সুন্দরবনের শেলা নদীতে মঙ্গলবার সকালে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ সাড়ে তিন লাখ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে ডুবে যায়। এতে সুন্দরবনে ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদগণ।
ডুবে যাওয়া ট্যাংকারটির প্রায় সব তেল বেরিয়ে সুন্দরবনের শেলা নদীর বিস্তির্ণ এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, যা জোয়ার-ভাটার মাধ্যমে সুন্দরবনের ব্যাপক অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের অফিসারগণ ।
তারা বলছেন, পানিতে ভেসে থাকা এই জ্বালানি তেল অপসারণ বা নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা বন বিভাগের না থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের সূত্রমতে, “তেল দূষণের কারণে মৃগমারী-নন্দবালা-আন্ধারমানিক ডলফিন অভয়াশ্রম মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে।“
বিশ্বের বৃহত ইরাবতী ডলফিনের বিচরণ ক্ষেত্র সুন্দরবন। শেলা নদী ও পশুর নদীর সঙ্গম স্থল এই জলজ প্রাণির অভয়াশ্রম হিসেবে চিহ্নিত।
প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য গবেষকদের মতে, পানিতে ছড়িয়ে পড়া তেল পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে, যে কারণে বড় ধরনের সমস্যায় পড়বে ডলফিন। অন্য জলজ প্রাণিও অক্সিজেন সঙ্কটে ভুগবে। শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবনের গাছপালারও মারাত্মক ক্ষতি হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
তার আশঙ্কার কথা জানিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিওলিনের অধ্যাপক দিলীপ কুমার দত্ত বলেন, “বিপুল পরিমাণ তেল পানিতে ভেসে থাকায় উপকূলীয় প্রাণি-বৈচিত্র্যের ওপর এর প্রভাব হবে দীর্ঘমেয়াদি ও মারাত্মক। শ্বাসমূলীয় বনের গাছপালা শ্বাসমূল দিয়ে অক্সিজেন নেয়। এই তেলের আস্তর গাছের শ্বাস-প্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত করবে। ফলে গাছ মারা যাবে।”
সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান, ট্যাংকারটির সামনের অংশ ডুবে গেছে এবং পেছনের অংশ পানির ওপর রয়েছে।
ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ গোপালগঞ্জের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে যাচ্ছিল।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের শেলা নদীতে নোঙর করা অবস্থায় মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে ‘টোটাল’ নামে একটি কার্গোর ধাক্কায় জাহাজটি ডুবে যায় বলে জানিয়েছে মংলা কোস্ট গার্ড। তিনি বলেন, কার্গোর ধাক্কায় সাউদার্ন স্টারের একপাশ ফেটে যায় এবং তা থেকে আস্তে আস্তে তেল ছড়িয়ে পড়ছে।
বিকাল নাগাদ সুন্দরবনের জয়মনি, বেলতলা, নন্দবালা, আন্ধারমানিক, মৃগমারী প্রভৃতি এলাকায় নদীতে তেলের আস্তর দেখা গেছে।
সূত্রমতে, বিপর্যয় ঠেকাতে নৌবাহিনীর জাহাজ বিএনএস শহীদ রুহুল আমিনকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর হাবিবুর রহমান খান। নৌবাহিনীর এই জাহাজে ভাসমান তেলের আস্তরকে ভারী ও একত্রিত করার মতো রাসায়নিক দ্রব্য রয়েছে বলে তিনি জানান।
দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের নৌবাণিজ্য যোগাযোগ পথ ও ভারত-বাংলাদেশ নৌ প্রটোকল রুট হিসেবে ব্যবহৃত ঘষিয়াখালী চ্যানেল ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বিকল্প পথ ব্যবহার করছে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিউটিএ।
পরিবেশ বিপর্যয়ের ঝুঁকির কারণে বিগত বছরগুলিতে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌপথ বন্ধের দাবি জানানো এবং এ নিয়ে পত্রিকায় লেখা হয়েছে হয়েছে বিস্তর। তবে সে সকল সাবধান বাণীকে গুরুত্ব দেয় নি কেউ।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ