উন্নত বাংলাদেশ গঠনের অভিলক্ষ্য অর্জনে ফার্মেসী
শিক্ষার উৎকর্ষ ও ব্যপ্তিতে গুরুত্বারোপ
নানা আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী ডিসিপ্লিনের রজতজয়ন্তী ও পুনর্মিলনী উদযাপিত হয়েছে।
ফার্মেসী ডিসিপ্লিন এবং ডিসিপ্লিনের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে আজ ৩ মার্চ শুক্রবার বেলা ১১টায় আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দেশে ঔষধ শিল্প ও সহায়ক প্রতিষ্ঠানের খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব, শিল্পোদ্যোক্তা বিকন মেডিকেয়ারের চেয়ারম্যান এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ এবাদুল করিম, এমপি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ফার্মেসী শিক্ষার প্রসারের ফলে এখন বছরে কয়েকশত গ্রাজুয়েট বের হচ্ছে। এর মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী গ্রাজুয়েটরা দেশের ওষুধ শিল্পসহ নানা পেশায় দক্ষতার সাথে কাজ করছে। তিনি বলেন, এখন আমরা ওষুধ শিল্পে ভালো করছি। কিন্তু এ অবস্থায় বসে থাকলে চলবে না। আমাদের ফার্মেসী শিক্ষা ও গবেষণার ব্যাপ্তি ঘটাতে হবে। নতুন নতুন দিকে গবেষণা করতে হবে। একচল্লিশ সালে উন্নত বাংলাদেশ গঠনের অভিলক্ষ্য অর্জনে ফার্মেসীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এখন ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবরেশন বাড়াতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে এগোতে হবে। তিনি আরও বলেন, ফার্মাসিস্টদের রোগী সেবা, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। ফার্মসিস্টদের এখন প্রাকটিস করার সুযোগ করে দিতে হবে। তাহলে তারাও রোগীদের পাশে থাকতে পারবে। রোগীরা উপকৃত হবে, চিকিৎসায় গুণগত পরিবর্তন আসবে। ফার্মেসী শিক্ষার পরিসর বাড়িয়ে স্কুল অব ফার্মাসিটিউক্যাল সায়েন্সেস করে এর সাথে আরও বিষয় যুক্ত করতে হবে যাতে একুশ শতকের উপযোগী এবং চাহিদা পূরণের মতো জনশক্তি তৈরি হয়। আমাদের ফার্মেসী শিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবনা বিশ্বে আরও অবদান রাখতে পারে। তিনি বলেন, রজতজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান নবীন-প্রবীনদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এটি একটি দারুণ অনুভূতি ও আনন্দময় স্মৃতি। যা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী ডিসিপ্লিন শিক্ষা ও গবেষণায় অনন্য অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এখানকার গ্রাজুয়েটরা দেশ-বিদেশে সুনাম ও দক্ষতার সাথে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করেছে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন, মানোন্নয়ন এবং গবেষণায় জোর দেওয়ার যে তাগিদ দিচ্ছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় তা অনুধাবন করে ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাদানের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হচ্ছে গবেষণা ও উদ্ভাবনা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সে দিকটিতে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও গবেষণায় উৎসাহ যোগাতে স্কলারশিপ চালু করা হয়েছে। আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে মাথায় রেখে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম ওবিই কারিকুলা প্রণয়ন কাজ সম্পন্ন করে তা এ বছরের জানুয়ারি থেকে অনুসরণ শুরু করেছি। তিনি আরও বলেন একচল্লিশ সালের উন্নত বাংলাদেশ গঠনে প্রয়োজন দক্ষ দেশপ্রেমিক জনশক্তি। আমরা সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করছি। ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবারেশন বাড়াচ্ছি।’
ফার্মেসী ডিসিপ্লিনের সাথে দীর্ঘমেয়াদি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ায় তিনি বিকন ফার্মাসিটিউক্যালের চেয়ারম্যানকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এর ফলে এ ডিসিপ্লিনে গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং বিকনের মতো দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদ। সম্মানিত অতিথি বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিলের সহ-সভাপতি এম মোসাদ্দেক হোসেন। আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিলের প্রাক্তন সহ-সভাপতি, বিশিষ্ট লেখক ড. সুভাষ সিংহ রায় এবং রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মো. সাইফুজ্জামান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব প্রফেসর ড. মো. ইকবাল আহমেদ এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ডিসিপ্লিনের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. মোকাদ্দেজ সরদার। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ফার্মেসী ডিসিপ্লিন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ফার্মেসী ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মেহেদী হাসান এবং সহকারী অধ্যাপক সুষ্মিতা পাল।
অনুষ্ঠানে দেশে ওষুধ শিল্পে সবিশেষ অবদান রাখার জন্য ফার্মেসী ডিসিপ্লিনের পক্ষ থেকে বিকন মেডিকেয়ারের চেয়ারম্যান এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ এবাদুল করিম, এমপিকে বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। এছাড়া ফার্মেসী ডিসিপ্লিনের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান এবং প্রাক্তন ডিসিপ্লিন প্রধানদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। ফার্মেসী ডিসিপ্লিনের সাথে শিক্ষা ও গবেষণায় ওই প্রতিষ্ঠানের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে স্বাক্ষর করেন টেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী এবং বিকন ফার্মার মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মোঃ আনিসুর রহমান। পরে তা উপাচার্য ও বিকন চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অনুষ্ঠানে ডিসিপ্লিনের শিক্ষক, অ্যালামনাই ও আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে সকাল ১০টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এছাড়া বিকেল স্মৃতিরোমন্থন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কনসার্টেল আয়োজন করা হয়।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ