বীজ শোধন ও পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদনঃ
আখের বীজ খন্ড গুলো কাটার পর ২০০ শক্তি সম্পন্ন ব্যাভিস্টিন ১ গ্রাম ১ লিটার পরিস্কার পানিতে মিশিয়ে প্রায় ৩০ মিনিটকাল ডুবিয়ে রাখতে হবে। শোধন করা বীজ খন্ড গুলো বীজতলায় অথবা পলিব্যাগে রোপন করতে হবে। পলিব্যাগ ১২.৫ সে.মি উচু ১০ সে.মি ব্যাস বিশিষ্ট হতে হবে। পলিব্যাগের প্লাস্টিক ০.০২ মিমি পুরুহবে।
পলিব্যাগের জন্য ১ ভাগ দোআশ মাটির সাথে সমপরিমান গোবর সার খুব ভালকরে মিশিয়ে মাটি তৈরী করতে হবে। তৈরী করা মাটি দিয়ে পলিব্যাগের অর্ধেক অংশ মাটি দিয়ে ভরে দিন। মাটিতে বীজখন্ড এমনভাবে বসিয়ে দিন যাতে চোখটি মাটির উপর থাকে। সাত দিনের মধ্যে চারা গজাবে এবং ৩ সপ্তাহের মধ্যে শতকরা ৮০-৯০ ভাগ চোখ গজিয়ে চারা হবে। ৪০-৬০ দিনের মধ্যেই প্রটিটিচারায় ৪-৫ টি পাতা গজাবে এবং তখনই তখনই চারা লাগানোর সময় হবে। যদি ৬০ দিনের মধ্যে চারা লাগানো না যায় তবে নিচের পাতাগুলো কেটে দিতে হবে এবং প্রয়োজনমত পলিব্যাগে সেচ দিতে হবে। পলিব্যাগের চারাতে মাজরা পোকার আক্রমণ হলে ১৭ মিলি ডায়াজিনন ৬০ ইসি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে চারাতে স্প্রে করুন। চারাগুলো দুর্বল হলে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ২০ লিটার পানিতে মিশিয়ে চারায় স্প্রে করুন।
বীজ খন্ডের পরিমাণ(টন/হে)ঃ
পলিব্যাগ (এক চোখ বিশিষ্ট) চারা করার পদ্ধতি আগুল লাগানো সময় ১.২
পলিব্যাগ (এক চোখ বিশিষ্ট) চারা করার পদ্ধতি মধ্যম লাগানো সময় ১.৪
পলিব্যাগ (এক চোখ বিশিষ্ট) চারা করার পদ্ধতি নাবিলা লাগানো সময় ২.১
বীজতলা (এক চোখ বিশিষ্ট) চারা করার পদ্ধতি আগুল লাগানো সময় ১.২
বীজতলা (এক চোখ বিশিষ্ট) চারা করার পদ্ধতি মধ্যম লাগানো সময় ১.৪
বীজতলা (এক চোখ বিশিষ্ট) চারা করার পদ্ধতি নাবিলা লাগানো সময় ২.১
বীজতলা (দুই চোখ বিশিষ্ট) চারা করার পদ্ধতি আগুল লাগানো সময় ২.৪
বীজতলা (দুই চোখ বিশিষ্ট) চারা করার পদ্ধতি মধ্যম লাগানো সময় ৩.০
বীজতলা (দুই চোখ বিশিষ্ট) চারা করার পদ্ধতি নাবিলা লাগানো সময় ৪
সাধারণ পদ্ধতি চারা করার পদ্ধতি আগুল লাগানো সময় ৪.০
সাধারণ পদ্ধতি চারা করার পদ্ধতি মধ্যম লাগানো সময় ৬.০
সাধারণ পদ্ধতি চারা করার পদ্ধতি নাবিলা লাগানো সময় ৮.০
আখের পরিচর্যাঃ
প্রাথমিক অবস্থায় ভারী বৃষ্টিপাতের পর জমিতে জো এলে অবশ্যই মাটি আলগা করে দিতে হবে। সেচ দেয়ার পরও জমিতে জো এলে মাটি আলগা করে দিতে হবে। মাটি আলগাকরণের সময় আগাছা পরিস্কার করতে হবে। ইক্ষুরোপনের পর চার মাস পর্যন্ত অবশ্যই জমি আগাছামুক্তরাখতে হবে।
গ্যাপ পূরণঃ
এ গ্যাপ পূরণের জন্য ইক্ষুরোপনের সময় একই জাতের বীজ দিয়ে পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদন করে রাখতে হবে এবং মূল জমিতে ইক্ষুরোপনের ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে ঐ চারা দিয়ে গ্যাপ পূরণ করতে হবে।
আঁখের গোড়ায় মাটি দেয়াঃ
কুশি বের হওয়া শেষ হলে আর কোন নতুন কুশি হতে না দিয়ে ঝাড়ের গোড়ায় মাটি দিতে হবে। এর ১ মাস পর দ্বিতীয় বার মাটি দিতে হবে।
আঁখ ঝাড় বাঁধাঃ
আঁখ হেলে পড়লে কান্ডের বৃদ্ধি মন্থর হয়, পার্শ্ব কুশি গজায়, ওজন ও চিনির পরিমান কমে যায় এবং কিছু আঁখ মরে যায়। সাধারণত ভাদ্র থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত আঁখ হেলে পড়ে। তাই ঐ সময় আসার আগেই প্রথমে আখের শুকনো/ আধা শুকনো পাতা দিয়ে প্রতিটি ঝাড় আলাদা ভাবে বাঁধতে হবে। পরে ২ সারির ৩/৪ টি ঝাড় একত্র করে আড়াআড়িভাবে বাঁধতে হবে। আঁখ হেলে পড়লে বীজ আঁখের গুনাগুন নষ্ট হয়। এ কারণে বীজ আখ ক্ষেতে আঁখ বাধা দরকার।
সেচ প্রয়োগ ও অতিরিক্ত পানি নিস্কাশনঃ
কেবলমাত্র সেচ প্রয়োগ করেই আখের ফলন ২০-২৫% বৃদ্ধি করা সম্ভব। আগাম আঁখ চাষের জন্য রোপনের ১-৭, ৩০-৩৫, ৬০-৬৫, ১২০-১২৫ এবং ১৫০-১৫৫ দিন পর মোট ৫ বার সেচ দিতে হবে। যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হলে ঐ সময়ে সেচের প্রয়োজন হবে না। দীর্ঘ জলাবদ্ধতা আঁখের ফলনের উপর মারাত্মক বিরুপ প্রভাব ফেলে। তাই জলাবদ্ধ জমিতে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
আশ্বিন মাস থেকে ফাল্গুন-চৈত্র মাস পর্যন্ত আঁখ সংগ্রহ করা হয়।
বীজ নির্বাচনঃ
বীজ নির্বাচনের কাজ বীজ সংগ্রহের ১ বছর আগেই শুরুকরতে হবে। বীজের জন্য সম্ভব হলে আলাদা বীজ আঁখ আবাদ করে উপযুক্ত যত্ন ও পরিচর্যার মাধ্যমে রোগবালাই মুক্ত রাখা সম্ভব। এভাবে আবাদকৃত প্রত্যায়িত বীজ আঁখ হতে বীজ সংগ্রহ করাই অধিক বিজ্ঞান সম্মত। আট থেকে দশ মাস বয়সী সতেজ রোগমুক্ত বীজ অংকুরোদ্গমের জন্য সবচেয়ে ভাল। বীজ আঁখ অবশ্যই শিকড়মুক্ত হতে হবে। প্রয়োজনে আঁখের এক-তৃতীয়াংশ বাদ দিয়ে উপরের দুই তৃতীয়াংশ বীজ হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। বীজ আঁখ সংগ্রহের ৪-৫ সপ্তাহ পূর্বে বীজ ক্ষেতেহেক্টর প্রতি ১০০ কেজি সার প্রয়োগ করে বীজ আঁখের গুণগত মান বৃদ্ধি করা সম্ভব। যে সব এলাকায় মাটিতে পর্যাপ্ত পটাশ নেই সে সব এলাকায় হেক্টর প্রতি ৪০ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
বীজতলায় চারা উৎপাদনঃ
এ পদ্ধতিতে সাধারণত ২ চোখ বিশিষ্ট বীজখন্ড বীজতলায় লাগানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে এক চোখ বিশিষ্ট বীজখন্ড বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে।
বীজতলা তৈরীঃ
বীজতলার আকার প্রস্থঃ ১২০ সেমি, দৈর্ঘ্যঃ ৩.০ থেকে ১০ মিটার এবং উচ্চতাঃ ১০-১৫ সেমি। প্রতি বীজতলার জন্য একটন জৈব সার ব্যবহার করুন। উইপোকা রোধের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ মিলি ডার্সবান মিশিয়ে স্প্রে করুন। বীজখন্ড পাশাপাশি লাগাতে হবে। চোখ উপরের দিকে রাখতে হবে। বীজ খন্ডের উপরে ১ সেমি মাটি থাকতে হবে। প্রয়োজনে হালকা সেচ দিতে হবে। চারা লাগানোর পরপরই বীজতলা খড়দিয়ে ঢেকে দিন।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ