মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল সংলগ্ন খালের অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদ অভিযান শুরু

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান নৌ-চলাচল পথ মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল সংলগ্ন নদী-খালের অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদের কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার উড়াবুনিয়া খালের উপর নির্মিত অবৈধ বাঁধ কেটে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন। প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশে জরুরী ভিত্তিতে এ অভিযান শুরু হয়েছে।

 তালুকদার আব্দুল খালেক এ সময় বলেন, যতদিন পর্যন্ত সকল খালের অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদ না হবে ততদিন পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চলবে। দখলদার সে যে-ই হোক কাউকেই রেহাই দেওয়া হবে না। শেষ বাঁধটি উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান বন্ধ হবে না।

 উল্লেখ্য, সমগ্র দেশের সাথে মংলা বন্দর ও খুলনার নৌ-যোগাযোগের প্রধান রুট ঘষিয়াখালি চ্যানেল নব্যতা হারিয়ে বন্ধ হয়ে গেলে জরুরী ভিত্তিতে সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে রুটটি চালু করা হয়। এ সময় নতুন পথ হিসেবে বলেশ্বর নদী থেকে সুন্দরবনের সুপতি হয়ে বেতমোড়-আন্ধারমানিক-শ্যালা নদী দিয়ে জাহাজ চলাচল করতে থাকে, যা সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীব-বৈচ্যিত্রের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেয়। এ হুমকি সত্যে পরিণত হয় গত ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী জাহাজ ডুবে সুন্দরবনে সাড়ে তিন লাখ লিটার ফার্নেশ অয়েল ছড়িয়ে পড়লে। ফলে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে ঘষিয়াখালী চ্যানেল পুঃনরায় চালু করাই একমাত্র বিকল্প যার নির্দেশ প্রধান মন্ত্রী দিয়েছেন।

 এলাকাবাসি সহ জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, ঘষিয়াখালী নৌ-চ্যানেলটি নব্যতা হারিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ চ্যানেল সংলগ্ন নদী-খালগুলি অবৈধ দখলদাররা দখল করে নেয় এবং খালের মুখগুলি বন্ধ করে দিয়ে সেগুলিকে ঘেরে পরিণত করে এবং চিংড়ি চাষ করতে থাকে। এর ফলে ঘষিয়াখালী চ্যানেলদিয়ে আসা পলিমাটি এর পাশ্ববর্তী নদী-খালে ঢুকতে না পেরে চ্যানেলের বুকেই জমতে থাকে এবং ২০০৯-১০ সালের দিকে চ্যাণেলটি সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে নৌ-চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে।

 

খালগুলিতে অবৈধ বাঁধ নির্মাণকারীদের বক্তব্য, খালগুলি তারা জেলা প্রশাসনের নিকট থেকে লিজ নিয়েই চিংড়ি চাষ শুরু করে। খালগুলির উপর তারা বাঁধ নির্মান করলেও প্রশাসন তাদের কখনও বাধা প্রদান করে নি। বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, গত দুই বছর যাবৎ সকল খাল লীজ প্রদান বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে বর্তমানে যারা খালগুলি দখল করে আছে তারা সকলেই অবৈধ দখলদার।

 উচ্ছেদ অভিযান সম্পর্কে বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, ঘষিয়াখালী চ্যানেল সংলগ্ন ৩২টি খালে অবৈধ দখলদাররা ১৪৪টি বাঁধ এবং ঘরবাড়িও নির্মান করেছে। এর মধ্যে ২৩টি খাল ঘষিয়াখালী চ্যানেল এবং নয়টি খাল পশুর নদীর সাথে সংযুক্ত। সূত্রটি জানায়, উচ্ছেদ অভিযানে ৫৬০ জন শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে যারা বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ উচ্ছেদের কাজ করছে। উল্লিখিত বাঁধগুলি অপসারণে সময় নির্ধারন করা হয়েছে ৭দিন। তবে এ সময়ের মধ্যে উচ্ছেদ সম্পন্ন না হলে অতিরিক্ত সময়ে কাজ চলবে। প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশ, যত প্রভাবশালীই হোক না কেন কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

 এ বিষয়ে জানতে চাইলে উড়াবুনিয়ার বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার, রমজান আলী সহ রামপালের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলেন, রাজনীতিক ও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় যারা খালগুলি দখল করেছে খালগুলি এখন তাদের ব্যক্তিগত ঘেরে পরিণত হয়েছে। এর ফলে খালগুলি নদীর সাথে সংযোগ হারানোর ফলে নদী থেকে শত শত প্রজাতীর মাছ খালে ঢুকতে না পেরে সমগ্রএলাকা এখন মৎস্যশূণ্য হয়ে গেছে এবং জনগণ খালগুলিতে তাদের অধিকার হারিয়েছে। অন্যদিকে নদীর পলিবাহিত পানি খালে ঢুকতে না পারায় একদিকে ভুমিগঠন বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে অন্যদিকে পলি নদীবক্ষ্যে জমে জমে নদী ভরাট হয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দাবি খালগুলি দ্রুত অবৈধ দখল মুক্ত হলে প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ নিশ্চিৎ হবে এবং সমগ্র এলাকা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে মুক্ত হবে।

 খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই উচ্ছেদ অভিযানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা, মোঃ আব্দুস সামাদ, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা, অশোক কুমার বিশ্বাস, খুলনা পরিবেশ অদিদপ্তরের পরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হেসেন, জেলা প্রশাসক, বাগেরহাট, মোঃ শুকুর আলী, এডিসি, বাগেরহাট, মাহামুদুর রহমান প্রমূখ।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *