খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের গেট থেকে চুরি হওয়া নবজাতককে ২৪ দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরীর সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পারকৃষ্ণপুর গ্রাম থেকে তাকে উদ্ধার করে। নবজাতক শিশু বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার পিলজঙ্গের তোরাব আলী ও রানী বেগমের ছেলে। শিশুটিকে বর্তমানে খুমেকের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) টেস্টের জন্য রাখা হয়েছে। তবে আজ শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) হওয়ায় তার টেস্ট হবে না।
নবজাতকের মামা মোস্তফা বলেন, ‘দিঘলিয়া উপজেলার সেনেরবাজারে তাদের আত্মীয় আছে। তাদের আবার নড়াইলেও আত্মীয় রয়েছে। সেই সূত্রে সবাইকে জানিয়ে রাখা হয়েছিল নবজাতক শিশু হারিয়ে গেছে, কোনো জায়গায় যদি নবজাতক শিশু কেনাবেচা হয় বা কারো বাড়ি যদি নবজাতক জন্ম হওয়ার কথা না থাকলেও নবজাতক দেখে তাহলে যেন তাদের খবর দেয়। সেইভাবে আমাদের তারা খবর দেয়। আমরা ওখানে যাওয়ার পর নিশ্চিত হয়ে পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে কথা বললে তারা অভিযান চালিয়ে আমাদের নবজাতক শিশুকে উদ্ধার করে।
যে নারী নবজাতক শিশুটিকে কিনেছিল তাকে ও তার স্বামীসহ আরো দুইজন নারীকে সোনাডাঙ্গা থানায় আনে পুলিশ। তাদের বলেছে তোমরা থানায় চল ডিএনএ চেস্ট করার পর বাচ্চা তোমাদের হলে ফিরিয়ে দেওযা হবে। তারা বলেছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে তারা নবজাতক শিশুটিকে ঢাকা থেকে কিনে এনেছে।
নবজাতক শিশুটির বাবা তোরাব আলী ও মা রানী বেগম বলেন, আল্লাহর কাছে আমরা অনেক শোকর আদায় করছি। এজন্য পুলিশ ও র্যাবসহ যারা আমাদের সহযোগিতা করেছেন তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা আমাদের বাচ্চা চিনতে পারছি। এটাই আমাদের বাচ্চা।
তদন্ত অফিসার ও সোনাডাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক তোফায়েল হোসেন বলেন, খুমেক হাসপাতাল থেকে গত ২৪ জানুয়ারি বিকেলে ওই নবজাতককে চুরি করা হয়। এ ঘটনায় ২৫ জানুয়ারি নবজাতকের নানা বেলায়েত হোসেন মামলা করার পর পুলিশ অভিযুক্ত ৬ জনের মধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কালিয়ার পারকৃষ্ণপুর গ্রাম থেকে ওই নবজাতককে উদ্ধার করা হয়।
সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইন-চার্য (ওসি) মমতাজুল হক বলেন, এ ঘটনায় যাদের কাছে শিশুটিকে পাওয়া গেছে তাদের থানায় এনে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে তাদের আবার ডাকা হবে। তবে, তারা যাদের কাছ থেকে বাচ্চাটি নিয়েছে তাদেরও হাজিরের চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, শিশুটিকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য শিশুটি বর্তমানে মায়ের সঙ্গে খুমেক হাসপাতালের ওসিসিতে রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জানুয়ারি বিকালে খুমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের সামনে থেকে নবজাতক শিশুটিকে বোরখা পরা এক নারী কৌশলে তার খালার কাছ থেকে চুরি করে। বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার পিলজঙ্গ গ্রামের তোরাব আলী ওই দিন সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে খুমেক হাসপাতালে তার স্ত্রীকে নিয়ে আসেন। দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে তিনি ছেলে সন্তান প্রসব করেন। পরে বাচ্চা নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করতে যান তোরাব আলী। তখন তার সঙ্গে ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় অ্যাম্বুলেন্স চালকের। পরে সেই চালক গাড়ি নিয়ে এসে তাদের নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু তিনি আগে যে গাড়ি দেখিয়েছিলেন সেটা না এনে ছোট গাড়ি নিয়ে আসেন। তখন তোরাব আলীর সঙ্গে ওই চালক ও তার লোকদের কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি শুরু হয়। এসময় নবজাতকের নানা, বাবা ও মামার ওপর হামলা চালানো হয়। নবজাতকের খালার কাছে বাচ্চা ছিল। সে যখন দেখে তার বাবা ও ভাইকে মারছে তখন অস্থির হয়ে যান। তার পাশে থাকা এক নারী তাকে বলে আমার কাছে বাচ্চা দিয়ে ওদের ঠেকান। তিনি ওই নারীকে তার ভাবি মনে করে বাচ্চা দিয়ে মারামারি ঠেকাতে যান। মারামারি শেষে এসে সবাই দেখে বাচ্চাসহ সেই নারী আর নেই।








সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ