ধান উৎপাদনে আবহাওয়ার প্রভাব ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাঃ পর্ব-১

দুর্যোগ পরিচিতিঃ

বাংলাদেশের কৃষকেরা বিভিন্ন সময়ে ও এলাকাভেদে এক বা একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হন। এসবের মধ্যে বন্যা, অতিবৃষ্টি, খরা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস, কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টি, লবনাক্ততা, ভূমিক্ষয়, পলি জমা, টর্নেডো, অতিরিক্ত ক্ষতিকারক পোকামাকড়, রোগবালাই, অতিরিক্ত তাপমাত্রা ইত্যাদি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাঃ

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা হচ্ছে দুর্যোগ মোকাবেলা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যপ্রণালী প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সম্পূর্ণ পরিত্রান পাওয়া সম্ভব নয়। তবে দুর্যোগ-পূর্ব প্রস্তুতি, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী কার্যক্রমকে সু-পরিকল্পিত ও সমন্বিত করার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বহুলাংশে কমিয়ে আনা যেতে পারে। আর এর জন্য দরকার সম্মিলিত কর্মপ্রয়াস, সমন্বিত কার্যক্রম প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন। এখানে কয়েকটি দুর্যোগ মোকাবিলা সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করা হলো।

বন্যাঃ

ধান উৎপাদনে বন্যা মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজন বন্যা পূর্ববর্তী সতর্কতা, বন্যা কালীন কিছু কাজ ও বন্যা পরবর্তী যথাযথ কৃষি পুনর্বাসন ; যেমন- যথাযথ ভাবে ফসল সংরক্ষণ: ক্ষেতের আইলে বেড়া বা ধৈঞ্চা লাগানো, ফসল সংগ্রহ ও কৃষি উপকরণ সংরক্ষণে যত্নবান হতে হবে।

১. আগাম বোরো ও আউস ধান চাষ: আগাম বা বন্যা প্রবণ এলাকায় স্থানীয় ও উফশী জাতের আগাম পাকা ও স্বল্প মেয়াদের বোরো চাষাবাদ   ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা কমিয়ে আনতে পারে।

২. শিষ পাকা পর্যায়ে ব্রি ধান-২৯ ও ব্রি ধান-৩৬ এর জলমগ্নতা সহ্য করার ক্ষমতা আছে।

৩. বন্যা পরবর্তীতে আমনে অধিক বয়সের চারা ঘন করে লাগানো যেতে পারে।

খরাঃ

ফসল উৎপাদন বিবেচনায় খরিপ, রবি এবং প্রাক-খরিপ মৌসুমে খরা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে:

মাটির গভীরে বীজ বপন, বৃষ্টির সাথে সমন্বয় রেখে বীজ বপন, পেূর্বে ভিজানো বীজ বপন, মাটিতে রস থাকতে বিনা চাষে/ ন্যূনতম চাষে বীজ বপন, জৈব সার প্রয়োগ ও মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া, মিতব্যয়ী পদ্ধতিতে পানি সেচ, মাটির আস্তর ও কৈশিক নালি ভেঙ্গে দেওয়া, সম্পূরক সেচ, আউশ মৌসুমে বিআর-২৪, বিআর-২৬, বিআর-২৭, ব্রিধান-৪২, ব্রিধান-৪৩, ব্রিধান-৪৮, ব্রিধান-৫৫ আবাদ করা যেতে পারে।

ঘূণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসঃ

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ক্ষতির প্রকৃতি, এলাকার মাটি বা ভূ-প্রকৃতি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার আলোকে জলোচ্ছ্বাস পরবর্তী ফসল চাষের বিবরণঃ

আউশ মৌসুমে করণীয়ঃ উফশী রোপাআউশ যেমন: বিআর-৩, বিআর-২০, বিআর-২৬, ব্রি ধান-২৭, ব্রি ধান-৪৮ ও ব্রি ধান-৫৫’র এক মাস বয়সী চারা বৈশাখ মাসের মধ্যে রোপন করতে হবে।

আমন মৌসুমে করণীয়ঃ নাবী-আমন জাত যেমন, বিআর-২২, বিআর-২৩ ও ব্রি ধান-৪৬’র এক মাসের অধিক বয়সী চারা ভাদ্র আশ্বিন মাসের মধ্যে রোপন করতে হবে।

কাল বৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে করণীয়ঃ

কালবৈশাখী, ঝড়/ শিলাবৃষ্টিতে বোরোধান ক্ষতিগ্রস্ত হলে দ্রুত আউশধান বা সবুজ সার প্রয়োগ করার পর রোপা আমন ধান চাষ করতে হবে। এতে অধিক ফসল নিশ্চিত করে বোরোর ক্ষয়ক্ষতি আংশিক পূরণ করা যেতে পারে।

এ অবস্থায় স্বল্প জীবন কালীন উফশী ধানের জাত আবাদ কার যেতে পারে।

মন্তব্যঃ

দুর্যোগ ও দুর্যোগ ব্যবস্থপনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *