খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার লোকালয়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইট ভাটা। বেশীর ভাগ ইট ভাটায় আইনানুযায়ী কয়লা না পুড়িয়েবে-আইনি ভাবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে উজাড় হচ্ছে গ্রামসহ আসে পাশের বন জসম্পদ, বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য।
সূত্রমতে, ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২১টি ইট ভাটা রয়েছে। তার মধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলা সদর সংলগ্ন একটি, খর্নিয়ায় ১০টি, বয়ার শিংয়ে একটি, শৈলগাতিয়ায় একটি, মির্জাপুরে একটি, গুটুদিয়ায় তিনটি, শৈলমারীতে দুটি, শৈলগাতিয়া পালপাড়ায় একটি। উপজেলার ২১টি ইট ভাটার মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অমান্য করে১৩টি তেপোড়ানো হচ্ছে কাঠ। গ্রাম থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ বৃক্ষ কেটে এসব ইট ভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে। ইট ভাটার ধোঁয়ায় বসতি, বাজার, স্কুল-কলেজ সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে, যা পরিবেশের ক্ষতি করছে এবং স্থানিয় বাসিন্দাদের বিভিন্ন রোগ তথা হাফানি(এ্যাজমা) সহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকিতে ঠেলে দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা বেশীর ভাগ ইট ভাটা মালিকগণতোয়াক্কাকরছেননাবলেঅভিযোগরয়েছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবেশ বান্ধব (জিকজ্যাক) হাওয়া ভাটা তৈরী করতে হবে এবং ২০১৪ সাল থেকে সাধারণ চিমনির ভাটা নিষিদ্ধ। এ নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলায় ২১ টি ইট ভাটার মধ্যে শেখ হাফিজুর রহমানের একটি, স্থানীয় এমপি ও উপজেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র চন্দের একটি, ডুমুরিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান গাজী আঃ হাদীর একটি, ইকবাল হোসেনের একটি ও রঞ্জন কুমারের একটি ইট ভাটা (জিকজ্যাক) হাওয়া ভাটা হিসাবে চলছে। অন্যদের ২০১৩ সালের মধ্যে (জিকজ্যাক) হাওয়া ভাটা তৈরীর জন্য জেলা প্রশাসকের সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হলেও কোনো কাজ হয় নি। এদিকে এলাকা বাসির অভিযোগ, ইট ভাটা তৈরীর জন্য সরকারি বেড়ি বাঁধ সহ নদী-খালদ খলের প্রতিযোগীতায় নেমেছেন ইট ভাটা মালিকরা।
ইট ভাটার বিষাক্ত ধোয়ায় বাগানের ফলমূলও রেহাই পাচ্ছে না, পচে যাচ্ছে আমবাগানের আমও, এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে উত্তর বঙ্গের নাটোর এলাকা থেকে। ওভিযোগকারিরা জানান যে, নাটোরের বড়াই গ্রামে ইট ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় প্রায় অর্ধশতাধিক বাগানের আম সম্পূর্ন নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও মরে যাচ্ছে। আমের নিচের দিক থেকে কালচে রং ধারণ করে ধীরে ধীরে পুরো আম টাই পচে গিয়ে পাকার আগেই ঝড়ে পড়েছে গাছ থেকে। জীবানু নাশক ওষুধ ব্যবহার করেও পচন ঠেকানো যায় নি। আমের ব্যপক ক্ষতিতেএখনদিশেহারাএইএলাকারঅনেক চাষি। এতে এলাকার প্রায় পাঁচশ’ বিঘা বাগানের আম পচে গিয়ে কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছেন বাগানের মালিকরা। গোধরা গ্রামের এক টিইট ভাটার বিষাক্ত ধোয়ায় গোধরা, গুনাই হাটি, ছাতিয়ান গাছা, চষুডাঙ্গা, ধলা এবং মানিকপুর গ্রামের অধিকাংশ বাগানের আম পচে যাচ্ছে।
গোধরা গ্রামের আম-চাষীদের অভিযোগ, এক রাতে ভাটার বিষাক্ত গ্যাস চিমনির উপর দিয়ে বের করে দেয়া হয়। পরদিন সকাল থেকেই গাছের পাতা ঝরে পড়তে থাকে। দু’ এক দিন পর থেকে আমের নিচের অংশে কালচে (শিলপড়ারমত) দাগ পড়ে পচে যেতে থাকে। ৪-৫ দিনের মধ্যে পুরো আম কালচে বর্ণের হয়ে বোটাসহ ঝরে পড়ে। এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ আম চাষিরা ইট ভাটামালিকের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইলেও তিনি তাদের কথায় গুরুত্বদেন নি। উপ-সহকারী কৃষিকর্মকর্তা অশ্বিনী কুমার সরকার জানান, ইট ভাটার বিষাক্ত গ্যাস এক সঙ্গে বের করে দেয়ার কারণে গাছের সালোক সশ্লেষণ বাধা গ্রস্থ হয়েছে। একারণেই গাছপালা মরে যাচ্ছে এবং আম পচে গেছে। ভাটার মালিক ইটভাটার গ্যাস বা ধোঁয়ার কারণে আম পচে যাওযার অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক আক্তারজানান, যদি ইট ভাটার কারণে এমন টি হয়, তাহলে সে ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে প্রকৃত অবস্থা হ’ল,সংশ্লিষ্টসরকারী অফিসার , স্থানীয় প্রশাসন, রাজনীতিবিদসহ সকলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন, কিন্তু প্রয়োজনীয় সেই ব্যবস্থা আর গ্রহণ করা হয়ে ওঠে না ,এমন দাবি ভুক্ত ভোগিদের।
ইট ভাটার কালো ধোঁয়া, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন ও খাল-নদী ভরাট করে অবৈধ দখলের মাধ্যমে পরিবেশের স্বাভাবিক গতি যে ভাবে নষ্ট করা হচ্ছে তাতে দুর্যোগের ঝুঁকি প্রবণ খুলনা জেলা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পরিবেশ মারাত্মক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে যা কোন ভাবেই প্রতিকার করা সম্ভব হবেনা যদি বে-আইনি ভাবে ইট ভাটা পরিচালনা বন্ধ না হয়।তাই পরিবেশ রক্ষায় জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ দপ্তরকে বে-আইনি ইট ভাটা মালিক এবং খাল-নদী অপদখলকারীদের বিরুদ্ধে অতিসত্বর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে অন্যথায় উল্লিখিত অপরাধ সমূহের প্রতি উদাসিনতা প্রদর্শনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও দায়ী থাকবেন, এমন দাবি এলাকাবাসির।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ