বাঘ সুরক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর ২৯ জুলাই তারিখে সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস পালিত হয়। ২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে বিশ্ব বাঘ সম্মেলন (টাইগার সামিট) অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বে ভয়াবহভাবে বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সম্মেলন থেকে প্রতি বছর এই দিনে আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বিশ্বের বহু প্রাণী সংক্ষণ প্রতিষ্ঠান বাঘ সুরক্ষায় কাজ করছে এবং এ লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করছে। আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস পালনের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে বাঘের সুরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও এর আবাসস্থল বৃদ্ধিকল্পে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করা এবং এই বাঘ রক্ষার আন্দোলনে জন সম্পৃক্ততা সৃষ্টি করা।
বিশ্বে বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে:
গত ১০০ বছরে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা শতকরা ৯৭ ভাগ কমে গেছে। ১৯১৩ সালে বিশ্বে মোট বাঘের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লাখ, সেখানে ১৯১৪ সালে মোট বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কম-বেশি ৩হাজারটি। গত বছরও এই সংখ্যা ছিল কম-বেশি ৩ হাজর ২০০টি।
বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে কেন:
আবাসস্থল ধ্বংস : ক্রম বর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মিটাতে নতুন আবাসস্থল স্থাপন ও কৃষিকাজের কারণে এ পর্যন্ত বিশ্বের শতকরা ৯৩ ভাগ বাঘের আবাসস্থল ধ্বংস করা হয়েছে। বিশ্বে খুব কম সংখ্যক বাঘ যা এখনো টিকে আছে তারা খুবই ছোট পরিসরে বিচ্ছিন্ন কিছু দ্বীপে বসবাস করছে। যে স্থানগুলো বাঘ প্রজননের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এসব আবাসস্থল তাদের বসবাসের জন্যও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
বাঘ ও মানুষের বিরোধ : মানুষ এবং বাঘ জমি’র জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। বাঘের বিচরণস্থল বনের কাছাকাছি। লোকালয়ের অধিবাসীদের বসবাসের সুবিধার জন্য বাঘের সাথে তাদের বিরোধ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নতুন নতুন লোকালয় সৃষ্টির কারণে বন সংকুচিত হয়ে পড়ায় বাঘের খাদ্যেও ঘাটতি পড়েছে। ফলে, বাঘ খাদ্য শিকারে হামলে পড়ছে লোকালয়ের গৃহপালিত পশু-পাখির ওপর, যা সেখানকার অধিবাসীদের জীবন ধারণের অন্যতম উপায়। এর প্রতিশোধ হিসেবে সেখানকার বাসিন্দারা বাঘ হত্যা করছে বা বন্দী করছে। শিকার করা বাঘগুলো কালোবাজারে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের জ্বালানী কাঠ, খাদ্য ও আসবাবপত্রের কাঠের জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল। এর ফলে বনে প্রবেশের পর তাদের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ প্রাণী হচ্ছে বাঘ। প্রায়ই তারা বাঘের আক্রমণের শিকার হয়। এজন্য বনে মানুষের বিচরণকে অবাধ করার জন্যও বাঘ হত্যা করা হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন : বিশ্বে বাঘের সবচেয়ে বড় বিচরণক্ষেত্র হচ্ছে সুন্দরবন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ একক ম্যানগ্রোভ বনটি ভারত মহাসাগরের উত্তর উপকূলে বাংলাদেশ ও ভারতে অবস্থিত। বিশ্ববিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বসবাস এই সুন্দরবনে, যে বন এই দুই দেশের উপকূল অঞ্চলকে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় এখানে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসের কারণে বাঘের বেঁচে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশ্বের প্রাণী সুরক্ষায় সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড ফান্ড (ডব্লিউ ডব্লিউ এফ) তাদের এক গবেষণায় জানিয়েছে যদি কার্যকর কোন উদ্যোগ না নেয়া হয় তাহলে ২০৭০ সাল নাগাদ সমুদ্র পানির উচ্চতা এক ফুট বেড়ে যাবে। এর ফলে সুন্দরবনে বাঘের আবাসস্থল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে।
দেশে দেশে বাঘের সংখ্যা:
আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস উদযাপন কমিটির হিসাব মতে বর্তমানে বাংলাদেশে ৪৪০ টি, ভুটানে ৭৫টি, কম্বোডিয়ায় ২০টি, চীনে ৪৫টি, ভারতে ১ হাজার ৭০৬ টি, ইন্দোনেশিয়ায় ৩২৫ টি, লাওসে ১৭ টি, মালয়েশিয়ায় ৫০০ টি, মিয়ানমারে ৮৫ টি, নেপালে ১৫৫ টি, রাশিয়ায় ৩৬০ টি, থাইল্যান্ডে ২০০ টি ও ভিয়েতনামে ২০ টি বাঘ আছে। যার মোট সংখ্যা ৩ হাজার ৯৪৮ টি।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ