মুক্তিযুদ্ধকালে খুলনায় পরিকল্পিত গণহত্যার প্রথম শিকার মহাদেব চক্রবর্র্তী স্মরণে সরকারি পাইওনিয়ার মহিলা কলেজ প্রাঙ্গনে স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়। আজ এ স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন ইতিহাসবিদ ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট’র সভাপতি প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন।
এসময় তিনি বলেন, মহাদেব চক্রবর্তীর বাড়িতেই স্থাপিত বর্তমান সরকারি পাইওনিয়র মহিলা কলেজটি তাঁর নামে নামকরণ করা হ’ক। ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’র উদ্যোগে গণহত্যা স্থল, বধ্যভূমি ও নির্যাতন কেন্দ্র চিহ্নিতকরণ ও স্মৃতিফলক স্থাপনের অংশ হিসেবে এই স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়।
স্মৃতিফলক উন্মোচান্তে কলেজ শিক্ষক মিলনায়তনে অধ্যক্ষ প্রফেসর লুৎফুন্নাহারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, একাত্তরের বিজয় নিয়ে অনেক কথা হয়, অনেক কাজ হয় । কিন্তু হত্যা নির্যাতন নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না। নির্যাতনের তথ্য বর্তমান প্রজন্মকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া হয় না। খুলনায় স্থাপিত দেশের একমাত্র ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর এই নির্যাতনের চিত্র সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি বিম্ময় প্রকাশ করে বলেন, মহাদেব চক্রবর্তীর বাড়িতে কলেজ স্থাপিত হয়েছে। তার শেষ স্মৃতিচিহ্ন দ্বিতল ভবনটিও ২০১৪ সালে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে। তার একটি ছবিও সংরক্ষণে নেই। তার নাম নেই কলেজের কোথাও। যা খুবই দু:খজনক। তিনি সরকারী পাইওনিয়ার মহিলা কলেজটি মহাদেব চক্রবর্তীর নামে নামকরণের জন্যে একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্যে কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তাছাড়া অন্তত:পক্ষে কলেজের একটি ভবন মহাদেব চক্রবর্তীর নামে নামকরণের আহ্বান জানান। বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে কলেজের বাইরে একটি স্মৃতিফলক স্থাপনের ব্যবস্থা নেয়ারও অনুরোধ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক ডা: শেখ বাহারুল আলম, পাইওনিয়ার কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর দীপা বন্দোপাধ্যায়, সাবেক অধ্যক্ষ মিনতী রাণী মন্ডল, উপাধ্যক্ষ প্রফেসর জাহানারা বেগম, অধ্যাপক ভার্গব বন্দ্যেপাধ্যায়, মনোয়ার হোসেন, অদ্যাপক শঙ্কর মল্লিক প্রমূখ।
প্রসঙ্গতঃ একাত্তরের ১ এপ্রিল ভোরবেলায় খুলনাবাসীর ঘুম ভাঙ্গে মহাদের চক্রবর্তীসহ ছয় জনকে হত্যার খবর শুনে। এটি ছিল খুলনা শহরে পাকিস্তানী সেনা কর্তৃক পরিকল্পিত গণহত্যার প্রথম ঘটনা। মানুষের ভাবনায়ও ছিল না যে, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধী মুসলিম লীগ নেতা খান-এ-সবুর’র ঘনিষ্ঠ বন্ধু অকৃতদার মহাদেব চক্রবর্তীকে পাকিস্তানী সেনারা খুন করতে পারে! নগরীর আলতাপোল লেনের মাথায় সাউথ সেন্ট্রাল রোডে সাতজনকে গুলি করে ফেলে রাখা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে একজন বেঁচে গিয়েছিলেন। মুত্যুবরণ করেছিলেন ছয় জন যারা হলেন, মহাদেব চক্রবর্তী, মহাদেব চক্রবর্তীর বাড়ির কর্মী উদ্ভব, অ্যাডভোকেট নকুলেশ্বর চক্রবর্তীর দুই ছেলে (নাম জানা যায়নি) অজ্ঞাতনামা আরও দুই জন।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ