খুলনায় ইজিবাইক চলাচল কে আইনী কাঠামোয় আনা জরুরী

নিয়ন্ত্রকের অভাবে সেচ্ছাচারী চালকরা, সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব:

খুলনা মহানগরী এখন ইজিবাইক চালকদের রাম রাজত্বে পরিণত হয়েছে। নগরীতে চলাচলকারী কোন ইজিবাইকেরই বৈধ লাইসেন্স নেই, কোন চালকেরই নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স, নেই তাদের ন্যুনতম ট্রাফিক আইন জ্ঞানও। ফলে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এ গণপরিবহনটি এখন চরম বে-পরওয়া ও সেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছে, এ অভিযোগ নগরবাসির।

মোঃ ফরিদ একজন ইজিবাইক চালক। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন তার গাড়ির কোন লাইসেন্স নেই। তার ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কি-না জানতে চাইল তিনি বলেন,না নেই। তিনি ট্রাফিক আইন জানেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ না, জানি না।’ একই উত্তর দেন ইজিবাইক চালক আমজাদ ও আব্দুর রহীম। এদের দাবি কোন ইজিবাইক চালকেরই গাড়ির লাইসেন্স ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই এবং তারা কেউই ট্রাফিক আইন জানে না। এ সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও জ্ঞান ছাড়া তারা কি ভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, এসব লাগে না। কেন লাগে না জানতে চাইলে তারা বলেন, গাড়ির লাইসেন্স কেউ দেয় না, আর ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও কেউ কিছু বলে না, তাই এসব লাগে না।

ইজিবাইক’র লাইসেন্স কে দেবে, বিআরটিএ না সিটি কর্পোরেশন এ বিতর্ক চলমান অবস্থায় ২০১১ সালে খুলনা সিটি কর্পোরেশন দুই হাজার ইজিবাইকের লাইসেন্স প্রদান করে। এ সময় দুই হাজার লাইসেন্স ওয়ালা ইজিবাইকের বিপরীতে নগরীতে চালু হয় পাঁচ হাজারের অধিক ইজিবাইক। এর এক বছরের মাথায় মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে সেগুলির নবায়ন না করা এবং নতুন লাইসেন্স না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ফলে এক বছর পর নগরীতে চলাচলকারী সকল ইজিবাইকই হয়ে পড়ে অবৈধ।

ইজিবাইক’র লাইসেন্স প্রদান বিতর্কের মিমাংসা না হলেও থেমে নেই নতুন নতুন ইজিবাইকের আগমন। কোন সংস্থার নিয়ন্ত্রন না থাকায় নগরীর রাস্তার ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়ে নগরীতে ইজিবাইকের সংখ্যা এখন ১২ হাজারের অধিক বলে জানায় একটি সূত্র।

কোন প্রকার লাইসেন্স না থাকায় প্রতি বছর ইজিবাইক মালিকদের নিকট থেকে প্রাপ্ত কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার অর্থাৎ জনগণ। আর কোন সংস্থার নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বে-পরওয়া ও সেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছে ইজিবাইক চালকগণ।

অন্যদিকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের (কেসিসি, পুলিশ) পক্ষথেকে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে ইজিবাইক আটক করে জরিমানা আদায় করা হলেও তাদের লাইসেন্স ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান বা ট্রাফিক আইন বিষয়ে কোন প্রশিক্ষণ প্রদানে এগিয়ে আসে নি কোন সংস্থা, অভিযোগ চালকদের।

খুলনা মহানগরীতে চলাচলকারী ইজিবাইকের লাইসেন্স প্রদানে খুলনা সিটি কর্পোরেশনেরও কোন সিদ্ধান্ত নেই, কারণ এ বিষয়ে নির্দিষ্টমন্ত্রনালয়ের নির্দেশ ছাড়া কিছু করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

ইজিবাইক চলাচলে আইন-কানুন ও তাদের নিয়ন্ত্রনের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী পুলিশ কমিশনার, ট্রাফিক, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ, মোঃ কলিমুল্লাবলেন, বিধিবদ্ধ আইনের প্রয়োগ করা পুলিশের কাজ। পুলিশ স্ব-উদ্যোগে আইন প্রণয়োনের অধিকারী নয়। তিনি বলেন, ইজিবাইকের লাইসেন্স প্রদানে কর্তৃপক্ষসিদ্ধান্ত না নিলে পুলিশের বিশেষ কিছু করার নেই। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত না হলে যানজট মারাত্মক আকার ধারন করবে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে।

নগরবাসির দাবি, অবশ্যই নগরীর এ গুরুত্বপূর্ণ গণপরিবহন কে আইন-কানুনের কাঠামোয় আনতে হবে অন্যথায় সেচ্ছাচারিতার দায়ে তাদের উচ্ছেদ অনিবার্য হয়ে উঠবে যা আরও নতুন শঙ্কটেরই জন্ম দেবে।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *