পরিবর্তীত আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে আইনের অনেক ক্ষেত্রে সংশোধন প্রয়োজন: বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান

খুবিতে আইন বিষয়ে দু’দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন

আজ ১০ মার্চ শুক্রবার বিকাল ৩টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে আইন ডিসিপ্লিনের উদ্যোগে ‘লিগ্যাল ডায়নামিক্স ইন দ্য কনটেম্পোরারি ওয়ার্ল্ড’ (সমসাময়িক বিশ্বের আইনি গতিশীলতা) শীর্ষক দু’দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন শুরু হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান। তিনি বলেন, বৈশ্বিক পরিবর্তনের সাথে আমাদের দেশেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে।

বিশেষ করে আর্থ-সামাজিক অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এর ফলে আইন ও বিচারের ক্ষেত্রে নতুন নতুন দিক ও সমস্যা উদ্ভুত হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে আইনের অনেক ক্ষেত্রে সংশোধন ও সংযোজনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, দেশে আইনি শিক্ষা ও গবেষণার প্রসার ঘটেছে। তবে মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা এবং বিচার ব্যবস্থার অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছুই আইনি শিক্ষার কারিকুলায় নতুনভাবে অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, সামাজিক বাস্তবতায় মানুষ আইনের দ্বারস্থ হচ্ছে। কম সময়ের মধ্যে বিচারিক কাজ সম্পন্ন করে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ বড় চ্যালেঞ্জ। তবে থানায় মামলা হওয়ার পর থেকে আদালতে বিচারকার্য শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত একটি বড় সময় চার্জশিট প্রদানসহ অন্যান্য কারণে বিলম্ব ঘটছে। এটাও বিচার প্রার্থীর বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সূত্রতার কারণ। আবার আদালতে স্বাক্ষীকে সময়মতো হাজির করা, তার নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টিও বিচার সম্পন্নের কাজে গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে নির্ভুল রায় দেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তা না হলে উভয় পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যা থেকে বিচারকাজে নতুন জটিলতা ও বিলম্বের কারণ দেখা যায়। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বিচার ব্যবস্থায় তথ্য প্রযুক্তির সংশ্লেষ বাড়ছে এবং ই-নথি কার্যক্রম, ডাটা সেন্টার স্থাপন ও ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনাসহ ডিজিটাইলেশন নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। দেশের বিচার ব্যবস্থায় এটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি এই সম্মেলন আয়োজন করার জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ডিসিপ্লিনকে ধন্যবাদ জানান এবং এখান থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ, পর্যবেক্ষণ, ফাইন্ডিংস শিক্ষা-গবেষণা ও প্রায়োগিক ক্ষেত্রের জন্য নানা দিক-নির্দেশনা পাওয়া যাবে বলে আশা করেন। পরে তিনি ‘ডিনামিজম ইন ক্রিমিনাল ট্রায়েলস:বাংলাদেশ পার্সপেক্টিভ’ শীর্ষক কি-নোট উপস্থাপন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ। তিনি এই সেমিনারে কি-নোটসহ যে সমস্ত নিবন্ধ উপস্থাপন হবে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। আইনের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও চর্চাকারীবৃন্দ এই সম্মেলন থেকে নতুন নতুন বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে পারবেন যা তাদের পেশাগত জীবনে প্রভূত কাজে আসবে  বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি দেশে প্রচলিত আইনের বেশ কিছু দিকে আলোকপাত করে উদ্ভুত বাস্তবতায় সংশোধন ও সংযোজনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম ওবিই কারিকুলা প্রণয়ন ও তা অনুসরণ করায় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
প্যাট্রন হিসেবে দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ আইনের জটিলতা বোঝেন না। তারা দ্রুত বিচার পেতে চান। কিন্তু নানা কারণে বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে যে ভোগান্তি ও দীর্ঘ সূত্রতা তা তাদেরকে হতাশ করে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। বিচার কাজ দ্রুত নিস্পত্তি না হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা কঠিন। মানুষ যতো আইন মানবে ততো সমাজে শৃঙ্খলা স্থাপিত হবে, ততো উন্নত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সেমিনার থেকে নতুন দিক-নির্দেশনা পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ডিসিপ্লিন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারের আয়োজন করায় তিনি তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইন ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মো. ওয়ালিউল হাসানাত। তিনি এই সম্মেলন আয়োজন করার জন্য উপাচার্য মহোদয়ের তাগিদ ও দিকনির্দেশনার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানান এবং প্রধান অতিথি, সম্মানিত অতিথি, বিশেষ অতিথিসহ অংশগ্রহণকারীদের প্রতি ডিসিপ্লিনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক তালুকদার রাসেল মাহমুদ। সম্মেলনে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম, খুলনা ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান থেকে ১২৮জন শিক্ষক, গবেষক, শিক্ষার্থী আইনপেশা সংশ্লিষ্টরা অংশগ্রহণ করছেন। দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনে ৩৭টি নিবন্ধ উপস্থাপন করা হবে।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *