জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটেনি বরং খাল-নদী অবৈধ দখলের মাধ্যমে স্বাভাবিক জল প্রবাহ ধ্বংসের ফলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটেছে। সুদের কারবারি বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ’র ষড়যন্ত্রমূলক পরামর্শ ও ঋণে গত শতাব্দির অশির দশকে জেলা প্রশাসন দেশের নদী-খাল সংস্কার বা খনন না করে লীজ দিয়েছে এবং সেই নদী-খালে মাছ চাষের জন্য ঋণ দিয়েছে। লীজ গ্রহিতারা নদী-খাল লীজ নিয়ে সেগুলিতে বাঁধ দিয়ে ঘের তৈরী করে মাছ চাষ করেছে। এর ফলে জোয়ারের পানি খালে ঢুকতে না পারায় নদীর পানিতে বয়ে আসা লাখ লাখ টন পলি নদীর বুকে জমে গিয়ে নদীও ভরাট হয়ে গেছে। এ ভাবে দেশের অধিকাংশ নদী-খাল আজ অবৈধ দখল ও ভরাট হয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
এখন আবার এগুলি খনন করার জন্য বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ ঋণ দিচ্ছে আর তাদের ও দেশীয় আমলাদের পরিকল্পিত যৌথ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিবেশ ধ্বংস করে এখন বাংলাদেশের মানুষ কে বোকা বানানোর উদ্দেশ্যে মানব সৃষ্ট এই পরিবেশ বিপর্যয়ের দায় জলবায়ু পরিবর্তনের উপর চাপানো হচ্ছে!
আজ ৩০ডিসেম্বর নগরীর পূর্বাঞ্চল ডায়ালগ সেন্টারে বে-সরকারী সংস্থা লোকজ’র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত গণমাধ্যম ও গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাভোগীদের সাথে দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তনে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা ও সফলতা অর্জন বিষয়ক গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা এ সকল কথা বলেন। বক্তারা বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তন হঠাৎ করেই শুরু হয় নি, জলবায়ুর পরিবর্তন প্রতিনিয়তই ঘটছে কিন্তু প্রাকৃতিক পরিবর্তনগুলি এত দ্রুত ঘটেনা যে তার ফল দশ-বিশ বছরেই মারাত্মক হয়ে উঠবে। মাত্র বিশ-পচিশ বছরে বাংলাদেশের নদী-খাল ভরাটের মাধ্যমে মানব সৃষ্ট যে বিপর্যয় ঘটেছে প্রাকৃতিক কারণে এভাবে নদী-খাল ভরাট হতে সময় লাগবে শত শত বছর।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি দৈনিক পূর্বাঞ্চল সম্পাদক লিয়াকত আলী বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে বাংলাদেশের আবাসন, কৃষি, খাদ্যাভ্যাস, রোগবালাই, তাপমাত্রা ইত্যাদিতে মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে। এ সকল সমস্যাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ তার সকল সরকারী-বেসরকারী উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনায় উদ্যোগি হচ্ছে এবং হবে যা জনমানুষের সক্ষমতা ও সফলতা অর্জনের মধ্যদিয়ে সফল পরিণতি লাভ করবে।
বক্তারা বলেন, লবন পানির চিংড়ি চাষের মাধ্যমে দাকোপ উপজেলা থেকে গবাদীপশু এবং সকল প্রকার ফসলের চাষাবাদ বিতাড়িত করা হয়েছিলো। বেসরকারী সংস্থা লোকজ’র উদ্যোগে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে দাকোপের সাধারণ মানুষ চিংড়ি চাষকে বিদায় করে আবার ফসলের চষাবাদ ফিরিয়ে এনেছে। এর ফলে বিরান ভূমি দাকোপ আবার সবুজের সমারোহে ভরে উঠেছে। লোকজ’র প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে প্রায় ৬৪ প্রজাতীর বিলুপ্ত ও লবন সহিষ্ণু ধানের বীজ কৃষক আবার ফিরে পেয়েছে, যার ব্যাপক চাষ হয়েছে এবং দাকোপ’র কৃষকগণ লাভবান হচ্ছে। এ ছাড়া দাকোপে এখন ব্যাপকহারে মিঠা পানির মাছ, সব্জি ও তরমুজের চাষ হচ্ছে, আর এ সব সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির ফলে তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার নার্গিস ফাতেমা জামিন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অশোক কুমার সমাদ্দার। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন রামপদ মন্ডল, মনিকা চক্রবর্তী, যুগোল কিশোর মন্ডল, প্রবির রায়, দাকোপ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, গৌরচন্দ্র বাছাড়, সাংবাদিক কৌশিক দে, সুধাংশু মল্লিক, রনজিৎ দেবনাথ, শামিম আশরাফ শেলী, দাকোপ সমাজ সেবা অফিসার খান মোতাহার হোসেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন লোকজ’র নির্বাহী পরিচালক দেব প্রসাদ সরকার।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ