সুন্দরবন-সংলগ্ন এলাকায় সব ধরনের শিল্পায়ন বন্ধ করার জোর দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। শনিবার (২১ নভেম্বর ২০২০) সকাল ১০টায় খুলনা নগরীর হোটেল টাইগার গার্ডেনে আয়োজিত ‘সুন্দরবন-সংলগ্ন অঞ্চলে শিল্পায়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও মানবাধিকার’ শীর্ষক এক নাগরিক সংলাপ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) এবং সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ (সিইপিআর)’র উদ্যোগে নাগরিক সংলাপটি আয়োজিত হয়। সিইপিআর’র চেয়ারপারসন গৌরাঙ্গ নন্দীর সভাপতিত্বে সংলাপটি সঞ্চালনা করেন সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির। সংলাপের শুরুতে সুন্দরবন-সংলগ্ন অঞ্চলে শিল্পায়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও মানবাধিকার বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্লিন’র প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী।
মূল প্রবন্ধে হাসান মেহেদী বলেন, সুন্দরবন এবং এর সংলগ্ন প্রকৃতিগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকায় (ইসিএ) সর্বমোট ১শ ৯০টি বিভিন্ন আকারের শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এর মধ্যে ৩২টি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বা লাল শ্রেণীভূক্ত। এই অবস্থায় তিনি সুন্দরবনের-সংলগ্ন ইসিএ এলাকায় অবস্থিত সব ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধের জোর দাবি জানান।
সংলাপে সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, সুন্দরবনের আশেপাশে শিল্পায়নের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী হলো মংলা সমুদ্রবন্দর। এই বন্দরের কারণেই সব ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তিনি বলেন, সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে আজকে যে ক্ষয়ক্ষতিগুলো দেখা যাচ্ছে এর সবকিছুরই গোড়াপত্তন মংলা বন্দর হওয়ার পর থেকে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. দিলীপ কুমার দত্ত বলেন, মানুষের অনিয়ন্ত্রিত মুনাফাভিত্তিক কার্যক্রমের ফলে সুন্দরবন আজ হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশ রক্ষার জন্য তিনি পরিবেশবান্ধব ও সচেতনতামূলক সংস্কৃতির চর্চার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সরকারের ৮৭টি অধ্যাদেশ, আইন এবং নীতিমালা সরাসরি সুন্দরবনের ওপর প্রভাব ফেলে। সুতরাং সুন্দরবনকে রক্ষার জন্য আমাদের সব নীতিমালার সমন্বয় অতি জরুরি। তিনি এ অঞ্চলের ভূমি ব্যবহার ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সমন্বিত মনিটরিং-এর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
একই ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক শরীফ হাসান লিমন সুন্দরবন রক্ষার জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম হাতে নেয়ার আহ্বান জানান। এছাড়াও তিনি রাজনৈতিক দলের পরিবেশ বিষয়ক কমিটি সক্রিয় করার উপর জোর দেন।
সমাপনী বক্তব্যে সভাপতি গৌরাঙ্গ নন্দী আইনপ্রণেতা, গবেষক ও পরিবেশ অধিকার কর্মীদের সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণের দাবি জানান। সুন্দরবনের প্রকৃতিগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকার প্রবেশস্থলে সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপনের দাবি জানিয়ে তিনি সংলাপের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
নাগরিক সংলাপে আরও অংশ নেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি’র সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র’র সমন্বয়কারী হুমায়ুন কবির ববি, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি’র বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল, ইনিশিয়েটিভ ফর রাইট ভিউ’র সমন্বয়কারী জাভেদ খালিদ পাশা জয়, মংলা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শেখ নূর আলম, রামপাল প্রেস ক্লাবের সভাপতি এমএ সবুর রানা, সুন্দরবন অঞ্চলে শিল্পায়নের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শাহারুন্নেছা বেগম প্রমুখ।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ