ফলকটি যেখানে স্থাপন করা হয়েছে সেটি খুলনা আনসার ও ভিডিপি জেলা কমান্ড্যান্ট ও আনসার উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশনের জায়গায়।
মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানী সেনাদের সহায়তা করার জন্যে জামায়াতে ইসলামী নেতা মাওলানা এ কে এম ইউসুফ একাত্তরের মে মাসে এই বাড়িতেই ৯৬ জন জামায়াত যুব ক্যাডার নিয়ে রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলে। রাজাকার নামটিও তার দেয়া। এটাই একাত্তরে দেশের প্রথম রাজাকার ক্যাম্প। পরে ১৯৭১ সালের ১ জুন জেনারেল টিক্কা খান ‘পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অর্ডিন্যান্স-১৯৭১’ জারি করে আনসার বাহিনীকে বিলুপ্ত করে রাজাকার বাহিনীতে রূপান্তরিত করে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের পূর্ণাঙ্গ সেনা বাহিনীর সদস্যদের সমান ক্ষমতা অর্পণ করে এক অধ্যাদেশ জারি করে (নং ৪/৮/৫২/৫৩৪ পিএস-১/ক ৩৬৫৯ ডি ক)। এই রাজাকাররাই মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানী সেনাদের সহযোগী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা ও এদেশবাসীকে হত্যা-নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ প্রভৃতি মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ