দেশের সীমান্তে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত চোরাচালানীদের সাথে সিমান্ত রক্ষিদের দুর্নীতির আতাত দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব কে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে, যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ রাজশাহী ও সাতক্ষীরা সীমান্ত অঞ্চল।
এ অঞ্চলে জামাত নিয়ন্ত্রিত জঙ্গিরা ‘মিনি পাকিস্তান’ গড়ে তুলেছে চোরাচালানের মাধ্যমে আয় করা অঢেল টাকা ও অস্ত্র-বিস্ফোরক-গোলাবারুদ আমদানির মাধ্যমে। আর যার প্রকাশ্য ব্যবহার দেশবাসি দেখতে পেয়েছে সাতক্ষীরা ও রাজশাহী-চাপাইনবাবগঞ্জে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের দাবিতে ও নির্বাচন পূর্ববর্তী হর্তালের নামে জামায়াত-শিবিরের দেশ বিরোধী নৈরাজ্য ও তান্ডবে।
দেশবাসি জামায়াত জঙ্গিদের এ তান্ডব মিডিয়ায় প্রত্যক্ষ করলেও এ সকল অঞ্চলে জামায়াতিদের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রকৃত চিত্র ও অবস্থা অনুধাবন করতে এখনও সক্ষম হয় নি। আর এ অবস্থার জন্য মূলত দায়ী সীমান্ত রক্ষি ও প্রশাসনের দূর্নীতি। এ অবস্থায় দেশবাসির প্রশ্ন, যাদের হাতে দেশের প্রশাসন ও দেশ প্রহরার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের হাতে ‘দেশ’ কি আদৌ নিরাপদ ?
উল্লিখিত সীমান্ত এলাকার চিত্র– ভারতের পশ্চিম বঙ্গের জেএমবি ডেরায় তৈরী সকেট বোমা সাতক্ষীরা ও রাজশাহী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাচার করা হয়েছে। সূত্র, ভারতীয় জাতিয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ।
বর্তমানে উল্লিখিত সীমান্ত অঞ্চলের হালচাল সম্পর্কে আনন্দবাজার পত্রিকার রিপোর্টারের বর্ণনা – পণ্যে ভর্তী একটি নৌকা এসে ভিড়লো পদ্মার পাড়ে। নৌকা থেকে লাফিয়ে দু’জন পাড়ে নামতে একদল লোক তাদের ছেঁকে ধরলো। নিত্য চেনা দৃশ্য তফাতটা কেবল সবকিছুই ঘটে চলল ভীষণ নিঃসাড়ে। সুনসান আলাপ। একদল লোক মাথায় গামছা জড়াতে জড়াতে উঠে গেল নৌকায় মাল নামাতে। সবাই কাজ করে চলেছে খুব দ্রুত গতিতে কিন্তু মুখ বুজে। পদ্মার মাঝখানের চর থেকে এসেছে এই নৌকা। সে চরের নাম আষাঢ়িয়াদহ। তার পাশে আলাতুলি।
রাজশাহী শহরের কোল ঘেঁষে পদ্মা নেমে গেছে দক্ষিণে। রাজশাহীর উত্তর পশ্চিমে ভারতের মুর্শিদাবাদ থেকে বাংলাদেশে ঢুকেছে এ নদী। পদ্মার দু’পাড় এখানে প্রতিনিয়তই ভাঙে, ফলে নদীর মাঝে গড়ে উঠেছে অনেক চর। সীমান্তের অগোছালো অবস্থার সুযোগ নিয়ে এ এলাকায় গড়ে উঠেছে চোরাচালানের ‘মুক্তাঞ্চল।’ কাটা তারের বেড়ার ফলে এ সীমান্তদিয়ে গরু পাচার বন্ধ হলেও ফেন্সিডিল, হেরইন, বিস্ফোরক আর অস্ত্রশস্ত্র আসছে দেদার।
বর্ধমানের খাগড়াগড়ে তৈরী শক্তিশালী বিস্ফোরকও জেএমবি জঙ্গিরা যে দুই পথে বাংলাদেশে পাচার করেছে বলে ভারতের কেন্দ্রিয় গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পেরেছে, তার একটি ঠিক এই খানে পদ্মা উজিয়ে।
রাজশাহী শহরের পাশ দিয়ে পদ্মাকে সাথে নিয়ে রাস্তা ছুটেছে উত্তরে। নদীর এ-পারে গোদাগাড়ি, ও-পারে মুর্শিদাবাদের লালগোলা। গোদাগাড়ি পেরিয়ে রাজাবাড়ি হয়ে সুলতানগঞ্জ। পদ্মাই সীমান্ত। ঘাটে ঘাটে নৌকা লাগছে। আষাঢ়িয়াদহ, আলাতুলির চর থেকে আসা নৌকা। আলাতুলির চরে গড়ে ওঠা গ্রাম কোদালকাঠি। বোচকা মাথায় অস্বাভাবিক দ্রুততার সাথে রাস্তা ডিঙিয়ে রাজাবাড়ির মোকামে ঢুকে যায় নাইয়ারা। নতুন লোক দেখলে ঘিরে ধরে সতর্ক চাহুনি। কাছেই অলস পায়ে ঘোরাঘুরি করছে জংলা-পোশাক, কাধে রাইফেল বর্ডার গার্ড বিজিবি, চোরাচালান শব্দটাই যেন তারা জীবনেও শোনেনি!
গোদাগাড়ির ঘাটে বাধা খালি নৌকায় ওঠার আগে গরম চায়ে গলা ভিজিয়ে নিচ্ছিলেন শওকত শেখ, পুলিশের খাতায় প্রাক্তন(!) জঙ্গি। বাড়ি চর আষাঢ়িয়াদহে। জানালেন, চাষের পাট মোকামে বেচে ফিরছেন। শুধুই পাট ? বললেন, “ওসব যারা করে তারা করে, আমি না।” যা শোনা যায়, তা হলে তা সত্যি ? “আজ্ঞে হ্যা, ভুল কিছু নয়।” কি কি চোরাচালান হয় ? আশপাশ দেখে নিয়ে বললেন, “ এখন হেরইন আর স্বর্ণ। সঙ্গে কিছু মদ আর ফেন্সিডিল…” আর বিস্ফোরক ? চাপা গলায় শকত জানায় “গেল মাসেও এসেছে। বেস কয়েক দফায়। তবে বিহারের বন্দুক রোজই আসছে। ওয়ান সাটারই বেশি। সঙ্গে টোটা, নানা কিসিমের!”
সওকত বলে, চরে অনেক গুদাম, রাতবিরেতে বা ভোরবেলায় ভারত সীমান্ত টপকে ‘মাল’ এসে জড় হয় সেখানে। চর থেকেই তা সময় সুযোগ অনুযায়ী নৌকায় করে আনা হয় রাজাবাড়ি থেকে সুলতানগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে ছড়ানো নানা মোকামে। এখানকার চোরাচালানের মাথা কারা ? আরও ঘন হয় সওকতের গলার স্বর, “ সব মোদাচ্ছের, গোলাম আজম আর কিবরিয়ার লোক।” এরা কারা ? এবার পাশ থেকে একজন বলেন, “ তিনজনই জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা। আবার জেএমবি’রও সংগঠক। অস্ত্র আর মাদক চোরাচালান এখন এরাই নিয়ন্ত্রণ করে। পুলিশ থেকে সাংবাদিক সবাই রয়েছে এদের পে-রোলে।” (আর এ কারণেই এদের নিয়ে বাংলাদেশের সংবাদপত্রে সাধারণত কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয় না) ঘাড় নাড়েন সওকত, ঠিক। তবে মানতে নারাজ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা আতাউর রহমান। “ জামায়াত ঈমানে বিশ্বাসী, চোরাচালানে তাদের কোনো নেতা-কর্মী যুক্ত হয় না” দাবি এ নেতার।
আরও এগিয়ে মহানন্দার উপর শহীদ জাহাঙ্গির সেতু পেরিয়ে রাজশাহী জেলা শেষ। নতুন জেলা চাপাইনবাবগঞ্জ। কানসাট হয়ে সোনামসজিদ ছুঁয়ে রাস্তা পৌঁছে যায় শিবগঞ্জ স্থলসীমান্ত বন্দরে। উল্টোদিকে মালদহ জেলার মহদিপুর। রাজশাহী থেকে শিবগঞ্জ পর্যন্ত ৮৩ কিলোমিটার রাস্তার দু’দিকের এই জনপদের আরও একটি পরিচিতি আছে, অনেকে বলেন ‘মিনি পাকিস্তান।’ একদা (বিএনপি-জামায়াত সরকার আমলে) জেএমবি জঙ্গিদের মুক্তাঞ্চল ছিল এই এলাকা! বছর খানিক আগে দলের নেতাদের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডেকেছিল জামায়াতে ইসলামি। জামায়াত ক্যাডারদের ভয়ানক সন্ত্রাসে ছারখার হয়ে গিয়েছিল গোটা এলাকা। রাস্তা কেটে গাছ কেটে পুলিশ আটকে প্রশাসন কার্যত অচল করে দিয়েছিল জামায়াত। তিন-চার দিন এখানে ঢুকতে পারে নি বাইরের কেউ। যাত্রি নামিয়ে বারুদ ঢেলে একটা গোটা ট্রেন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। কানসাটে পুড়িয়ে-জ্বালিয়ে ছারখার করে দেওয়া হয় একটা বিদ্যুতকেন্দ্র। কেন্দ্রের গুদামে রাখা কোটি কোটি টাকার বিদ্যুত বন্টনের সরঞ্জাম, কর্মীদের আবাসন, অফিসঘর, অজস্র গাড়ি পুড়িয়ে ছাই করে দেয় জামায়াত ক্যাডাররা। কানসাটের মানুষ সেদিন শুধু বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছিলো সারাদিন! এ সবে জড়িতরা আজও আছে ধরাছোঁয়ার বাইরে !
এঘটনার পর পুলিশি অভিযানের কারণে আপাতত সমঝে চলার কৌশল নিয়েছে জামায়াত, তবে এলাকা দখলে রেখে চোরাচালানের লাগাম এখনও কষে ধরে রেখেছে জামায়াত! আর অবৈধ অঢেল টাকার জোরে এলাকার অনেক কিছুই এখনও তাদেরই নিয়ন্ত্রনে !
# আনন্দবাজার পত্রিকা অবলম্বনে।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ